ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উঠে এসেছে ৯৯তম অবস্থানে ;###;সিপিডির ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদন

বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচক ॥ দেশ ৭ ধাপ এগিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচক ॥ দেশ ৭ ধাপ এগিয়ে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ৭ দেশকে পেছনে ফেলে এবার ৯৯তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন ঘটায় এই র্যাঙ্ককিং অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্য গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স ২০১৭-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনের ওপর পর্যালোচনা তুলে ধরতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন সংস্থাটির গবেষকরা। ১২টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক তৈরি করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ)। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, মুদ্রাবাজারের উন্নয়ন, পণ্য ও শ্রমবাজারের দক্ষতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বাজারের আকার, ব্যবসায় উন্নতি ও উদ্ভাবন প্রভৃতি। এই বিষয়গুলোর ওপর গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮৫ জন ব্যবসায়ীর মতামতের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে চালু হওয়া এই সূচকে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে ২০০১ সাল থেকে। প্রতিবেদন মতে, ব্যবসা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ৭ নম্বরের মধ্যে এবার ৩.৯০ নম্বর নিয়ে ১৩৭টি দেশের মধ্যে ৯৯তম অবস্থানে উঠে আসে বাংলদেশ। ২০১৫ সালে ৩.৮০ নম্বর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৬তম। বিগত বছরের মতো এবারও এই সূচকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয় সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস চতুর্থ এবং জার্মানি পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে ভাল অবস্থানে থাকলেও এবার একধাপ পিছিয়েছে দেশটি। ভারতের অবস্থান ৪০তম। শ্রীলঙ্কা ৭১তম থেকে পিছিয়ে ৮৫তম অবস্থানে এসেছে। অন্যদিকে, ভুটান ৯৭তম থেকে ৮২তম, নেপাল ৯৮তম থেকে ৮৮তম এবং পাকিস্তান ১২২তম থেকে ১১৫তম অবস্থানে এসেছে। এবার মালয়েশিয়ার অবস্থান ২৩তম। গতবার ছিল ২৫তম। চীনের অবস্থান ২৭তম, গতবার ছিল ২৮তম। থাইল্যান্ডের অবস্থান ৩২তম, ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ৩৬তম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির প্রধান প্রতিবন্ধতা দুর্নীতি। গত বারের প্রতিবেদনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। ২০১৬ সালে দেশের অবকাঠামোগত ও প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের ফলেই বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে সাত ধাপ এগিয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে গিয়ে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত হওয়ায় বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে। তবে নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ যে পুনর্গঠন কর্মসূচীগুলো হাতে নিয়েছিল সেগুলোর পরের ধাপের পুনর্গঠন কর্মসূচী হাতে না নেয়ায় অনেক ধরনের সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। এটা থেকে বেরুতে না পারলে আগামী দিনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা মনে করে বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুত ও বন্দর পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্নীতি কমে আসা, ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা কমে আসা, সরকারী সেবা সহজলভ্য হওয়া, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমায় ব্যবসা করা সহজ হয়েছে। তবে ব্যবসা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রযুক্তিগত নীতির উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার সূচক, যেখানে সরকারী-বেসরকারী উভয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারী, দেশের বিনিয়োকারী এবং বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহীরা এই সূচক দেখেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার দিক দিয়ে আমরা একই জায়গায় রয়ে গেছি। এখানে কিন্তু আমাদের অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনটা বেশি হবে।’ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেখতে হবে মধ্যম আয়ের দেশে যেতে আমাদের যে বাণিজ্য চাহিদা তা বাড়াতে পারছি কিনা। প্রযুক্তিগত যেসব প্রস্তুতি, শ্রমবাজারের দক্ষতা এবং সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষ, তা নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না। কিন্তু এই দিকগুলো নিয়ে না ভাবলে আগামীতে ভাল করতে পারব না।’ আগামীতে এ সূচকে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে যেতে হলে প্রযুক্তিগত ইকোনমি গড়ে তুলতে হবে। অন্যান্য সূচকে আমরা এগিয়ে গেলেও প্রযুক্তিগত দিকের সূচকে পিছিয়ে রয়েছি। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবসার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে দেশে ব্যবসায়ে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে হবে। প্রতিবেদনে বিডা, বেজার কথা বলা হয়েছে। এগুলোতে প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে হলে যাতে ভালভাবে কাজ করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারী-বেসরকারী খাতকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। মানবসম্পদের যথাযথ উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকের অগ্রগতির একটি বড় অন্তরায় বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ধরনের মানবসম্পদ দরকার, তা এখনও তৈরি হয়নি।’ ফাহমিদা বলেন, ‘দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের পদগুলোতে এখন অনেক বিদেশী কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। দেশের মানবসম্পদের যথাযথ উন্নয়ন না হওয়ার কারণেই কিন্তু বিদেশী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।’
×