ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল প্রশিক্ষণ ক্যাম্প

সবাই ক্যাম্পে, নেই শুধু সাবিনা...

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সবাই ক্যাম্পে, নেই শুধু সাবিনা...

রুমেল খান ॥ ‘আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করেছি। আর আমাদের ছেড়ে চলে গেল সে। সাবিনা...ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন।’ সন্দেহ নেই, অপটু বাক্য। তবে আবেগটা খাঁটি। ফেসবুকে লিখে এভাবেই নিজের আবেগ-অনুভূতি ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ জাতীয় দলের ফুটবলার মারিয়া মান্দা। আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ‘সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ।’ এ উপলক্ষে বুধবার থেকে বাফুফে ভবনে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ অ-১৫ মহিলা দলের আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ক্যাম্পে যোগ দিয়েছে সব ফুটবলার। সবাই আছে, কিন্তু নেই একজন। সে সাবিনা ইয়াসমীন। ক্যাম্পের সবার আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল তাদের একসময়ের সতীর্থ সাবিনার অকালপ্রয়াণ। ক্যাম্পের একাধিক ফুটবলার এসেছে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর থেকে। তাদের কষ্টটাই বেশি। কেননা চতুর্দশী সাবিনাও ছিল কলসিন্দুরের মেয়ে। মাত্র তিন দিনের জ¦রে তার না ফেরার দেশে চলে যাওয়াটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দেশের ক্রীড়ামোদীরা। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবিনার মৃত্যু হয়। জ্বরে সাবিনার মৃত্যু হলেও জ্বরের ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত নন চিকিৎসক। সাবিনার মৃত্যুতে কলসিন্দুর গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। এখনও কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না এভাবে মারা যেতে পারে একটি ফুটফুটে কিশোরী। সাবিনার অকালমৃত্যুতে কোন সান্ত¦নাতেই থামছে না স্বজনদের আহাজারি। ১৭ সেপ্টেম্বর যশোরে অনুর্ধ-১৪ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর ছুটিতে দক্ষিণ রানীপুরে বাড়িতে আসে সাবিনা। বাড়িতে আসার পর থেকেই জ্বরে ভুগছিল সে। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আগামী ডিসেম্বরেই হয়তো বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যেত সাবিনাকে। অনুর্ধ-১৫ মহিলা দলের সঙ্গে অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার। এবার সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ার কথা ছিল গ্রুপ পদ্ধতিতে। তবে মালদ্বীপ নাম প্রত্যাহার করে নেয়ায় সাফের ফর্মেটে এসেছে পরিবর্তন। ফলে গ্রুপের বদলে এবার সাফ হতে যাচ্ছে লীগ পদ্ধতিতে। অংশ নিচ্ছে চার দল। এরা হলোÑ স্বাগতিক বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনের আত্মবিশ^াস প্রসঙ্গে ছোটনের অভিমত, ‘এখানে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা। তাজিকিস্তানে আমরা এএফসি অনুর্ধ-১৪ রিজিওন্যাল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি সেখানে ভারতকে দুবার লীগে হারিয়েছি। নেপালকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছি। বেশিরভাগ ওই টিমেরই খেলোয়াড়। শ্রীলঙ্কাও ওই টুর্নামেন্টে ছিল। ইরান, তাজিকিস্তানও ছিল। আমরা আটটা দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছি। তাই আশা করা যায় সাফেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারব।’ ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় এই টুর্নামেন্টে প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে ম্যাচ খেলবে। পয়েন্ট টেবিলের সেরা দুই দলের মধ্যে হবে ফাইনাল ম্যাচ। ২৩ জনের দলে সম্প্রতি এএফসি অনুর্ধ ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে আসা দলের ১৩ ফুটবলার আছেন সাফের দলে, এরা হলেন Ñ গোলরক্ষক মাহমুদা, রূপা, আঁখি সামসুন্নাহার, নীলা, আনাই এবং নাজমা, মারিয়া মান্দা, তহুরা, অনুচিং, মার্জিয়া, মনিকা, সুলতানা। মৃত্যু সব সময় বেদনাবিধুর। কিন্তু অল্প বয়সে অকালপ্রয়াণ কখনই মেনে নেয়া যায় না। ঘাতক জ¦রের কাছে আত্মসমপর্ণ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো সাবিনা ইয়াসমিনের ব্যাপারটাও ঠিক তেমনি। জাতীয় অনুর্ধ-১৫ দলের এই প্রতিশ্রুতিশীল ফরোয়ার্ড হঠাৎই প্রবল জ্বরে ভুগে মারা যায় মঙ্গলবার। সে বাবা, মা, এক ভাই ও এক বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছে। সাবিনার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ-১৫ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের কোচ গোালাম রব্বানী ছোটন জানান, ‘সাফের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিল সাবিনা। ক্যাম্পে যোগ দেয়ার কথা ছিল কদিন পরেই। সাফের ক্যাম্পে এবারই প্রথম সে নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সে মারা যায়। খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’ সাবিনা কলসিন্দুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এছাড়া সাবিনা থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পেও ছিল। তবে চূড়ান্ত দলে ঠাঁই হয়নি তার। ২০১৩ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় সাবিনা প্রথম অংশ নিয়েছিল। এরপর সে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৪ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে প্রথম ডাক পায়। সাবিনার এই অকালমৃত্যুর শোককে যদি শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশ অ-১৫ দল আগামী ডিসেম্বরে নিজেদের মাটিতে সাফ অ-১৫ আসরের শিরোপা জিততে পারে, তাহলে নিশ্চয়ই শান্তি পাবে সাবিনার আত্মা।
×