ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা হত্যার ভিডিও দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা  হত্যার ভিডিও দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যার লোমহর্ষক ভিডিওচিত্র দেখিয়ে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে নেমেছে শিক্ষকরা। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সাহায্যের নামে জেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতির নির্দেশে শিক্ষার্থীদের কাছে এই চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে মাদ্রাসায় কোমলমতি শিশুদের সামনে রোহিঙ্গাদের হত্যার লোমহর্ষক ভিডিও চিত্র দেখে অনেকে আঁতকে উঠছেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। দুর্গাপুরের শ্রীধরপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল হান্নান জানান, জেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতির নির্দেশে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবরের মধ্যে ওই টাকা জেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির কাছে জমা দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়। ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা হারে চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্গাপুর উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। সে অনুযায়ী তার মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা হত্যার ভিডিও চিত্র শিক্ষার্থীদের দেখানোর কথা অস্বীকার করেন তিনি। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানায়, কয়েকদিন ধরে উপজেলার শ্রীধরপুর দাখিল মাদ্রাসার ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে শিক্ষকরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রোহিঙ্গা হত্যার লোমহর্ষক ভিডিও চিত্র দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া শিশুদের কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ভিডিও চিত্র দেখানো হচ্ছে। এরপর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চককৃষ্ণপুর আলিম মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, শ্রীধরপুর দাখিল মাদ্রাসায় ওই ভিডিও চিত্র দেখে ভয়ে ক্লাসের মধ্যে চিৎকার দিয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। অনেকে রাতে ঘুমের মধ্যেই আঁতকে উঠছে। এসনাহার নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা লালু ও নাহিদুলের বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালাম মোবাইল ফোনে তাদের সন্তানদের রোহিঙ্গা শিশুদের নির্যাতনের দৃশ্য দেখান। এ কারণে রাতে তাদের সন্তানরা ভয়ে ঘুমাতে পারছে না। তবে দুর্গাপুর উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চককৃষ্ণপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মকছেদ আলী জানান, জেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের নির্দেশে তিনি উপজেলার সকল মাদ্রাসা প্রধানদের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য চাঁদা আদায়ের জন্য বলেছেন। তবে তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করে বা ভিডিও চিত্র দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতে বলেননি। তিনি বলেন, দুর্গাপুর উপজেলায় ১৭টি মাদ্রাসায় প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতার জন্যই মূলত: ১০ টাকা করে নেয়ার জন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষদের বলা হয়েছিল। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, এ ধরনের কোন নির্দেশনা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ ধরনের কোন নির্দেশনা আসেনি।
×