ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পোচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু প্রথম টেস্ট

প্রোটিয়া পরীক্ষা শুরু টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রোটিয়া পরীক্ষা শুরু টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ শেষ হয়ে গেল প্রতীক্ষা। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। পোচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় প্রথম টেস্ট দিয়েই শুরু হচ্ছে সিরিজ। ৬ অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। এ সিরিজে কঠিন পরীক্ষারই সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং বিভাগে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে বাংলাদেশকে। আবার নতুন নিয়মে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট খেলা নিয়েও মাথা ঘামাতে হবে। সেই সঙ্গে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হবে। বাংলাদেশ টেস্ট দলে আছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, মাহমুদুল্লাহ, লিটন কুমার দাশ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, শুভাশীষ রায় ও মুমিনুল হক। দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট দলে আছেন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস, হাশিম আমলা, টেম্বা বাভুমা, থিওনিস ডি ব্রায়েন, কুইন্টন ডি কক, ডিন এলগার, কেশব মহারাজ, এইডেন মারক্রাম, মরনে মরকেল, দুয়ানে ওলিভার, ওয়েন পারনেল, আনদিলে ফেলুকায়ু ও কাগিসো রাবাদা। শুরুতে আসা যাক ব্যাটিং নিয়ে। বাংলাদেশ দলে দুই ওপেনার তামিম ও সৌম্য। দুইজনই প্রস্তুতি ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েছেন। তামিমের মাংসপেশিতে টান পড়েছে। সৌম্য কাঁধে ব্যথা পেয়েছেন। দুইজনই এখন সুস্থ। খেলার জন্যও প্রস্তুত। তবে পাঁচদিনের খেলায় যদি আবার তামিম ও সৌম্যের ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তাহলেই বিপত্তি আসতে পারে। শুরুতেই যদি বাংলাদেশ বিপদে পড়ে তাহলে তা থেকে দলকে রক্ষা করতে মাঝপথের ব্যাটসম্যানদেরই হাল ধরতে হবে। যা কঠিন হয়ে পড়বে। এরপর ইমরুল, মুমিনুল, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, লিটন, মিরাজ রয়েছেন। ব্যাট হাতে যারা ভরসাও হতে পারেন। কিন্তু কোনভাবে ছন্নছাড়া হয়ে পড়লেই বিপদ। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বাউন্সি উইকেটে যে বর্তমান দলের তামিম, ইমরুল, মুশফিক ছাড়া জাতীয় দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা কারও নেই। শেষে যে পেসাররা থাকবেন, তাদের দিয়েতো আর ব্যাটিং থেকে বিশেষ কিছু আশা করা যায় না। পেসার মরকেল, রাবাদা, ওলিভাররা রয়েছেন। স্পিন ধরলে আছেন মহারাজ। নিজেদের মাটিতে প্রোটিয়া পেসার ও স্পিনাররা সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন। এবার আশা যাক বোলিং নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট স্বাভাবিকভাবেই পেসারদের অনুকূলে থাকবে। যদি স্পিন ধরে তাহলে বাংলাদেশ স্পিনাররা নিজেদের মেলে ধরবেন। কিন্তু সবারই জানা যা করার পেসারদেরই করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাদেরই নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। কিন্তু ব্যাটসম্যান এলগার, মারক্রাম, আমলা, বাভুমা, প্লেসিস, ডি কক, ব্রায়েন, মহারাজদের কী ঠেকানো সম্ভব? প্রস্তুতি ম্যাচেই তো বোঝা গেছে, বাংলাদেশ বোলাররা খুব আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি। ফিল্ডিং নিয়ে আছে সমস্যা। প্রতিটি সিরিজেই এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচে যেমন ক্যাচ মিস হয়েছে। ফিল্ডিং মিস হয়েছে। সিরিজেও যদি এমনটি হয়, তাহলে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা সেই সুযোগ পেলে কী আর ছাড়বেন? বড় ইনিংস খেলেই ফেলতে পারেন। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ম্যাচ দিয়ে বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের নিয়ম। সেই নতুন আইনগুলোও রপ্ত করার ব্যাপার আছে। তাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ব্যাটের পুরুত্ব, রান আউট আইন, লালকার্ড, ডিআরএসের নতুন আইন চালু হচ্ছে। যে নতুন নিয়মগুলো নিয়েও মাথাঘামাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত জিততে পারেনি বাংলাদেশ। শুধু হারই হয়েছে নিয়তি। বড় ব্যবধানে হারের সংখ্যাই বেশি। তবে এখন বাংলাদেশ দল বদলে গেছে। সাফল্য পাচ্ছে। দেশে-বিদেশে সাফল্য পাচ্ছে। তাই দলকে নিয়ে আশাও বাড়ছে। প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা যে কোন প্রতিপক্ষের জন্যই কঠিন প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের জন্যও তাই। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২০০৮ সালের পর খেলতে নামছে বাংলাদেশ। সেখানে চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন। ভাল খেলার আশাও আছে। কিন্তু ভাল খেলতে না পারলেই বিপদ আছে। অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারিয়ে গিয়ে খারাপ খেললে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হবে। কঠিন পরীক্ষারই সম্মুখীন হতে চলেছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। যদিও বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের আশা, ভাল কিছুই বয়ে আনা যাবে। মুশফিক যেমন বলেছেনও, ‘অবশ্যই ফ্লাট উইকেট সফরকারীদের জন্য কঠিন হবে। তবে, এই চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা প্রস্তুত। এখানকার উইকেট ক্ষণে ক্ষণে আচরণ বদলায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় অতিথি দলগুলো গতিময় উইকেটের কারণে সমস্যায় পড়ে। আমাদেরও মানিয়ে নিতে হবে। ছেলেরা সেরাটা দিতে তেরি এবং আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, এই ধরনের কন্ডিশনেও আমরা ভাল খেলতে পারি।’ সঙ্গে আরও জানান, ‘আমরা জানি তাদের দারুণ বোলার ও ব্যাটসম্যান আছে। তবে, খেলাটা দুই-একজনের নয়, এটা দলীয় খেলা। গত চার বছর থেকে ওদের নিয়মিত পারফর্ম করা খেলোয়াড় এই দলটিতে খেলবে। তবে ডেল স্টেইন, ক্রিস মরিস, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ভারনন ফিল্যান্ডার না থাকায় আমরা সম্ভবত কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় থাকব।’ পেসারদের পাশাপাশি স্পিনারদের সুবিধা পাওয়ার আশাতেও আছেন মুশফিক, ‘আমরা কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুতই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। এই কন্ডিশনে আমাদের একাধিক স্পিনার ভাল করবে বলে মনে হচ্ছে। যদি স্পিনাররা ভাল জায়গায় বল ফেলতে পারে, তাহলে তারাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে। উইকেটে যদি এতটুকুও স্পিন ধরে, আমি আশাবাদী ভাল কিছু আমাদের পক্ষেই আসবে। আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা খুব দ্রুত সিনিয়রদের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। ওরা জানে ওদের দায়িত্ব কি, দলের জন্য কি করতে হবে। সাকিব না থাকায় দলের সবাই নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ। হোম ম্যাচে আমরা এগিয়ে থেকে শুরু করলেও এ্যাওয়ে ম্যাচে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। কিন্তু, আমরা শ্রীলঙ্কায় স্বাগতিকদের হারিয়েছি, নিউজিল্যান্ডে ভাল খেলেছি। এগুলো আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। এখন থেকে আমরা যদি নিয়মিত এ্যাওয়ে ম্যাচের সুযোগ পাই তাহলে আরও ভাল হবে বাংলাদেশের জন্য। আমরা বিদেশে খুব বেশি টেস্ট খেলিনি। কিন্তু গত আড়াই বছরে আমরা দল হিসেবে অনেক উন্নতি করেছি।’ মুশফিকের কণ্ঠে ইতিবাচক বাণী। কিন্তু প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা কিন্তু হুঙ্কারের সুরেই কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা জয়ের ধারায় ফিরতে মুখিয়ে আছি। আমরা জানি কিভাবে জিততে হয়।’ বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষার মধ্যেই ফেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা। কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীনই হবে বাংলাদেশ। তবে ভাল করার আশাও আছে।
×