ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গতির যুদ্ধে বিজয়ী আফফান

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গতির যুদ্ধে বিজয়ী আফফান

সুমন্ত গুপ্ত চট্টগ্রামের ছেলে সাদাত সাফওয়ান আফফান ছোটবেলা থেকেই গাড়ির নেশা আফফানের। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র থাকার সময় তাকে গাড়ি চালানো শিখিয়েছেন বাবা। যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন, তখন পুরোদস্তুর চালক তিনি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত ভক্সওয়াগন এমিও কাপ নামে এ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের দুই প্রতিযোগী অংশ নেন। একজন হলেন সাদাত সাফওয়ান আফফান অপরজন হলেন ঢাকার অভিক আনোয়ার। কার রেসিং, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় একটিখেলা। বাংলাদেশে ব্যয়বহুল এই খেলার প্রচলন নেই বললেই চলে। দেশে কার রেসিংয়ে প্রশিক্ষণ ট্র্যাক বা দক্ষ প্রশিক্ষক কোনটিই নেই। শুধু ‘র্যালিক্রস চ্যাম্পিয়নশিপ’ নামে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ মোটরস্পোর্টস। ছোটবেলা থেকেই রেসিংয়ের প্রতি অদম্য আগ্রহ চট্টগ্রামের ছেলে সাফওয়ানের। তাই কোন বাধা থামিয়ে রাখতে পারেনি আফফান সাদাত সাফওয়ানকে। সম্প্রতি তিনি ভারতে ফর্মুলা ফোর রেসিংয়ে অংশ নিয়ে পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক রেসিংয়ে অংশগ্রহণের লাইসেন্স। বাবা মিকাইল সাদাত শরীফুল ইসলাম ও মা লায়লা বেগমের দ্বিতীয় ছেলে সাদাত সাফওয়ান আফফান। ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত সাফওয়ানের নেশা গাড়ি চালানো। আর এই শখ থেকেই রেসিং ট্র্যাকে গাড়ি নিয়ে ছুটার স্বপ্ন দেখেন তিনি। আর এই স্বপ্ন সফল করতে তিনি লন্ডন গিয়ে রেসিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন। কী করে ট্র্যাকে ছুটতে হয়, কী করে বাঁকগুলোতে আস্তে করে ব্রেকে পা কষতে হয়, কী করে ব্রেকের সঙ্গে এক্সেলেটরের সমন্বয় করে অন্য রেসারদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয় ইত্যাদির প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন তিনি লন্ডনে। কার রেসিংয়ের জগতে এবারও সাফল্যের পালক মাথায় নিয়ে দেশে ফিরেছেন। ভক্সওয়াগন এমিও কাপ ২০১৭তে তৃতীয় স্থানঅধিকার করেছেন আফফান। পাশাপাশি জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রানারআপ হওয়ারও গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। চেন্নাইয়ে তাদের রেসিং ট্র্যাকটি ছিল ৩ দশমিক ৭১৬ কিলোমিটার। ওই ট্র্যাকে ছিল আটটি ল্যাপ। একটি ল্যাপ পার হতে তিন সময় নিয়েছেন এক দশমিক ৫৯ সেকেন্ড। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো শেখার জন্য আফফানের কোন প্রশিক্ষকের প্রয়োজন হয়নি। চট্টগ্রামের ডিওএইচ এলাকায় বাড়ির আশপাশের রাস্তায় দ্রুতগতির গাড়ি চালানো শিখেছে আফফান। পাঁচ বছর বয়স থেকে বাবার কোলোবসে গাড়ি চালানো কৌশল রপ্ত করেছে আফফান। ‘এ ধরনের প্রতিযোগিতায় ছেলের অংশগ্রহণ প্রথম প্রথম খুব ভয় লেগেছিল আফফানের মা লায়লা বেগমের। ছেলেটা যতক্ষণ ট্র্যাকে থাকত ততক্ষণ খুব উদ্বিগ্ন থাকতেন তিনি। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের বিখ্যাত কার রেসিং ‘ভল্কস ওয়াগন ভেনটোকাপ-২০১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ’ প্রতিযোগিতায় সপ্তম স্থান অধিকার করেছিল আফফান সাদাত। ওই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের দিল্লিতে এ কার রেসিং অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে চতুর্থ স্থানএবং চূড়ান্ত পর্বে ২০জন প্রতিযোগীর মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন আফফান সাদাত। এ কারণে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত কার রেসে কোনো পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি ‘ভল্কস ওয়াগন এমিও কাপ-২০১৭ প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পেরেছেন সাদাত। দিল্লির ‘রেড বুল’ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিট’ নামের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ট্র্যাকে এ কার রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ওই ট্র্যাকে ছিল ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ মোড়। প্রায় দেড় লাখ দর্শক ওই কার রেস উপভোগ করেছিল এ প্রতিযোগিতা। এর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত থার্ড র্যালিক্রস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৬ অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন আমাদের আফফান। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে আফফান বলেন তিনিই প্রথম বাংলাদেশী যিনি কার রেসিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ একটি প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করেছেন। ‘ব্যক্তিগত খরচে এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রায় দুঃসাধ্য। এক্ষেত্রে কোন স্পন্সর পেলে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাব, বলেন আফফান।সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে এ খেলায় অংশ নেন তিনি। কার রেসিং প্রতিযোগিতায় ১২ লাখ টাকা নিবন্ধন ফিসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয় আফফানের। ভক্সওয়াগন এমিও কাপ ২০১৭ প্রতিযেগিতায় প্রথম হয়েছেন দিল্লীর বাসিন্দা কারমিন্দার সিং, দ্বিতীয় হয়েছেন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা সন্দ্বীপ কুমার। ভারত, বাংলাদেশ ও চীন থেকে মোট ১৯ জন প্রতিযোগী এ রেসিংয়ে অংশ নেন।
×