ভিনদেশী রোহিঙ্গা নারী যখন তার নাড়িছেঁড়া ধন, আদরের নবজাতকের নাম রাখেন শেখ হাসিনা; সব হারিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এমন মানুষেরা শেখ হাসিনার মানবিকতায় কতটা বিমুগ্ধ আর অভিভূত এ উপলব্ধির জন্য চোখ বন্ধ করতে হয় না। শুধু বাঙালী নয়; বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মনের গহীন কোণে আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আসন গেড়েছেন, তার আকাশসম বিশাল মানবিকতা, হƒদয় উজাড় করা ভালবাসা আর মানব কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে। মানবতার জননী এ মহানুভব নেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জš§দিন আজ; ২৮ সেপ্টেম্বর।
পিতা শেখ মুজিব তখন কলকাতায় ভারত ভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দাঙ্গা প্রতিরোধ এবং লেখাপড়া নিয়ে মহাব্যস্ত। ১৯৪৭ সালের এ দিন টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তাঁর জš§ হয়। গ্রামের নদী-নালা-খাল-বিলের স্রোতের শব্দ এবং সবুজ প্রকৃতির গন্ধ মেখে তার শৈশব কাটে। সেখানেই শিক্ষা জীবন শুরু হয়। মা ফজিলাতুন্নেছা রেণুর ছায়াসঙ্গী হয়ে পিতার রাজনৈতিক জীবনকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখেন এবং নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে একজন আদর্শময়ী হিসেবে গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই আদরের নয়নমণি ছোট্ট ‘হাচুমণি’ মানবিকতা আর ন্যায়বোধ দিয়ে বাংলাদেশের প্রিয় নেত্রী হয়ে বিশ্বনেত্রীর মর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
’৭৫ থেকে ’৮১ স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে পুরো পরিবারকে হারিয়ে প্রবাসে কষ্টের জীবন কাটাতে হয় ছয় বছর। অভিবাসী হন পরিবারের বেঁচে থাকা দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। স্বাধীনতার স্থপতিকে হারানো ভাগ্যহারা বাঙালীর স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়, ১৭ মে ১৯৮১ সাল। সুদীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস আশ্রিত জীবন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বাংলার মাটিতে পা রাখেনÑ আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্যু-হত্যা-গুম-খুনের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতার সংগ্রাম। ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জনগণের মানবাধিকার নিশ্চিত করেন তিনি। নিকট অতীতে তার হাত দিয়ে সম্পন্ন হয় বেশিরভাগ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর অস্বীকৃত খুনীদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, বিনামূল্যে কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বই বিতরণ, উপবৃত্তির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের অভাবনীয় সফলতা। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের মানবিক রূপ। এ সময়ে বার বার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করা হয়। এত কিছুর পরও শেখ হাসিনাকে মানবতার সংগ্রাম থেকে ফেরানো যায়নি।
আজকে শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, উদার, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়কে। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাণ্ডারি তিনি। সারাবিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ভরসাস্থল।
সর্বশেষ, বিশ্বের সব গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে বলেছে, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার জননী)। ২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেল জয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আরেক নোবেল জয়ী কৈলাস সত্যার্থী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে তুলনা করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, শেখ হাসিনাকে একজন ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক বক্তৃতায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘বাবার মতোই বিশাল হƒদয় তাঁর। সেখানে ভালবাসার অভাব নেই।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন বাঙালীর হƒদয় কত বড়। তিনি বাঙালীর গর্ব।’ গার্ডিয়ান পত্রিকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, তা বিরল। তিনি যে একজন হƒদয়বান রাষ্ট্রনায়ক- তা তিনি আগেও প্রমাণ করেছেন, এবারও প্রমাণ করলেন।’ ইন্ডিয়া টুডে তাদের দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘শেখ হাসিনার হƒদয় বঙ্গোপসাগরের চাইতেও বিশাল। যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই।’
আসলে শেখ হাসিনার হƒদয়ের গভীরতার সঙ্গে বঙ্গোপসাগর বা আটলান্টিকের গভীরতার তুলনা প্রতীকী। হƒদয়ের গভীরতা উপলব্ধি করতে হয় হƒদয় দিয়ে; এর পরিমাপ হয় না। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভূ-রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে যিনি আশ্রয় দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন, খাবার দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছেন, সেই শেখ হাসিনার হƒদয়ের গভীরতা উপলব্ধি করে বিদগ্ধজন প্রতীকী তুলনা করার চেষ্টা করেছেন। আসলে শেখ হাসিনার তুলনা তিনি নিজেই। একসঙ্গে ১০ লাখ শরণার্থীকে এমন একটি ছোট দেশে আশ্রয় দেয়ার সাহস! সারা বিশ্ব দেখল মানবিকতা এমনও হতে পারে!
শুধু রোহিঙ্গাই নয়; মাতৃ¯েœহের এমন অনেক বিরল দৃষ্টান্ত এর আগেও স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা। নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব-রিক্ত পিতৃমাতৃহীন রুনা আর রতœাকে নিজ কন্যার মর্যাদা দিয়ে ওদের গণভবনে এনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পরে আরও এক নিঃস্ব মেয়ে আসমাকেও কন্যাস্নেহে একই অনুষ্ঠানে বিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম শেখ ফজিলতুন্নেছা মুজিব শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারটিই একটি মানবিক পরিবার। যারা সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন এ জাতিকে। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, অসহায়ের প্রতি সংবেদনশীলতা শেখ পরিবারের ঐতিহ্য। তরুণ শেখ মুজিব নিজেদের ধানের গোলা থেকে প্রতিবেশী দরিদ্র অসহায়ের মধ্যে বিতরণ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাবস্থায় সংগঠন চালানোর জন্য দলের কর্মীদের খরচ যোগাতে নিজের গহনা বিক্রি করে দিয়েছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। সেই বাবা-মায়েরই কন্যা শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ক্ষমতায় এসেও তার মানবিকতার হাত আরও প্রশস্ত হয়। মাতৃত্বের মমতায় শেখ হাসিনা এতিম শিশুর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন, পরম শ্রদ্ধায় অশীতিপর বৃদ্ধাকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন- তাদের দুঃখ-দুর্দশা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় তুলে আনার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছেন, জাতীয় বাজেটে তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখছেন, বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, ঈদ-পার্বণে তাদের জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন-আশ্রয়হীনের জন্য ঘর বানিয়ে দিচ্ছেন, কাজ দিচ্ছেন। কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে দেশের দরিদ্র মানুষ হাতের নাগালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে, বিনামূল্যে ওষুধও পাচ্ছে। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে মূল বাজেটের বাইরে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
আজ এমন একজন গর্বিত মা, গণতন্ত্র ও মানবতার জননী, সফল রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্ব মানবতার বিবেক শেখ হাসিনার জš§দিন। যুগে যুগে জš§ নিক তোমার জš§দিন। জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্য
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: