ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজ ঝলকের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মুস্তাফিজ ঝলকের অপেক্ষা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট ক্রিকেটটা যখন বাংলাদেশ ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান ২০১৫ সালের জুলাইয়ে খেলা শুরু করেন, তখনই দক্ষিণ আফ্রিকা তার সামনে পড়ে। অভিষেক টেস্টেই ম্যাচ সেরা হন। দুর্দান্ত বোলিং করেন। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা আবার মুস্তাফিজের সামনে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা। পেসারদের জন্য আদর্শ উইকেটের দেশে খেলা। দেশের মাটিতেই যদি মুস্তাফিজ ঝলক দেখা যেতে পারে। তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তো আজ থেকে প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু হতে যাওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও তা মিলবেই বলা চলে। সত্যিই কী মুস্তাফিজ ঝলক মিলবে? বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি পেসার কোর্টনি ওয়ালশ। তার হাতেই এখন পেসারদের নৈপুণ্য নির্ভর করছে। তিনি যা শেখাবেন, সেই শিক্ষা পেসাররা মাঠে প্রদর্শন করবেন। তাতে যদি কাজ হয়, তাহলে সাফল্য মিলবে। নয়ত ব্যর্থতা আসবে। সেই ওয়ালশ আগেই মুস্তাফিজকে নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের আগেই বলেছিলেন, ‘ইংল্যান্ডে (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে) মুস্তাফিজকে পুরনো ছন্দে দেখা যায়নি। আমি তাকে নিয়ে কাজ করছি। আমার মনে হয়েছে নিজেকে ফিরে পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছে সে। আমিও তার গতি ফিরিয়ে আনতে চাইছি। আমি বিশ্বাস করি, সে পুরনো ছন্দে ফিরবে। কাজ করছি বলে বলছি না, তার বোলিং এ্যাকশন নতুন। আমিও তার এ্যাকশনে পরিবর্তন আনতে চাইছি না। উইকেটে তার বল যেন আরও বেশি ঘুরে, সেই চেষ্টাই করছি।’ পেসারদের নিয়ে ওয়ালশ ‘বিশেষ ক্লাস’ করান। সেই ক্লাসে মুস্তাফিজকে আলাদাভাবেই সময় দেন। তাতে কাজও হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ঢাকা টেস্টে স্পিনারদের দাপটের সামনে দুই ইনিংস মিলিয়ে খুব বেশি ওভার বল করারই সুযোগ পাননি। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৯ ওভার বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্পিনারদের রাজত্বে উইকেট পাননি একটিও। এরপরই মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। দলের ভেতরেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। তবে ঠিক সময়েই জ্বলে উঠেছেন মুস্তাফিজ। চট্টগ্রাম টেস্টে দেখান ঝলক। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে নেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট নিয়ে মোট ৫ উইকেট শিকার করেন। যেন পুরনো ছন্দেই ফিরে পাওয়া যায় মুস্তাফিজকে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পেসাররা যেহেতু সুবিধা পাবেন, তা নিশ্চিতই; তাই মুস্তাফিজকে নিয়েই বেশি আশা করা হচ্ছে। তিনিই যে দলের মূল পেস বোলার। তাকেই যা করার করে দেখাতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারও তো ‘মুস্তাফিজ বিরল প্রতিভা; ওর যতœ নেয়া উচিত’ বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ‘আমি জানি, ও খুব ভাল একজন বোলার। তার প্রতি বাংলাদেশের আরও যতœবান হওয়া উচিত। আমি মনে করি, সে বিরল একজন প্রতিভা, বিরল একজন বোলার। যখন একজন পেসার দলের প্রধান স্ট্রাইক বোলার, তখন তার প্রতি আলাদা যতœ নিতে হবে। সামনে যদি অনেক টেস্ট বা ওয়ানডে ম্যাচ থাকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে আপনি কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবেন। টেস্ট, ওয়ানডে না টি২০। এটা অবশ্যই ওর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত। এটা তার ওপরই নির্ভর করে সে একটি সংস্করণ খেলবে না দুটি নাকি তিনটিই।’ মুস্তাফিজ অবশ্য সব ফরমেটেই খেলতে চান। নিজেকে মেলেও ধরতে চান। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার পর ইনজুরির জন্য প্রায় দুই বছর টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন। এরপর এ বছর মার্চ থেকে আবার টেস্ট খেলা শুরু করেন। এ পর্যন্ত ৬ টেস্ট খেলে ১৭ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজের শুরুটা যে রকম হয়েছিল, এখন বোলিংয়ে সেই ঝাঁজ আর দেখা যাচ্ছে না। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট বলে ভরসা মিলছে। মুস্তাফিজও যে মুখিয়ে আছেন, তা বোঝাই যাচ্ছে। এখন শুধু নিজেকে মেলে ধরার অপেক্ষা। পেস বোলারদের জন্য আদর্শ উইকেটে মুস্তাফিজের দিকেই তাকিয়ে থাকছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আবার সেই পুরনো কাটারে একের পর এক ব্যাটসম্যানকে বিধ্বস্ত করা মুস্তাফিজকে দেখতে চান সবাই। তা কী মিলবে?
×