ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শরতসন্ধ্যায় সৈয়দ হককে বিনম্র ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শরতসন্ধ্যায় সৈয়দ হককে বিনম্র ভালবাসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরতের সন্ধ্যায় বিনম্র ভালবাসায় সিক্ত হলেন সৈয়দ শামসুল হক। সুরের আশ্রয়ে সব্যসাচী এই লেখককে জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। তারই রচিত সৃষ্টিসম্ভার থেকে পাঠের মাধ্যমে না থেকেও আবির্ভূত হলেন অনুরাগীদের হৃদয়ে। উন্মোচিত হলো তাকে নিবেদিত স্মরণগ্রন্থের মোড়ক। এভাবেই প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীর আগের দিন মঙ্গলবার সৈয়দ হকের প্রতি প্রকাশিত হলো অপার অনুরাগ। আজ বুধবার সৈয়দ শামসুল হকের প্রয়াণের প্রথম বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম প্রয়াণবর্ষ স্মরণার্ঘ্য অনুষ্ঠান। স্মরণের এ আয়োজনে চারুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হায়াৎ মামুদ ও পিয়াস মজিদ সম্পাদিত ‘ফুলের গন্ধের মতো থেকে যাব ...’ শীর্ষক সৈয়দ শামসুল হক স্মরণগ্রন্থ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত আসলাম আহসান সম্পাদিত ‘তুমি আসবে বলে’ শীর্ষক সৈয়দ হকের গানের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্মরণানুষ্ঠানের সূচনা হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে। ফারহিন খান জয়িতা গেয়ে শোনান ‘স্বার্থক জনম আমার’ ও ‘আমার রাত পোহালো শারদপ্রাতে’ শিরোনামের দুটি গান । গানের সুরটি থামতেই আপন সৃষ্টির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেন সৈয়দ হক। পাঠ করা হয় তার রচিত শেষ পর্বের সৃষ্টিমালা থেকে। সৈয়দ শামসুল হকের জীবন সায়াহ্নে রচিত সৃষ্টিকর্ম থেকে পাঠ করেন তিন বাচিকশিল্পী। তিন পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সৈয়দ হককে নিবেদিত আলোচনা ও স্মৃতিচারণে অংশ নেন ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম, অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, নাট্যজন আতাউর রহমান, স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন, স্মরণগ্রন্থের সম্পাদক অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিণী কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক ও চারুলিপি প্রকাশনের প্রকাশক হুমায়ুন কবীর। আলোচনা ও স্মৃতিচারণ শেষে পরিবেশিত হয় সৈয়দ হকের রচিত গান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আমার পরিচয় বিশ^বিদ্যালয় জীবনে। তার মৃত্যুর পর কেমন করে যেন এক বছর চলে গেল। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর মৃত্যুর আগের রাতেও তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি তার সারাজীবন একটি কাজে ব্যয় করেছেন। আর তা হচ্ছে দেশের সংস্কৃতির সেবা। স্বাধীনতার পর মহিলা সমিতিকে ঘিরে বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। বাংলাদেশ সৈয়দ শামসুল হককে চিরজীবন স্মরণে রাখবে। যতদিন বাংলা সাহিত্য, কবিতা, নাটক থাকবে ততদিন পথিকৃৎ হিসেবে তিনি থাকবেন। পরবর্তী প্রজন্ম তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, এই স্মারক গ্রন্থটি করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা দিয়ে আরও একটি মোটা বই হয়ে যাবে। যা মহীরুহরা লিখেছেন, তাদের কাছ থেকে লেখা চাওয়ার সাহস কারও ছিল না। সেজন্য কাজটা আমাকেই করতে হয়েছে। সেই লেখাগুলো পড়ে অবাক হয়েছি এবং অনেক সূত্র পেয়েছি। বইটি নিয়ে এত কষ্ট করার কারণ, সারাজীবন তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন, তার ১১টি নাটকের নির্দেশক আমি। ‘হ্যামলেট’ নাটকটি অনুবাদ করার সময় আমার সঙ্গে প্রায়ই তার সঙ্গে কথা হতো, আলোচনা হতো। নাট্যকার হিসেবে নির্দেশকের প্রতি তার ঔদার্য ছিল। সেটা আমাকে তার নাটক নির্দেশনায় অনেক বেশি সহায়তা করেছে। তার খুব আশা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মজয়ন্তী দেখে যাওয়ার। কিন্তু সেটা হলো না। অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ বলেন, সৈয়দ শামসুল হক সম্পর্কে আমার গুরুজন। কেননা তিনি যখন লেখালেখির শুরু করেন আমি তখন লেখালেখির আশপাশে ছিলাম না। যাদের লেখা পড়ে সাহিত্যচর্চায় যুক্ত হয়েছি তাদেরই একজন সৈয়দ শামসুল হক। তিনি কখনও পাঠকতুষ্টির জন্য লিখতেন না। নিজের জীবনবোধ ও বিশ^াসের কথাগুলোই লিখে গেছেন। স্থপতি রবিউল হুসাইন বলেন, তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন এক বছর হলেও আমরা তাকে ছাড়ি নাই। জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন তিনি। সৈয়দ শামসুল হক আমাদের সকল ইন্দ্রীয়ের খোরাক যুগিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে এত বহুমাত্রিক লেখক আমরা পাইনি। অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, সৈয়দ শামসুল হক আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ লেখক। লেখক হিসেবে তিনি আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছেন। জাতিসত্তার চেতনা জাগ্রত করেছেন। স্বাগত বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, গত এক বছর সৈয়দ হককে আমাদের চিন্তা চেতনার বাইরে এক মুহূর্তের জন্যেও রাখতে পারিনি। আমাদের কাছে তিনি এক অপরিহার্য মানুষ। শিল্পকলা একাডেমির পক্ষে তার জন্মস্থান কুড়িগ্রামে সৈয়দ শামসুল হক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই স্মরণসভার শুরুতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
×