ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রিপোর্টারের ডায়েরি

অনেক দিন পর ফুটবল খেলায় ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। জনকণ্ঠের হয়ে গেছি ফুটবল খেলতে। ঢাকার হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে ডিআরইউর আয়োজনে চলছে ফুটবল খেলা। ওইদিন সকাল ১১টায় ছিল জনকণ্ঠের সঙ্গে মানবজমিনের খেলা। অফিসের টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে আগে থেকে বলে দিয়েছে সকাল ৯টায় মাঠে হাজির থাকতে। ছোটকাল থেকে খেলাধুলায় তেমন পারদর্শী আমি নই। তবুও খেলাধুলার মতো বিনোদনে সবার মতো আমারও আগ্রহ অনেক। আসলে ফুটবল খেলা এমনই একটি খেলা যার প্রতি সবার আগ্রহ থাকে ব্যাপক। যে কোনদিন বলে পা দেয়নি, সেও নিজেকে মনে করে বড় খেলোয়াড়। অনেক দিন না খেললেও আমার অবস্থা সে রকমই। খেলার অভ্যাস না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই বল খেলার প্রতি আকর্ষণ ছিল ব্যাপক। মনে হতো যেন বিশ্ববিখ্যাত একজন খেলোয়াড় হয়ে যাই। পেলে, ম্যারাডোনার নাম যারা শুনেছে এবং যারা খেলা দেখেছে তাদের মনের অবস্থাও বোধ করি একই রকম। নানা বাড়ির পরিবেশটা ছিল ফুটবলময় একটা পরিবেশ। বলতে গেলে আমার ৮ মামার এবং অন্য নানার ছেলেরাও সবাই বল খেলায় পারদর্শী। সব ভাই মিলে একদলে খেলতেন। তাদের খেলার খ্যাতি ছিল আশপাশের এলাকায়। বাইরে ‘হাইয়ারে’ও খেলতেন তারা। ছোট বেলায় মায়ের সঙ্গে যখন মামা বাড়ি যেতাম বিকেল বেলা সব মামাদের একসঙ্গে বল খেলা দারুণ উপভোগ করতাম। সেই থেকে খেলার প্রতি, বিশেষ করে ফুটবল খেলার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। কিন্তু দাদা বাড়িতে সেই পরিবেশ না থাকায় খেলোয়াড় হয়ে ওঠা হয়নি। না ক্রিকেট। না ফুটবল। তবে আগ্রহের জায়গায় এমনই, মনে হয় যেন বল পেলেই ভাল খেলতে পারব। প্রতি বছরই ডিআরইউর পক্ষ থেকে প্রত্যেক মিডিয়া হাউস নিয়ে খেলার আয়োজন করা হয়। খেলায় অংশ নেয়ার ইচ্ছে হলেও নানা কারণে খেলা হয়ে ওঠেনি। এবার আগ্রহটা প্রবলভাবে জেগে উঠল। তাই আগ থেকে অফিসে বলে রেখেছিলাম খেলায় আমাকে নিতে হবে। ১৪ সেপ্টেম্বর অফিসের টিমের পক্ষ হয়ে তাই খেলায় অংশ নেয়া। দোস্ত কাম সহকর্মী নিখিল আমাকে আগেই বলে রেখেছিল সকাল ৯টায় মাঠে উপস্থিত থাকতে। সে অনুযায়ীই মাঠে হাজির হয়েছি। কিন্তু সকাল থেকেই মনটা কেমন দুরু দুরু কাঁপছে। খেলতে পাবর কিনা সেই আশঙ্কায়। মাঠে গিয়ে দেখি বিভিন্ন দলের খোলোয়াড়রা অনুশীলনে ব্যস্ত। এমন ভাব যেন তারা আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়। ওদের ভাব দেখে ভয়টা আরও একটু বেড়ে গেলে। তাই মাঠে নামার আগেই তাদের খেলা দেখে নিলাম। বুঝলাম সবাই যে পরিমাণ ভাব দেখাল খেলায় আসলে সেই পরিমান পারদর্শী নয়। তাই আমার মনেও একটা সাহস জাগলো, ওরা খেলতে পারলে আমি কেন পারব না। সাহস নিয়ে নেমে গেলাম মাঠে। ২০ মিনিট করে খেলা। ১০ মিটির পর বিরতি। খেলাটি ছিল আসলে প্রীতিম্যাচ। জয় পরাজয় যেখানে বড় বিষয় নয়। অংশ নেয়া বড় কথা। আমাদের দলের নিখিল, মিথুন, রুমেল ভালই খেলল। অনেকটা পেশাদার ধরনের। আমি, রহিম, অপূর্ব কিছুটা আনকোরা টাইপের। ভয় ভয় নিয়ে খেলছি। তবু সবাই মোটামুটি ভালই খেলেছি সেদিন। কোন পক্ষ গোল করতে পারল না। ফলে ফলাফল নির্ধারণ হলো ট্রাইব্রেকারে। তবে অভিজ্ঞতা না থাকলেও সেদিনে খেলায় অংশ নিয়ে নিজের সাহসটা বেড়ে গেল। রবিবার দোস্ত নিলিখ ফোন দিয়ে বলল সোমবার আবার খেলা রয়েছে। খেলাটি ক্রীড়া সাংবাদিক সংগঠনের আয়োজনে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এবার আর আগের মতো ভয় নয়। সাহস করে বলে ফেললাম অবশ্যই খেলব। ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে এগারোটায় খেলা। প্রতিপক্ষ ‘আমাদের সময়’। একটু দেরিতে মাঠে পৌঁছালাম। গিয়ে দেখি আমাদের দলের সবাই মাঠে হাজির। অনুশীলনে ব্যস্ত। আমিও জার্সি গায়ে দিয়ে প্রস্তুত। এবারও দলের সব খেলোয়াড়ই ভালই খেলল। বিশেষ প্রতিনিধি তপন দা, ফটো বিভাগের সম্পাদক তরুণদা, লিখিল, রুমেল, জয় সবার খেলার মধ্যে পেশাদারিত্ব ছিল। আমাদের দল পুরো খেলায় ছিল আক্রমণাত্মক। তবুও জালে একটি গোল ঢুকে পড়ল। হাফ টাইম পরে আবার শুরু হলো আক্রমণ। খেলা শুরু হতেই গোল পরিশোধ। তবে ভাল খেলার জন্য রুমেল খান ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। আর আমার লাভ হলো সাহস। আগামী সব খেলায় অংশ নেয়ার সাহসটা বেড়ে গেছে। ইচ্ছে আছে সব খেলায় অংশ নেয়ার। -শাহীন রহমান [email protected] লাল ফিতার মাহাত্ম্য ২৪ মে, বুধবার। স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টায় ডোমেস্টিক ফ্লাইট ধরে ফ্লাই করলাম মেক্সিকো সিটি থেকে কানকুনের উদ্দেশ্যে। দুই ঘণ্টা ২৫ মিনিটের এই জার্নিতে কোন নাশতা না দিলেও ড্রিংকস দিতে ভুল করেনি এরোম্যাক্সিকান এয়ারটি। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে আমরা স্পর্শ করলাম মেক্সিকোর কিনতারা প্রদেশের রাজধানী কানকুনে। দেশটিতে বড় যে আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো হয় তা এই পর্যটন শহর কানকুনে। ক্যারিবিয়ার সাগরের কোল ঘেষে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রিসোর্ট। বিমান থেকে নেমে ‘মুন প্যালেস’ বলতেই আমাদের নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হলো। দু’জনে মিলে উঠে পড়লাম একটা ট্যাক্সিতে। সবে মাত্র বৃষ্টি হয়েছে। গাছ পালা দেখে মনে হচ্ছে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করেছে। প্রায় ৪০ মিনিট চলার পর চেক পোস্টের সম্মুখীন হলাম। এটি মূল প্যালেসে ঢোকার চেক পোস্ট। জিও দেখিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম কাক্সিক্ষত মুন প্যালেসে। সেখানে গিয়েই হোটেলের প্রশ্ন চলে এলো। আমি এবং যুগ্ম-সচিব অর্ধেন্দু দা আমাদের টিমের যারা আগে গিয়েছেন তাদের কাউকে খুঁজে না পেয়ে কাউন্টারে গেলাম রুমের জন্য। আমাদের রিজার্ভেশন দেখে ‘নিচুকে’ যেতে বলল কর্তৃপক্ষ। হোটেল ম্যানেজমেন্টের গাড়িতে করে গিয়ে পৌঁছলাম নিচুকে। সেখানে গিয়ে রুম বরাদ্দের জন্য রেজিস্ট্রেশন করলাম দুজনে। রেজিস্ট্রেশন সারার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাতে প্লাস্টিকের ‘লাল ফিতা’ চুড়ির মতো করে পরিয়ে দিল। তখন এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারিনি। আমাকে ৮১২২ নম্বর এবং অর্ধেন্দু দাকে ৭৮১৮ নম্বর রুম বরাদ্দ দিল। ইজিবাইকের মতো একটি গাড়িতে করে আমাদের রুমে পৌঁছে দিল। রুমে গিয়ে মন ভরে গেল। অপূর্ব সুন্দর। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হয়েছে। রুমের বারান্দায় গিয়ে চোখে পড়ল অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য। দখিনা বাতাস। তার ওপর ক্যারিবিয়ার সাগরের ঢেউ গর্জন করে তীরে আছড়ে পড়ছে। আর বাতাস মন জুড়িয়ে দিচ্ছে। মন না চাইলেও ক্ষুধার টানে দ্রুত গোসল সেরে রেডি হয়ে চলে এলাম অর্ধেন্দু দার রুমে। দু’জনে মিলে চলে এলাম মুন প্যালেসের মূল ভবনে। সেখানে এসে আমাদের ত্রাণমন্ত্রী মায়া ভাইকে খুঁজে পেলাম। ম্যাক্সিকোর গবর্নদের দাওয়াতে অংশ নিতে সস্ত্রীক খাবার টেবিলে বসে আছেন তিনি। গিয়ে সালাম জানাতে তিনি আমাদের বসতে বললেন। এর পর আমাদের ফার্স্ট সেক্রেটারি তানভীরকে ফোন করে বললেন, আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে। আমরা বেরিয়ে আসতেই তানভীরকে পেয়ে গেলাম। তানভীর বলল রাত অনেক হয়ে গেছে, আগে খেয়ে নেন। না হলে বন্ধ হয়ে যাবে। সেখানে রাত ১১ টার পর আর কোন খাবার সার্ব করা হয় না। আমাদের বসিয়ে তানভীর জানাল এই লাল ফিতার ক্ষমতা জানেন? সে জানাল যতক্ষণ আপনার হাতে এই লাল ফিতা আছে, তার বদৌলতে আপনার সকল খাওয়া এবং এর ভেতরে গাড়িতে ঘোরা-ফেরা সব ফ্রি। খাওয়ার অর্থ শুধু মিল নয়, যাবতীয় ড্রিংকস, জুস ইত্যাদি। আমার ড্রিংকসের অভ্যাস নেই। তাই তেমন উৎসাহ পেলাম না ঠিকই। কিন্তু হল্ফ করে বলতে পারি, যারা নিয়মিত ড্রিংকস করেন, তারা এই খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হবেন। মদ ফ্রি। তাও আবার যত পার। তাই আবার হয় নাকি! হ্যাঁ- ফ্রি মানে তা আবার শুধু রুমে নয়। প্যালেসের আট বর্গমাইলের মধ্যে যে কোন স্থানে বসে যত খুশি খেতে পারবেন। শুধুমাত্র খাবার (মিল) স্থানে ছাড়া অন্য যে কোন স্থানে বসবেন, মদ আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। তাও আবার অধিকংশ ১৮/২০ বছরের সুন্দরীরা এসে বলছে, স্যার ‘এনি ড্রিংকস’ হোটেলের রুমে টেবিলের ওপর রাখা রয়েছে রেড ওয়াইন। ফ্রিজে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার মদ। রয়েছে খাবারের সুব্যবস্থা। লোভনীয় আইটেমও রয়েছে। মাছের মধ্যে শ্যামনসহ নানা প্রজাতির মাছ যুক্ত রয়েছে খাবারের মেনুতে। মাংস, ফল, মিষ্টিসহ বিভিন্ন আইটেম সাজানো রয়েছে। শুধু পছন্দ মতো নিজে নিয়ে খাবেন। যত খাবেন আপত্তি নেই। আমাদের সফর সঙ্গীর প্রায় সকলের বক্তব্য, কমতো ঘুলরাম না। অনেক দেশে গিয়েছি। কিন্তু এই রমক মদ ফ্রি কোথাও দেখিনি। রাতের খাবার শেষ হতে আমাদের ১১ টার মাত্র কয়েক মিনিট দেরি হওয়াতেই ওয়েটার এসে বলছে স্যার সময় শেষ। দ্রুত খাবার শেষ করে রুমের দিকে রওনা দিলাম। গভীর রাতে রুমে পৌঁছে প্রকৃতির টানে বারাদ্দায় এসে বসলাম। তিন তলার বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে সাগরের গর্জন শুনছি। আর বাতাস সারা শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রায় ঘণ্টা খানেক বসে থেকে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। -তপন বিশ্বাস
×