ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বন্ধুসহ স্কুলছাত্রীকে মারধর, উলঙ্গ করে ভিডিও ॥ গণধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

তিন বন্ধুসহ স্কুলছাত্রীকে মারধর, উলঙ্গ করে ভিডিও ॥ গণধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রতিবেশী তিন ভাইয়ের সঙ্গে নৌকায় বিলে ঘুরতে গিয়েছিল পঞ্চম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী (১৪)। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় কতিপয় মাদকসেবী ওই চারজনকে বিলের মধ্যে একটি পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে বেদম মারধর করে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেছে। পরবর্তীতে প্রথম দফায় তিন মাদকসেবী স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ঘুরতে যাওয়া তিন বন্ধুর মধ্যে একজনকে দিয়ে জোরপূর্বক ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করিয়ে পুনরায় তা ভিডিও ধারণ করেছে। ওই ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মাদকসেবীরা স্কুলছাত্র তিনবন্ধুর পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা উত্তোলন করেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও থানা পুলিশের হাত থেকে শেষ রক্ষা পায়নি। ভিডিও চিত্রটি বিভিন্ন মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পরার পর খবর পেয়ে থানা পুলিশ বুধবার সকালে ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করেছে। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া কান্দিরপাড় গ্রামের। সূত্রমতে, ওই গ্রামের এক প্রবাসীর কন্যা ও কান্দিরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রী (১৪) তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই সম্পর্ক নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুলছাত্র লিমন সরদার, নয়ন ঘরামী ও ফেরদাউস মোল্লার সঙ্গে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে নৌকাযোগে রাজিহার চৌদ্দমেদা বিলে ঘুরতে যায়। বিষয়টি দেখে চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মৃত মজিদ তালুকদারের পুত্র চিহ্নিত মাদকসেবী মুন্না তালুকদার, তার সহযোগী মাইনউদ্দিন সরদার, মিজানুর রহমান সরদার, আকবর আলী সরদার ও মিলন হাওলাদার অন্য একটি নৌকা নিয়ে বিলে গিয়ে স্কুলছাত্রীসহ তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া তিন বন্ধুকে জোরপূর্বক বিলের মধ্যে নির্জন সেলিমের ভিটায় নিয়ে যায়। স্কুলছাত্র লিমন সরদার জানায়, স্কুলছাত্রীসহ তাদের চারজনকে সেলিমের ভিটায় নিয়ে মুন্না ও তার সহযোগীরা বেধম মারধর করে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে একজনের লজ্জাস্থান অন্যজনকে দিয়ে ধরিয়ে মিলনের মোবাইল ফোনে মুন্না তালুকদার তা ভিডিও ধারণ করে। স্কুলছাত্রী জানায়, পরবর্তীতে মুন্না ও তার তিনসহযোগী জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ঘুরতে যাওয়া তিন বন্ধুর মধ্যে একজনকে দিয়ে তাকে (ছাত্রী) ধর্ষণ করিয়ে পুনরায় তা ভিডিও ধারণ করে। ওই স্কুলছাত্রী আরও জানায়, তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ওই চাচাতো ভাই ধর্ষণ করতে অস্বীকার করায় মুন্না ও তার সহযোগীরা ফের তাদের মারধর করে। স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া নয়ন ঘরামী জানান, মুন্না ও তার সহযোগীরা ওই ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদকসেবীদের পক্ষাবলম্বন করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য কতিপয় জনপ্রতিনিধিসহ জনৈক নুর মোহাম্মদ তালুকদার ওই স্কুলছাত্রী ও তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া তিন বন্ধুর পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে তিনপর্বের ওই আপত্তিকর ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ভাইরাল হওয়ায় পুরো উপজেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হলে লোকলজ্জায় স্কুলছাত্রীসহ ওই তিন বন্ধু আত্মগোপন করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ বুধবার সকালে স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করার পর অভিযুক্ত মুন্না তালুকদারসহ তার সহযোগীরা নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছে। হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রী বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে থানায় মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্ত মুন্না তালুকদারসহ অন্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে বলেও তিনি (ওসি) উল্লেখ করেন।
×