ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা পরিষদে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন ৯ দেশের কূটনীতিকরা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নিরাপত্তা পরিষদে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন ৯ দেশের কূটনীতিকরা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দেশগুলোর অকুণ্ঠ সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার ঢাকায় অবস্থিত নিরাপত্তা পরিষদের নয়টি দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে এক বৈঠকে এ সমর্থন চাওয়া হয়েছে। এসব দেশের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে আজ বহস্পৃতিবার নিউইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের যে বৈঠক বসছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিও বক্তব্য রাখবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেখানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরবেন। ওই বৈঠকের আগে বুধবার ঢাকায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য না হলেও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সেখানে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরবেন। মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, মূলত তার ভিত্তিতেই নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে। আজ অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক থেকে বাংলাদেশ কী প্রত্যাশা করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমরা চাইছি এমন একটি ব্যবস্থা করা হোক, যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও নির্বিঘেœ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঢাকায় দূতাবাস আছে এমন নয়টি দেশের প্রতিনিধিরা পদ্মার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, তারা সবাই রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আমাদের প্রতি সহানূভূতিশীল। বাংলাদেশ এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। বৈঠকে চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মনোভাব কেমন ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদ আলী বলেন, তারা সকলেই আমাদের পাশে রয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। এজন্য আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। নিরাপত্তা পরিষদে নির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া পাঁচ দফা প্রস্তাবটি জাতিসংঘে আমাদের স্থায়ী প্রতিনিধি তুলে ধরবেন বলে আশা করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকায় অবস্থিত নিরাপত্তা পরিষদের নয়টি মিশনের কূটনীতিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তার মধ্যে রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, মিশর, ইতালি, জাপান ও সুইডেন। বাকি সদস্য দেশগুলোর ঢাকায় মিশন না থাকায় তাদের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে এর আগেও তিন দফায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিদেশী কূটনীতিক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক সামনে রেখে বুধবার এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আজকের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। কেননা এই বৈঠকের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সূত্র জানায়, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অন্যান্য দেশগুলোর পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার ইতিবাচক ভূূমিকা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। এই প্রভাবশালী দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক থাকার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গেও তাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে এই দেশ দুটির বিশাল অংকের বিনিয়োগ রয়েছে। সে কারণে দেশ দুটি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিতে পারছে না। তবে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে দেশ দুটি কোনভাবেই যেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভেটো না দেয়, সে জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী নতুন করে অভিযান শুরুর পর গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। জাতিসংঘ রাখাইনের ওই সেনা অভিযানকে চিহ্নিত করেছে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে। গত কয়েক দশক ধরে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ বলে আসছে, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়া হলেও মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো তুলে ধরে এর নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরেন। মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিক এবারের মানতে নারাজ মিয়ানমারে সরকার এদের ফেরত নিতে অনীহা দেখিয়ে আসছিল। তবে এবারের সহিংসতায় সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সু চি যাচাই সাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এই রোহিঙ্গাদের নাগরিক পরিচয় কীভাবে যাচাই হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সুচি বলেছেন, ১৯৯২ সালে দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী যে নীতিতে যাচাই হয়েছিল, এবারও তার ভিত্তিতেই হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বেই পরিচয় যাচাইয়ের কাজটি করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের মিনিস্টার অব দি অফিস ও স্টেট কাউন্সেলর কিও তিন্ত সোয়ের আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর এর আগে দুই দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিল নিরাপত্তা পরিষদ। গত সপ্তাহে রাখাইন পরিস্থিতির নিন্দা এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। কূটনীতিকরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়ার বিষয়ে ভাববে নিরাপত্তা পরিষদ। তবে মিয়ানমারের মিত্র চীন ও রাশিয়া এ বিষয়ে জোরালো কোন প্রস্তাব গ্রহণের বিরোধিতা করতে পারে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার হলেও তাদের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে আসছে চীন ও রাশিয়া। নিরাপত্তা পরিষদে কোন প্রস্তাব পাস করতে ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত নয় দেশের সমর্থনের পাশাপাশি পাঁচ স্থায়ী সদস্য চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অনাপত্তি দরকার হয়। বর্তমানে মিশর, ইতালি, জাপান, সুইডেন, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া, কাজাখাস্তান, সেনেগাল, ইউক্রেইন ও উরুগুয়ে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য।
×