ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ষষ্ঠীপূজা শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আজ ষষ্ঠীপূজা শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বোধন শেষে আজ মঙ্গলবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটছে বাঙালী হিন্দুদের শারদোৎসব। বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। যা শেষ হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ, উলুধ্বনি, আর ভক্তকুলের আবাহনের মন্ত্রোচ্চারণে দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আগমন ঘটেছে। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য আরতি, আর ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরার পাশাপাশি মাইকের আওয়াজ আর বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় আজ সারাদেশের পূজাম-পগুলো উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে দুর্গতিনাশিনীর আগমনে আনন্দে বিহ্বল বিশ্বের কোটি কোটি হিন্দু। প্রতিমা তৈরি শেষ। বাহারি রং চড়েছে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলেছেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গনেশের গায় উঠেছে নক্সীদার কুঁচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়ছে ম-পে। আজ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার স্নিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পুজারীকে। আগামীকাল বুধবার মহাসপ্তমী। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা এসেছেন বিশ্ব শান্তির জন্য তথা সবার মঙ্গলের তরে। কিন্তু অসুরবিনাশিনী জগৎজননী দেবী দুর্গা বাঙালীগৃহে আসেন অন্যভাবে। কৈলাস ছেড়ে প্রতিবছর তিনি আসেন বাবার বাড়িতে কন্যারূপে। দেবী দুর্গার সঙ্গে প্রতি শরতে মর্ত্যে আসেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। এই চালচিত্রে দেবাদিদেব মহাদেবও (শিব) বাদ যান না। লক্ষ্মী সমৃদ্ধি ও সরস্বতী জ্ঞানের প্রতীক। কার্তিক হচ্ছেন দেবসেনাপতি, শত্রুনাশকারী। আর গণেশ হচ্ছেন সর্বসিদ্ধিদাতা অর্থাৎ মানুষের কামনা পূরণকারী। বাঙালী হিন্দুরা যে কোন শুভ কাজে ইষ্টনাম হিসেবে দেবী দুর্গাকে স্মরণ করে থাকেন। এর আগে সোমবার সারাদেশের পূজাম-পগুলোতে দুর্গাদেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এ বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙ্গার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। ম-পে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এ বন্দনা পূজা হয়। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লংকা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরতকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরতকালের পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়। সনাতন বিশ^াস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার নৌকায় চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন)। যার ফল শস্যবৃদ্ধি। দেবী স্বর্গালোকের বিদায় নেবেন (গমন) ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। এবার সারাদেশে ৩০ হাজার ৭৭ পূজাম-পে দুর্গোৎসব হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ৬৮২ বেশি। আর ঢাকা মহানগরীর এবারের পূজাম-পের সংখ্যা ২শ’ ৩১, যা গত বছরের তুলনায় দুটি বেশি। এবার সারাদেশে দুর্গাপূজায় ব্যয় হ্রাস করে সেই অর্থ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিন আজ ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ষষ্ঠীতিথিতে সকাল সাড়ে ছয়টায় কল্পারম্ভ এবং বিকেল চারটায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। আগামীকাল বুধবার মহাসপ্তমী, বৃহস্পতিবার মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা, শুক্রবার মহানবমী ও শনিবার বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়ার শোভাযাত্রা। দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হবে। এছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে ম-পে ম-পে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। পৃথক বিবৃতিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) সিআর দত্ত বীরউত্তম, ঊষাতন তালুকদার, হিউবার্ট গোমেজ, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জী, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শ্যামল কুমার রায় প্রমুখ হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সারাদেশেই নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজাম-পের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুুলিশ এবং র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম-পে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন। ঢাকেশ^রী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব বলে পরিচিত ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির পূজাম-পে আজ পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা ঘটবে। পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও শেষ দিনে বিজয়া শোভাযাত্রা হবে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম-পে মহাষ্টমী ও কুমারীপূজার দিনে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। রাজারবাগের বরোদেশ^রী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটির পূজাম-পে পূজার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্যনাট্য ও নাটক পরিবেশিত হবে। গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বনানী পূজাম-পে পূজার পাঁচদিনই বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়া কলাবাগান মাঠে এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যয়বহুল দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী কালিবাড়ী, পুরান ঢাকার অভয়নগর দাস লেনের ভোলানন্দগিরি আশ্রম, রাধিকা বসাক লেন, নরেন্দ্র বসাক লেন, ঢাকেশ^রীবাড়ী, শাঁখারীবাজারের পান্নিটোলা, টিকাটুলীর প্রণব মঠ, ঠাঁটারীবাজার পঞ্চানন শিব মন্দির, সূত্রাপুরের ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বনগ্রাম তরুণ সংসদ, ওয়ারী সার্বজনীন পূজা কমিটির ম-প, উত্তর মুশুন্দী, ফরাশগঞ্জ জমিদার বাড়ি, বিহারীলাল জিও মন্দির ও মতিঝিলের অরুণিমা সংসদ পূজা কমিটির ম-পসহ বিভিন্ন মন্দির ও ম-পে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
×