ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল, দিনাজপুর নেত্রকোনা

মালিতে নিহত তিন শান্তিরক্ষীর বাড়িতে শোকের মাতম

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মালিতে নিহত তিন শান্তিরক্ষীর বাড়িতে শোকের মাতম

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ আফ্রিকার মালিতে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশের সৈনিক মনোয়ার হোসেনের (৩২) বরিশালের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মনোয়ারের মৃত্যুতে তার দুই নাবালক কন্যা ও স্ত্রী অসহায় হয়ে পড়েছেন। তারা দ্রুত মনোয়ারের লাশ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি করেছেন। সোমবার সকালে জানা গেছে, নগরীর সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে পড়াশোনা করে ২০০৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন সৈনিক মনোয়ার হোসেন। চাকরিতে যাওয়ার আগেই পুলিশ সদস্য বাবা রফিকুল ইসলাম ও বড়ভাই আনোয়ার হোসেনকে চিরদিনের জন্য হারিয়েছেন মনোয়ার। তাই পরিবারের হাল ধরতেই সে সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের দুই পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে মনোয়ার হোসেন সবার বড়। নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর এলাকায় পরিবার-পরিজন রেখে যশোর ক্যান্টনমেন্টে সৈনিকের চাকরি করছিলেন মনোয়ার। ২০০৮ সালে চন্দ্রমোহন এলাকার কবির হাওলাদারের কন্যা ইভা আক্তারকে বিয়ে করেন মনোয়ার। দাম্পত্য জীবনে তাদের নুসরাত জাহান ইলমুন (৭) ও দেড় বছরের তাসমিন নামের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গত ৩০ মে এক বছরের জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যায় মনোয়ার। মনোয়ারের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শান্তিরক্ষী মিশনে গিয়ে ভালই কাটছিল তার। প্রায় সময় মা, স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ফোনে কথা হতো মনোয়ারের। শান্তি রক্ষী মিশনে আফ্রিকার মালি যাওয়ার ব্যাপারে মনোয়ারের স্বপ্ন ছিল সংসার ও সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে। গত রবিবার বিকেলে সেনা সদর দফতরের একটি ফোনে সবকিছু এলামেলো হয়ে যায় সৈনিক মনোয়ারের পরিবারের। তারা জানতে পারেন, রবিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর একটার দিকে মালিতে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে ক্যাম্পে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজের (আইইডি) শক্তিশালী বিস্ফোরণে হামলার শিকার হন শান্তিরক্ষীরা। এরমধ্যে তিন বাংলাদেশী সৈনিক নিহত এবং এক মেজরসহ চারজন আহত হন। নিহত তিনজনের মধ্যে রয়েছেন বরিশালের মনোয়ার। দিনাজপুর থেকে জানান, মালিতে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ৩ বাংলাদেশী সেনার মধ্যে সার্জেন্ট আলতাফ হোসেন ম-লের বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে। আলতাফ হোসেনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তার পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী আর সন্তানদের কান্না থামাতে পারছে না কেউ। আলতাফ হোসেন ম-ল বিশ্বনাথপুর ম-লপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার ম-লের ছেলে। তিনি এসএসসি পাস করার পর ১৯৯২ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। প্রথমে তিনি সৈয়দপুর সেনানিবাসে যোগদান করেন। পরে একে একে রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেন। ৪ মাস আগে তাকে মালিতে শান্তিরক্ষী মিশনে পাঠানো হয়। পারিবারিক জীবনে আলতাফ হোসেন দুই কন্যা সন্তানের বাবা। তার বড় মেয়ে মীন আরা (মীম) সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী আর ছোট মেয়ে সুমাইয়া একই প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা থেকে জানান, আফ্রিকার মালিতে বিদ্রোহীদের হামলায় নিহত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী ল্যান্স কর্পোরাল জাকিরুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। জাকিরুলের অকাল মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে গেছেন তার বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, দুই শিশুপুত্র ও ভাইবোন। কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও। কেউ কাউকে সান্ত¡না দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। জাকিরুলের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম সফির উদ্দিন। মা’র নাম জোসনা সরকার। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে জাকিরুল সবার ছোট। ২০০১ সালে জাকিরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিয়ে করেন ময়নসিংহের মেয়ে তামান্না সরকারকে। এরই মাঝে তিনি দুই পুত্র সন্তানের বাবা হন। তার বড় ছেলে তায়িসের বয়স ছয় বছর। আর ছোট ছেলে তাজদিকের বয়স মাত্র তিন বছর। জাকিরুল কয়েক বছর আগে সেনাবাহিনীতে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে ল্যান্স কর্পোরাল হন। চলতি বছরের ১৭ মে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে আফ্রিকার মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যান। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে রবিবারই জাকিরুলের মৃত্যুর সংবাদ পান তার স্বজনরা। সোমবার দুপুরে জাকিরুলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাড়া-প্রতিবেশীদের ভিড়। ভিড়ের মাঝে চলছে শোকের মাতম। বাড়ির আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই অঝোরে কাঁদছেন। তাদের সঙ্গে চোখের জল ফেলছেন এলাকাবাসীও। জাকিরুলের মা জোসনা সরকার ও স্ত্রী তামান্না সরকার জাকিরুলের নানা স্মৃতির কথা বলতে বলতে আহাজারি করছেন।
×