ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচন

রবিবার জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বার্লিন, মিউনিখ, হামবুর্গ, ফ্রাঙ্কফুর্টসহ বড় বড় শহরের ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। চার বছর আগে জার্মানির ১৮তম পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৭১ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের সভানেত্রী জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরর্কেল এবারও চতুর্থবারের মতো তাঁর দলের পক্ষে চ্যান্সেলর প্রার্থী হন এবং নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। জার্মানিতে একজন নারীর ধারাবাহিক বিজয়লাভ ঐতিহাসিক ঘটনা। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলের নেতা ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাবেক সভাপতি মার্টিন শুলজ। এর বাইরে রয়েছে বর্তমান পার্লামেন্টের বিরোধী দল, বাম দল, পরিবেশবাদী সবুজ দল, লিবারেল গণতান্ত্রিক দল এবং কট্টর ডানপন্থী জার্মানির জন্য বিকল্প নামক দলটি। জার্মানির ১৯তম সাধারণ নির্বাচনে এ্যাঞ্জেলা মের্কেল বিজয়ী হলেও এবারের নির্বাচনে জার্মান পার্লামেন্টে কট্টর ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ডের ১৩ শতাংশ ভোট পাওয়া ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির রাজনীতিক ও সাধারণ নাগারিকদের। প্রায় এক যুগ ধরে এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে তাঁর নেতৃত্বের ক্যারিশমা। কারণ তিনি নিজেকে জার্মানির গ-ি পেরিয়ে ইউরোপের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত করতে পেরেছেন। সেই হিসেবে তাঁর বিপরীতে সোশ্যাল ডেমোক্রেট পার্টির তেমন কোন ক্যারিশম্যাটিক নেতার আগমন ঘটেনি, যা মেরকেলের ইমেজকে ম্লান করে সামনে এগিয়ে আসবে। অধিকাংশ জার্মানই মনে করেন ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে জার্মানিই হবে ইইউয়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। মের্কেলকে চ্যালেঞ্জ করার মতো নেতা এই মুহূর্তে ইউরোপে কেউ নেই বলেই পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মের্কেলের জয়ের অন্যতম কারণ তো বটেই। বিশেষ করে সদ্য অর্থনৈতিক মন্দার সময় মের্কেল দক্ষতার সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। মন্দার খুব একটা আঁচ জার্মানির অর্থনীতিতে পড়তে দেননি। একই সঙ্গে তিনি শক্ত হাতে ইউরোপের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। সমালোচনার মুখেও তিনি গ্রিসের অর্থনৈতিক সংস্কারে ইইউর মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করেছেন। ঋণ সহায়তা দিয়েছেন। শরণার্থীদের আশ্রয়দানের ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল ইতিবাচক ও মানবিক। সবকিছু মিলিয়ে তিনি ইউরোপের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হয়েছেন। দেশজ অর্থনীতির ক্ষেত্রে মের্কেলের সময় বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেড়েছে। রফতানি আয়ও বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাব অনুসারে বর্তমানে জার্মানিতে বেকারত্বের হার ৩.৯ শতাংশ। এখন গত ২০ বছরের তুলনায় বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম। জার্মানির বর্তমান নির্বাচনের ফলাফল থেকে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করল এখনও বেশির ভাগ মানুষ গণতান্ত্রিক উদারধারার পক্ষাবলম্বন করলেও কট্টর উগ্রপন্থীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। মের্কেলের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে এই উগ্রবাদই। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশটিকে তিনি পরবর্তী চার বছর কিভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেটাই দেখার বিষয়।
×