ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তুরস্কের সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

তুরস্কের সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তুরস্কের সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য ৩০০ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে কৌশল নির্ধারণ করছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কার মতো, তুরস্কের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করা যায় কিনা সে লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রুলস অব অরিজিনের শর্ত শিথিল করার প্রস্তাব দেয়া হবে। তুরস্ক-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভায় অংশ নিতে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ওই সভায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের কয়েকটি খাতে একক বা যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিতে পারে তুরস্ক। জানা গেছে, বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে নতুন প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি আনয়ন, কারখানায় কারিগরি সহযোগিতা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে তুরস্কের। এছাড়া দেশটি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকস, হোম-টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ, পণ্য উৎপাদন ও পরবর্তীতে নিজ দেশে তা নিয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য দেশে রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশে শ্রম অধিকার, তৈরি পোশাক শিল্পের কাজের পরিবেশ, ব্যাংকিং সিস্টেম, যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে চায় তুরস্ক। এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুরস্কের দেশী শিল্প সংরক্ষণে সেফ গার্ড ডিউটি বাংলাদেশী পণ্যের জন্য শিথিল করা, স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা প্রদান, বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রফতানি, ঢাকা ও ইস্তান্বুলের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ভিসা জটিলতা দূর করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিজনেস ফোরামের বৈঠকে আলোচনা করা হবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এবারের বিজনেস ফোরামের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে জোর দেয়া হচ্ছে এফটিএ করার বিষয়ে। জানা গেছে, এফটিএ চুক্তির মাধ্যমে পোশাক রফতানিতে তুরস্কের আরোপিত ১৭ শতাংশ সুরক্ষামূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) এই দেশটি দেশীয় শিল্প রক্ষার নামে গত সাত বছর ধরে গার্মেন্টস পণ্য রফতানির ওপর সুরক্ষামূলক শুল্ক আরোপ করেছে। শুল্ক আরোপের পর থেকে তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আর তেমন বাড়েনি। অথচ শুল্ক ও অশুল্কজনিত বাধাসমূহ দূর হলে প্রতিবছর ৩০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হওয়া সম্ভব। তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ-তুরস্কের এফটিএ রয়েছে। তাই তুরস্কের সঙ্গে এফটিএ চুক্তি করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ এইচ এম আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, তুরস্কের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়টি নতুন আলোচনা নয়। তবে বিভিন্ন কারণে দেশটির সঙ্গে এখনও এফটিএ করা সম্ভব হয়নি। তবে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এই চুক্তি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলোতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুুবিধা থাকলেও তুরস্কে নেই। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় দেশটি গত সাত বছর আগে পোশাক রফতানির ওপর ১৭ শতাংশ সেফগার্ড ডিউটি আরোপ করেছে। চুক্তির মাধ্যমে এই শুল্ক প্রত্যাহারসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হতে পারে। জানা গেছে, এফটিএ চুক্তি তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশটির কাছে তৈরি পোশাকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের শর্ত দেয়া হতে পারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। অবশ্য তুরস্কের দিক থেকেও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কৃষি খাতে বাজার সুবিধা চাইছে তুরস্ক। বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য একটি খসড়া পাঠানো হয়েছে তুরস্ক থেকে। তুরস্কে যেসব পণ্যের রফতানি সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধসহ বেশকিছু পণ্য রয়েছে বিবেচনায়। এছাড়া দেশটিতে শ্রম রফতানির বিষয়টি এফটিএর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা চলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের কৃষি খাতে ঢুকতে চাইছে তুরস্ক। সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, তুরস্কের সঙ্গে পোশাকের বাণিজ্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। দেশটিতে বাংলাদেশী পোশাকের চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষার নামে ১৭ শতাংশ সেফ গার্ড ডিউটি আরোপ করার ফলে গার্মেন্টস পণ্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখন যে কোন মূল্যে বর্ধিত এই শুল্ক তুলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, এফটিও ভাল, কিন্তু সেখানে পোশাক রফতানির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। জানা গেছে, এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইইউতে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলেও তুরস্কের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তুরস্ক তার দেশের শিল্প সুরক্ষার অজুহাত তুলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ১৭ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে ২০১০ সালে। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি দেশটির সরকার অনলাইনে নোটিস দিয়ে জানায়, তারা তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষার জন্য তৈরি পোশাক শিল্প আমদানির ওপর সেফ গার্ড ডিউটি আরোপ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানার পর পার্টি হয়ে আপত্তি জানায়। পাশাপাশি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ অন্যান্য পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পার্টি হয়ে এ ব্যাপারে তুরস্কে আপত্তিপত্র পাঠায়। কিন্তু ওই আপত্তি কানে তোলেনি তুরস্ক। এদিকে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্ক সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তৈরি পোশাকের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আগ্রহ দেখায়। দুই প্রধানমন্ত্রীর সেই সময়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এফটিএ নিয়ে দুটি দেশই আলোচনা চালিয়ে যাবে। তুরস্কের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখেছে ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এফটিএর মাধ্যমে যদি তুরস্ক কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করানো যায়, তবে তা লাভজনক হবে। এর ফলে দেশটিতে পোশাক রফতানি বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে।
×