ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লৌহজংয়ে খাল ভরাট

জলাবদ্ধতার শিকার ছয় হাজার মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জলাবদ্ধতার শিকার ছয় হাজার মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কোন বর্ষা কিংবা বন্যা নয়, বৃষ্টি হলেই বাড়ির আঙ্গিনা, কাঠের পাটাতন ঘরের নিচ ও বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা পর্যন্ত তলিয়ে যায়। কাদা পানিতে একাকার হয়ে যায় সবকিছু। শীতকাল ছাড়া এভাবে বছরের ৭/৮ মাস এই সমস্যায় ভুগছে লৌহজং উপজেলার প্রায় ৬ হাজার মানুষ। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাও নিচ্ছে না কোন উদ্যোগ। আর এরকম কৃত্রিম জলাবদ্ধতার শিকার লৌহজং উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ঝাউটিয়া এলাকার জেলেপাড়া ও এর ঠিক লাগোয়া কনকসার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কনকসার বাজার সংলগ্ন বেদেপল্লী ও পাটনিবাড়ি এলাকা। মাওয়া- লৌহজং-বালিগাঁও জেলা সড়কের পাশে বাড়িঘর তুলেও এর সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। এ নিয়ে তাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন সময় তারা আন্দোলন করতেও দ্বিধা করবে না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীদের অনেকেই। গত নব্বই দশকে লৌহজং উপজেলার ব্যাপক এলাকা পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়। সেইসঙ্গে এলাকার ভূপ্রকৃতিও পাল্টে যায়। খালবিল বালুমাটিতে ভরে যায়। তখন কনকসার ও তৎকালীন ঝাউটিয়া ইউনিয়ন বিভাজনকারী লৌহজং-শ্রীনগর খালটির কোথাও পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়, আবার কোথাও ভরাট হয়ে যায়। এরই অংশ হিসেবে কনকসার বাজার হতে ব্রাহ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত এই খালটিও বালুমাটিতে ভরাট হয়। গত ৬/৭ বছর ধরে এখানে দুই ইউনিয়নের বেদে, জেলে, নদীভাঙ্গা মানুষ ও গৃহস্থ সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে আসছে। এতদিন এলাকাবাসী নির্বিঘেœ বসবাস করে এলেও গত বছর থেকে বৃষ্টির পানিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রায় ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাটি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ। সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন উক্ত এলাকায় কোন বৃষ্টিপাত না থাকলেও অনেক বাড়ির আঙ্গিনা কাদাপানিতে একাকার হয়ে আছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টির পানি জমে থাকায় শ্যাওলা পড়ে উঠান পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে। টয়লেটে যেতেও বৃষ্টির নোংরা পানি পেরিয়ে যেতে হয় মানুষজনকে। ঘর থেকে সহসা বের হতে না পারায় শিশুদের ঘরের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় কাটাতে হচ্ছে। চর্মরোগে ভুগছে কেউ কেউ। এই এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করে একটু দূরে পদ্মার শাখা নদীতে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি বের করে দেয়াই একমাত্র ও প্রধান উপায় বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। জমে থাকা নোংরা পানিতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে বলে জানান নারু নামে বেদেপল্লীর এক তরুণ সর্দার। বেদে মন্টু খান বলেন, ‘পানির দুর্গন্ধে টেকা দায়। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না।’ জেলেপাড়ার বীরেন মালো জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্যোগ নিলে আমরাও তাদের সঙ্গে টাকাপয়সা দিয়ে শরীক হব। এভাবে আর দিনের পর দিন থাকা যায় না। গৃহবধূ বকুল রানী বলেন, আমাদের কি এভাবেই সারাজীবন কাদাপানিতে বসবাস করতে হবে? আমরা গরিব বলে কি কেউ আমাদের দেখবে না? ভ্যানচালক পরশ সর্দার বলেন, বৃষ্টি হলেই আমাদের কষ্ট-যন্ত্রণার শেষ নেই। অপর গৃহবধূ লক্ষ্মীরাণী বলেন, কাদাপানি মাড়িয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে হয় - এটা খুবই যন্ত্রণার। জেলেপাড়ার বাসিন্দা ও স্টেশনারি ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমারের ভাষ্য, জলাবদ্ধতার কারণে দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রবে থাকা মুস্কিল। সত্যি এভাবে এখানে কোন ভদ্রলোক বসবাস করতে পারে না। অনতিবিলম্বে এই এলাকায় ড্রেন ব্যবস্থা নির্মাণ করা প্রয়োজন।এ বিষয়ে কথা হয় কনকসার ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সীমিত বাজেটে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে তিনি এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কথা স্বীকার করেন। কনকসার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ বেপারি বলেন, এর আগে শ্যালো মেশিন দিয়ে উক্ত এলাকার পানি নিষ্কাশন করেছি। এমনকি প্লাস্টিকের পাইপ বসিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুদিন পর সেটা বালুমাটিতে ভরে যায়। ফলে আবার এ এলাকার মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। লৌহজং-তেউটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, উপজেলা কিংবা এডিবির বাজেট ছাড়া এত বড় কাজের নির্মাণ অসম্ভব। এ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য শেখ মোঃ মনির হোসেন বলেন, দিনের পর দিন মানুষজন যেভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তা সহ্য করা যায় না। এলাকায় গেলেই আমাকে সারাক্ষণ এ জলাবদ্ধতা নিয়ে লোকজনদের তোপের মুখে পড়তে হয়।
×