ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার আশ্বাস চীনের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার আশ্বাস চীনের

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দেশটিকে প্রভাবিত করার আশ্বাস দিয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। সফররত আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলকে দেশটির রাজধানী বেজিংয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার লি জুন এই আশ্বাস প্রদান করেন। খবর বাসসর। বৈঠকে তিনি বলেন, ‘চীন সরকার মিয়ানমারকে প্রভাবিত করবে যেন তারা বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই বিষয়ে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসার পর গত দু’দিন কক্সবাজারে ছিলেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত চার লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। ‘আমি সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ওপর শারীরিক ও যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে।’ কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের অবস্থান সম্পর্কে ফিলিপ গ্র্যান্ডি বলেন, সেখানে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা, পানি, স্যানিটেশন ও খাদ্যের প্রয়োজন। কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে সেখানে বলা হয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলা প্রসঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা প্রধান বলেন, এই নিরাপদ অঞ্চল কে সুরক্ষা দেবে, সেটি বিবেচনার বিষয়। মিয়ানমারের দায়িত্ব হচ্ছে, তার নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া। তারা না দিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যদি এই সুরক্ষা দিতে হয়, তাহলে সেটি হবে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারকে এ বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা। মিয়ানমারে এখন কত জন রোহিঙ্গা আছে, তা জানেন না উল্লেখ করে ফিলিপ বলেন, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা রাখাইনে কাজ করছে, কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে তাদের কার্যক্রম খুবই সীমিত। তিনি বলেন, আমরা রাখাইন প্রদেশে স্বাভাবিক নিরাপত্তা চাই। এটা ছাড়া মানুষ সেখানে ফিরবে না। তারা সব হারিয়েছে। যদি নিরাপত্তার বিষয়ে ওই ধরনের কোন নিশ্চয়তা না থাকে, তারা ফিরে যাবে না। সঙ্কটের সময় সীমান্ত খোলা রাখায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান গ্র্যান্ডি। উল্লেখ্য, রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য দাতাদের কাছে বড় তহবিলের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর কমিশনার ফিলিপ গ্র্যান্ডি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে সোমবার এক বৈঠক করেন। বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামালও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর বাংলাদেশে আসার পর যেসব শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেই বাংলাদেশ সরকার জন্মসনদ দিচ্ছে। মা ও শিশু উভয়ই মিয়ানমারের নাগরিক। তাদেরকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে পরিচয় দেয়া হবে কিনা-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় বলে দেবে। তাহলে তাদের এখনকার পরিচয় কি-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা অনুপ্রবেশকারী। মন্ত্রী জানান, ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কাজে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সে বিষয়টি তারা জানাতে এসেছিল। তিনি বলেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিএফপি) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন যেভাবে খাওয়ার ব্যবস্থা করছে আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে। উখিয়া ও টেকনাফের যে ২ হাজার একর জমিতে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করতে ৩৫ কোটি টাকা দেবে ইউএনএইচসিআর। দুই এক দিনের মধ্যে তারা টাকা দিয়ে দেবে। আর রাস্তা নির্মাণের কাজে সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তাদের স্থায়ীভাবে জায়গা দেয়া হবে ভাসানচরে (ভাসানচরের আগের নাম ঠেঙ্গার চর)। মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে সাময়িক সময়ের জন্য। যদি তাদের নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোন পরিকল্পনা করতে হয় তাহলে তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে সেকথা বলেছেন। সেক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সব সহযোগিতা করবে ইউএনএইচসিআর। মানুষের বসবাস উপযোগী করে তুলতে কারিগরি সহযোগিতাও তারা করবে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে ইউএনএইচসি বাংলাদেশে কাজ করছে। তারা আমাদের পুরনো বন্ধু। আমাদের এই সমস্যার জন্য যে যে সহযোগিতা দরকার তারা তা দেবে।
×