ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা

প্রায়শ নতুন মায়ের বাচ্চা হবার পর বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন। ভয় পেতে থাকেন বিভিন্নভাবে বা অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে বাচ্চাকে গড়ে তুলতে বিভিন্ন বিপাকে পড়েন। এখানে নবজাতকের সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য পরিচর্যা তুরে ধরা হল। সাধারণত জন্মের পর থেকে প্রথম মাস (২৮ দিন) পর্যন্ত বয়সের বাচ্চাকে আমরা নবজাতক বলে থাকি। সাধারণ একটি বাচ্চাকে আমরা পুরোপুরি সুস্থ নর্মাল বাচ্চা কখন বলবো বাচ্চা যদি পুরোপুরি ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ করে হয়। বাচ্চা হবার পর শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়েছে এবং কান্না করেছে। হবার পর বাচ্চাকে পরীক্ষা করে দেখা যায় যদি কোন জন্মগত ত্রুটি নেই। তাহলে আমরা বলবো সুস্থ বাচ্চা। সুস্থ বাচ্চাকে শারীরিক পরীক্ষা করেই আমরা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেবো এবং মায়ের বুকে ধরতে বলবো। একজন তদারককারী লাগতে পারে যে কিনা প্রথম অবস্থায় মাকে সাহায্য করবে বাচ্চাকে বুকে ধরতে। মাকে বুকের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেবেন এবং দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি দেখিয়ে দেবেন একজন ডাক্তার বা ঞৎধরহবফ ংরংঃবৎ বা দাই বাচ্চাকে প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত একবার, ৭ দিনে এবং ৬ সপ্তাহ বয়সে শারীরিক স্বাভাবিক পরীক্ষা করবেন একজন ডাক্তার। নবজাতকের জন্ডিস বাচ্চার জন্ডিস আর বড়দের জন্ডিস এক কথা নয়। স্বভাবতই ১০০টি বাচ্চার মধ্যে প্রায় ৬০টি বাচ্চার ক্ষেত্রেই প্রথম ৩/৪ দিন বয়সের মাথায় চোখ হলুদ হতে পারে, হতে পারে গায়ের চামড়া হলুদ। এটি একটি নর্মাল শারীরবৃত্তীয় কারণে হয়। নবজাতকের লিভার এনজাইমগুলোর অপরিপক্বতার জন্য স্বভাবত এরকম হয়। আবার ৬/৭ দিন বয়সের মাথায় হলুদ ভাব কমতে থাকে। একটা লেভেল পর্যন্ত জন্ডিসের মাত্রাকে আমরা সহনশীলতার সঙ্গে দেখবো। তার চেয়ে বেশি উঠলে আমরা ফটো থেরাপি দেবো। এক্ষেত্রে সূর্যের প্রত্যক্ষ তাপে রাখতে আমরা নিষেধ করবো। কারণ প্রত্যক্ষ তাপে ঐবধঃ ংঃৎড়শব হতে পারে, বা সূর্যরশ্মির রেড রে বা আলট্রা ভায়োলেট রে থাকে, যা কিনা বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে। কখন জন্ডিস সম্পর্কে ভীত হবার বিষয় থাকে বাচ্চার প্রথম দিনেই যদি জন্ডিস হয়। ১৫ দিনের পরও যদি জন্ডিস থেকে যায়। জন্ডিসের সঙ্গে সঙ্গে যদি বাচ্চা নেতানো থাকে বা দুধপান ছেড়ে দেয়। নবজাতকের নাভির যত্ন আগে নাভিতে আমরা ঝঢ়রৎরঃ ধিংয দিতে বলতাম, এখন আর আমরা তা বলি না। আমরা নাভিকে স্বভাবতই পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে বলি। নাভি শুকাতে স্বভাবতই ২/৩ সপ্তাহ সময় লাগে। নাভিতে যদি পচন ধরে এবং গন্ধ থাকে, নাভির গোড়ায় যদি লাল হয়ে ওঠে এবং সঙ্গে যদি বাচ্চার গায়ের তাপ বাড়ে তবে আমরা সতর্ক হতে বলি। নবজাতকের গোসল স্বভাবত প্রথম সপ্তাহে গোসল দেওয়ার দরকার নেই। তারপর থেকে গোসল দেওয়ার জন্য স্বাভাবিক কিছু নিয়ম মেনে চললেই হবে। গোসলের আগে টাওয়েল রেডি করুন দরজা-জানালা বন্ধ করুন ফ্যান অফ করুন কুসুম গরম পানিতে বাচ্চাকে ঝুপ করে গোসল করিয়ে দ্রুত গা হাত পা মাথা মুছিয়ে দিন। বাচ্চার দুধ খাওয়ানো বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রথমে মায়ের মানসিক প্রস্তুতি লাগবে। মায়ের ইচ্ছাশক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে যে মা বুকের দুধ খাইয়ে বাচ্চাকে লালন-পালন করবেন। দুধ খাওয়ানোর আগে মা শিথিলভাবে আরামদায়ক জায়গায় বসবেন। এবার মা এক হাতের কনুইয়ের মধ্যে বাচ্চার মাথা নেবেন আর অন্য হাত দিয়ে মা তার স্তনের বোঁটা ও চারপাশের কালো অংশটুকু বাচ্চার মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেবেন। বাচ্চা দুধের বোঁটা ও চারপাশের কালো অংশ মুখের ভেতর ঢুকিয়ে চুক চুক করে টানতে থাকবে। খাওয়া শেষ হলে সে পরিতৃপ্তির ভাব দেখাবে বা ঘুমিয়ে যেতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ার পর যথারীতি বাচ্চার পেটের বাতাস বের করতে হবে। বাচ্চা যদি দিনে-রাতে অন্তত ৬ বার প্রস্রাব করে তবে জানতে হবে বাচ্চা দুধ পাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, মা যদি বেশি টেনশন বা নিদ্রাহীনতায় ভোগে তাহলে বুকের দুধ কমে যেতে পারে। বাচ্চার পেটের বাতাস বের করার নিয়ম (ইঁৎঢ়রহম ঁঢ়) বাচ্চাকে বাম হাত দিয়ে ঘাড়ের নিচে ধরলেন এবং ডান হাতটি দিয়ে বাচ্চার নিচের অংশে ধরলেন, তারপর কাঁধে নিলেন। লক্ষ্য রাখতে হবে বাচ্চার পেটটা যেন আপনার কাঁধে চাপ খায়। তারপর হালকাভাবে পিঠে ডান হাত দিয়ে আস্তে আস্তে চাপড় দেবেন। এটা করা যদি কঠিন হয় তবে দুধ খাওয়ানোর পর বাচ্চার মাথাটা আপনার কনুইয়ের মধ্যে বসিয়ে বাচ্চাকে আপনার কোলের ওপর বসিয়ে রাখুন ৩০/৩৫ মিনিট ধরে। আপনি গল্প করুন, এর মাঝে টিভি দেখুন। আপনার অজান্তেই পেটের বাতাস বের হয়ে যাবে। বাচ্চাকে হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে বিদায় দেবার সময় মাকে দেয়া নির্দেশ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ (পানি, মধু ও অন্য বাজারজাত দুধ, কিছুই না) খাওয়াতে হবে। ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবার বা পারিবারিক খাবার খেতে দিতে হবে। টিকাগুলো সঠিক সময়ে দিতে হবে। কম মানুষ বাচ্চাকে ধরবে বা বাচ্চার রুমের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অতি সতর্কতার সঙ্গে মেনে চলবেন পরিবারের সকলে। আর বাচ্চা উৎফুল্ল ছিল, খাচ্ছিল ভালো কিন্তু হঠাৎ খাচ্ছে না, গায়ে তাপ বা বাচ্চার যদি নেতানো ভাব থাকে তাহলে অতি দ্রুত বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ডা. এটিএম রফিক উজ্জ্বল শিশু বিভাগ হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
×