ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গাপূজা পরিদর্শন

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

বিডিনিউজ ॥ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বুধবার শারদীয় দুর্গাপূজা পরিদর্শনে গিয়ে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে এক অনুষ্ঠানে একথা বলার পাশাপাশি শরণার্থী রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে পৌনে ৫ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা রয়েছে আরও ৪ লাখের বেশি। এবার রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর কাজাখস্তানে ওআইসির এক সম্মেলনে এই বিষয়টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রোহিঙ্গারা যাতে নিজের দেশে ফিরে গিয়ে থাকতে পারে, সেজন্য ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা জাতিসংঘেও বিষয়টি তোলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি যাচাই সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্যে তাতে আরও জোর দেয়ার তাগিদ আসে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। পূজার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে বিশ্বের সকল দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে হবে। মিয়ানমার থেকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অনেক হিন্দুরও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তাদের প্রতিও আমাদের সহমর্মিতা থাকতে হবে। তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়াতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। বন্যার কারণে হাওড়াঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের আনন্দের সঙ্গে দুর্গোৎসব উদযাপন করতে না পারার কথাও আসে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে। কেউ যাতে উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে আপনারা দুর্গোৎসবের আনন্দকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হবেন। ধর্মে ধর্মে বিভেদকে দূরে রাখার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, আজ বিশ্বজুড়ে হিংসা, বিদ্বেষ আর ধ্বংস আমাদের সামনে এক ভয়াবহ অশনি সঙ্কেত হয়ে দেখা দিয়েছে। এ হত্যা আর ধ্বংস প্রতিরোধে আমাদের ধর্মের অহিংস ও শান্তির অমিয় বাণী বিশ্ব জনতার কাছে তুলে ধরতে হবে। রাষ্ট্রপতি রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ। স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশনের আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গাপূজা পরিদর্শন করেন। মন্দিরে পৌঁছালে নারী ও শিশুরা রাষ্ট্রপতিকে ফুল ছিটিয়ে অভ্যর্থনা জানান। সেখানে অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ শারদীয় দুর্গোৎসবের সার্বজনীনতার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ঠেকাতে নিজের সরাসরি অংশ নেয়ার কথাও বলেন। দুর্গাপূজার আয়োজন ধর্মান্ধতা ও জঙ্গীবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জাতীয় ঐক্য ও সংহতিকে আরও দৃঢ় করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু।
×