ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেনিজুয়েলা কি গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভেনিজুয়েলা কি গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে

দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় তিন কোটি লোকের দেশ ভেনিজুয়েলার সরকার ধসে পড়ার এবং দেশটি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ানোর উপক্রম হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেলের ভাণ্ডার যেখানে সেই দেশটি নৈরাজ্যের অতলে তলিয়ে গেলে উভয় আমেরিকার জন্য তার তাৎপর্য হবে সুগভীর ও ভয়াবহ। অথচ দেশটিতে এমন সঙ্কট দেখা দেয়ার কথা ছিল না। ভেনিজুয়েলার লৌহমানব হিসেবে পরিচিত প্রয়াত নেতা হিউগো শ্যাভেজ ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। তিনি কিউবার স্টাইলে সমাজতন্ত্রের পথ অবলম্বনের চেষ্টা করেছিলেন এবং জনগণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ দিয়েও অন্যান্য জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিয়ে সমাজে একটা সুস্থির অবস্থা সৃষ্টি করেছিলেন। এ কাজে তার সহায়ক হয়েছিল তেল থেকে অর্জিত বিপুল আয়। শ্যাভেজ প্রবল মার্কিন বিরোধী ছিলেন এবং এ অঞ্চলে আমেরিকার নাক গলানো মোটেও বরদাশত করতেন না যে কারণে তিনি ছিলেন ওয়াশিংটনের চক্ষুশূল। শ্যাভেজ ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত ভেনিজুয়েলার রাজনীতিতে অস্থিরতা ছিল না। তার বিশাল ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তার কাছে বিরোধী শক্তি ছিল একেবারেই ম্লান কিন্তু তার মৃত্যুর পর উত্তরসূরি হিসেবে যিনি ক্ষমতায় এসেছেন সেই নিকোলাস মাদুরোর তার মতো ক্যারিশমা নেই। তার ওপর তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় ভেনিজুয়েলার রাজস্ব আয়ও কমে গেছে যে কারণে দেশের অর্থনীতি প্রচ- চাপের মুখে আছে এবং আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে মাদুরোকে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিরোধী দলগুলো নিজেদের সংহত করে ফেলেছে। মাদুরো নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট করার চেষ্টা করছেন। সেই লক্ষ্যে বিচার বিভাগ ও আইনসভাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা করছেন। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল রাজপথে নামছে। বিক্ষোভ মিছিল করছে। গত ৫ মাসে শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। আমেরিকান রাষ্ট্র সংস্থা এই সরকারের নিন্দা করেছে। ভেনিজুয়েলা মেক্সিকো ও এল সালভাদরের মতো হিংসায় উন্মত্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ভেনিজুয়েলার এমন পরিস্থিতিতে তার চিরশত্রু যুক্তরাষ্ট্র যে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ানো ভেনিজুয়েলা থেকে অনেক লোকজন ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। কারণ পরিস্থিতি সেখানে অনেক উত্তপ্ত ও বিস্ফোরণোন্মুখ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন যে সে দেশের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে যদিও এমন পরামর্শ তার প্রশাসনের কেউই দেয়নি। আমেরিকা যদি জাতিসংঘকে দিয়ে অবরোধ আরোপের চেষ্টা করে সেটা সফল হবে না। কারণ ভেনিজুয়েলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা চীন ও রাশিয়া তা হতে দেবে না। একদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও অন্যদিকে বিরোধীদের ওপর সরকারের তীব্র দমননীতির কারণে ইতোমধ্যে উদ্বাস্তুর ঢল সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার লোক পেরুতে পাড়ি জমিয়েছে। ইতোমধ্যে একটা লঘু মাত্রার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং তার পরিণতিতে বিশাল আকারের মানবিক সঙ্কট দেখা দেবে, তবে সিরিয়ার মতো বড় ধরনের সঙ্কট অবশ্য হবে না। তবে ভেনিজুয়েলা দেশটা বিশাল। এর পরিস্থিতিও জটিল। সেটা তো আর একদিনে হয়নি, বহু সময় লেগেছে। পুরোদস্তুর গৃহযুদ্ধ যদি বাঁধে বিদ্রোহীদের ব্যবহার করার মতো অস্ত্রের অভাব হবে না। সেগুলো কলম্বিয়া ও পেরু সীমান্ত দিয়ে আসবে। অবশ্য যেসব ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের আমদানি ঘটেছিল সে ধরনের লোকজন ভেনিজুয়েলায় নেই। অরেকটা সম্ভাবনা আছে সামরিক অভ্যুত্থানের। মাদুরোর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডিওসডাডো কাবেলা নিজে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। জেনারেলদের সঙ্গে তার ভাল যোগাযোগ আছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×