ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহিদুল ইসলাম

অন্য উচ্চতায় এরদোগান

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অন্য উচ্চতায় এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক অন্যন্য নাম। স্বীয় প্রতিভা, দূরদর্ষিতার মাধ্যমে খুব সাধারণ অবস্থা থেকে নিজেকে তুরস্কের রাজনীতিতে শক্তিশালী ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন, হয়েছেন ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তার বাল্যকাল এত সুখের ছিল। তুরস্কের রাস্তায় লেবু বিক্রি করতেন তিনি। বাবা ছিলেন তুর্কি কোস্টগার্ডের সদস্য। সেই তিনিই এখন তুরস্কের সবচেয়ে ক্যারিশম্যাটিক নেতা। ৬১ বছর বয়সী এই নেতা এবার তুরস্কের রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্তে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। তার দল জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) নির্বাচনে আবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ায় ১৩ বছরের শাষণকে প্রলম্বিত করার সুযোগ পেলেন। বলা হচ্ছে, তুমুল জনপ্রিয়তার এই সুযোগ নিয়ে তুর্কিদের ওপর প্রতাপশালী নয়া সুলতান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন এরদোগান। এবার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মার্কিন স্টাইলের সর্বক্ষমতা সম্পূর্ণ প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তিনি। এভাবে গণতান্ত্রিক উপায়েই এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠায় উচ্চাভিলাষী এরদোগান। ১৯৫৪ সালে তুরস্কের বাশিম পাসায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার শৈশব কেটেছে কৃষ্ণসাগরের পাড়ে। তিনি ১৩ বছর বয়সে ইস্তানবুল আসেন। সেখানে রাস্তায় তিনি লেবু, তিল ও রুটি বিক্রি করতেন। পরবর্তী সময় পড়ালেখা করেছেন ব্যবসায় প্রশাসনে। পড়ে জড়িয়ে পড়েন ইসলামী আন্দোলনে। ১৯৯৪ সালে ইস্তানবুলের মেয়র নির্বাচিত হন। দেড় কোটি মানুষের শহর ইস্তানবুলে তখন তিনি যানজট ও বায়ুদূষণ রোধ করে নগরের চেহারা পাল্টে দেন। তুরস্কে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তিনি বিক্ষোভে অংশ নেন। সেখানে একটি ধর্মীয় কবিতা আবৃতির কারণে তার চার বছরের জেল হয়। কবিতাটি ছিল মসজিদ আমাদের ক্যান্টনমেন্ট, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনার আমাদের বায়নেট এবং বিশ্বাসীরা আমাদের সৈনিক। এরদোগান দীর্ঘদিনের মিত্র আব্দুল্লাহ গুল ও অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ২০০১ সালে একেপি পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সাল থেকে এ দলটি প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে আসছে। জেল খাটার অতীত থাকায় প্রথমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস করে ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। পরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হন। লম্বা সিøম মধ্য বয়স্ক এরদোগান রাজনীতিতে এক ভিন্নধর্মী ইমেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এরদোগানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা দেন, একজন নেতা কিভাবে একই সঙ্গে ইসলামিক, গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু হতে পারেন, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এরদোগান। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইসলাম, অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে সমন্বিত করে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি রোল মডেল সৃষ্টি করেছেন তিনি। কামাল আতাতুর্ক তুরস্কের জনগণের ধর্ম পালনের অধিকার কেড়ে নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামী ঐতিহ্য ও চেতনা মুছে ফেলেছিলেন। এরদোগান সেই ক্ষত সারিয়ে বলেছেন। ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য যেমন করবেন না, তেমনি ধর্ম পালনে কেউ যেন বাধা দিতে না পারে সে ব্যবস্থাও তিনি করবেন। তবে সমালোচকরা বলেছেন, অনেক আগেই তিনি গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে এসেছেন। ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে ১১৫০ রুম বিশিষ্ট বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট প্যালেস বানানো তার কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতালিপ্সার দৃষ্টান্ত। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক আসলি আইদিনতাসবাস বলেন : ‘নির্বাচনে একেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা এটাই নির্দেশ করে যে, জনগণ এরদোগানের কর্তৃত্ববাদী শাসন অনুমোদন করেছেন। এখন তিনি পুতিন স্টাইলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করবেন।’ তুর্কীদের একাংশ এরদোগানকে ‘বুয়ুক উস্তা’ বা বড় মাস্টার বলে থাকেন। তিনি নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন সুলতান হিসেবে। কেউ কেউ বলে থাকেন, এরদোগান দ্য লাস্ট ডিক্টেটর। সূত্র : ইন্টারনেট
×