ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামনের দিনে আরও কমবে

অভিযানে কমছে চালের দাম

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অভিযানে কমছে চালের দাম

অর্থনৈতিক রিপোার্টার ॥ সরকারের অবৈধভাবে চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও আমদানি বাড়ায় চট্টগ্রামে কমতে শুরু করেছে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া চালের দাম। কেজি প্রতি সব ধরনের চালের দাম কমেছে ৪ থেকে ৫ টাকা করে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে পর্যাপ্ত চাল আমদানি ও ওএমএসের মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে চাল বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ চাল ব্যবসায়ী সমিতির। ঈদ উল আযহার পর থেকেই চট্টগ্রামে চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে চালের দাম। খুচরা বাজারে চালের কেজি ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় চালের বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে রাখতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। গত সপ্তাহে মিয়ানমার ও ভারতীয় বেতি চাল প্রতি বস্তা ১৯০০ থেকে ২০০০ করে বিক্রি হলেও এখন দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে। একইভাবে মিনিকেট, মোটা আতপসহ বিভিন্ন ধরণের চালের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সরকারের বিভিন্ন মনিটরিংয়ের পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অবৈধভাবে চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের অভিযান ও আমদানির পরিমাণ বাড়ায় চালের দাম কমছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। চাল ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি এনামুল হক বলেন, সরকারের মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বেড়েছে আমদানির পরিমাণ। যেসব মাল এতদিন ঢুকতে পারেনি সেগুলো এখন ঢুকছে। তাই এখন বাজারে দাম কমে আসছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পর্যাপ্ত চাল আমদানি ও ওএমএসের মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে চাল বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দরকার বলে মনে করেন চাল ব্যবসায়ী সমিতি। চাল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, প্রচুর চাল আমদানি করে সরকারকে বিভিন্ন গোডাউনে রাখতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে সরকার যে ওএমএস দিচ্ছে সেটাকে নিয়মিত করতে হবে। গত কয়েকদিন নগরীর বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়ে বেশি সময় ধরে চাল মজুত করার কারণে বিপুল পরিমাণ চাল জব্দ করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে, পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার পর কমতে শুরু করেছে খুচরা বাজারেও। সামনের দিনে আরও কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকারিতে যে হারে দাম কমেছে, খুচরা বাজারে সেভাবে কমেনি। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রকার ও মান ভেদে দুই থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। গত তিন-চার দিনে পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কমেছে কেজিপ্রতি প্রায় পাঁচ টাকা, কিন্তু খুচরায় কমেছে মাত্র দুই টাকা। অন্যদিকে মিনিকেট বা চিকন চালের দাম পাইকারিতে প্রায় তিন টাকা কমলেও খুচরায় কমেছে এক টাকা। রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, শান্তিনগর, তালতলা ও মোহাম্মদপুর বাজারেরে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম কমতে শুরু করেছে, সামনের দিনে আরও কমবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য কিছুটা কমেছে। গত তিন-চার দিনে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের এই পার্থক্য তৈরি হয়েছিল। পাইকারি বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৯ টাকায়, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছিল ৬৫-৬৬ টাকায়। তবে রবিবার দাম কমে বিক্রি হয় ৬৩ থেকে ৬৪ টাকায়। নাজির শাইল চাল পাইকারিতে ৬৪-৬৬ টাকায়, খুচরায় বিক্রি হচ্ছিল ৬৬-৭০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১-২ টাকা কমে। রাজধানীর বাবু বাজার ও বাদামতলীতে পাইকারি বাজারে আটাশ চাল খুচরাতে বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়, ঊনত্রিশ চাল ৫৪-৫৬ টাকায়, স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়, মোটা চাল (হাইব্রিড) খুচরা বাজারে ৪৫-৪৬ টাকায়। মিরপুরের মুসলিম বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেন, পাইকারিতে দাম কমেছে, কিন্তু পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য কারণে সেভাবে আমরা দাম কমাতে পারিনি। তবে ক্রেতাদের জন্য এটা ভালো সংবাদ যে দাম কমতে শুরু করেছে। সামনে হয়তো কমে যাবে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা যায়, খুচরা বাজারে শনিবার মাঝারি চালের দাম কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা ও মোটা চাল কেজিপ্রতি দুই টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, খুচরা বাজারে চালের দাম কমতে একটু সময় লাগে। পাইকারিতে কমলেও খুচরায় হুট করে কমবে না। কারণ দাম বাড়ার সময় যেভাবে বাড়ে, কমার সময় সেভাবে কমে না। মিরপুরের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ডেইলি মার্টের সাহাদত হোসেন বলেন, ঈদের পর মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে পাইকারি আড়তদাররা কেজিপ্রতি ৫-৬ টাকা দাম বাড়িয়েছিল। এরপর ধাপে ধাপে আরও দাম বেড়েছে। যার প্রভাবে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম গড়ে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, এখন খুচরা চালেল দাম একটু কমতে শুরু করেছে। তবে সেটা খুব বেশি না। উল্লেখ্য, ঈদের পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে মোটা চালসহ বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। এতে দুর্ভোগ বাড়ে নিম্নআয়ের মানুষের। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে গত রবিবার থেকে দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। এছাড়া মিল মালিকদের সঙ্গে কৃষিমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন। বৈঠকে দাম কমানোর শর্তে ব্যবসায়ীদের সবধরনের সহযোগিতা দেয়া আশ্বাস দেন তারা। ব্যবসায়ীরা দামও কমানোর প্রতিশ্রুুতি দেন। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলার অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত রেখেছে সরকার।
×