ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেরকেলের সামনে চ্যালেঞ্জ- কোয়ালিশন গঠন এবং উগ্র ডানপন্থীদের সামাল দেয়া

চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর

এ্যাঞ্জেলা মেরকেল রবিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো জার্মান চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন। সরকার গঠনের জন্য তাকে এখন কোয়ালিশন সহযোগী যোগাড় করতে হবে। এছাড়া উগ্র ডানপন্থীরা ভাল ফল করায় শক্তিশালী বিরোধী দল সামলাতে হবে তার নতুন সরকারকে। এএফপি ও নিউইয়র্ক টাইমস। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় তেমন কোন উত্তেজনা ছিল না। কিন্তু নির্বাচনের ফল চমক সৃষ্টি করেছে। পপুলিস্টদের উত্থান মেরকেলের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভদের পাশাপাশি মধ্য বামপন্থীদের জন্যও তৈরি করেছে উদ্বেগ। এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে উভয় দলের জন্য এটি সবচেয়ে খারাপ ফল। রবিবারের বিজয়কে তাই দেশটির বহুল প্রচারিত দৈনিক বিল্ড পত্রিকা ‘আতঙ্কজনক বিজয়’ বলে অভিহিত করেছে। ১২ বছর ধরে মেরকেল জার্মানির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিতকতা বজায় রাখার জন্য তিনি এবারও সরকার পরিচালনার সুযোগ পেলেন। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলে দেখা গেছে, মেরকেলের নেতৃত্বাধীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন ও ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মার্টিন শুলজের নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটসরা পেয়েছে ২০.৫ শতাংশ ভোট। দলটি বিরোধী দলের আসনে বসছে। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইসলামবিরোধী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) ১২.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এসেছে। দলটি মেরকেলের অভিবাসী ও শরণার্থী নীতির তীব্র বিরোধী। সাপ্তাহিক পত্রিকা ডার স্পাইগেল মন্তব্য করেছে, মেরকেল নির্বাচনে যতটুকু খারাপ ফল করেছেন সেটি তার পাওনা ছিল। কারণ ডানপন্থীরা তার প্রতি যেসব চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছিল সেগুলো তিনি উপেক্ষা করেছেন। নির্বাচনের ফল নিয়ে উল্লসিত এমফডির আলেক্সান্ডার গাউল্যান্ড মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনব।’ রবিবার রাতে বার্লিনের একটি ক্লাবে আনন্দে উচ্ছ্বসিত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনে যেসব তুর্কী বংশোদ্ভূত কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের আনাতোলিয়ায় (তুরস্কের পুরনো নাম) পাঠিয়ে দেয়া হবে। উগ্র ডানপন্থী ধ্যান ধারণা লালনকারী এএফডিকে ব্রিটেনের ইউকিপ পার্টিও সঙ্গে তুলনা করা হয়। মেরকেল ২০১৫ সালের পর থেকে ১০ লাখের বেশি অভিবাসী জার্মানিতে আসতে দিয়েছেন, এ কারণে এএফডির নেতারা তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দল অবশ্য এএফডির সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। এদিকে কোয়ালিশন গঠন নিয়ে কথা বলার জন্য মেরকেলের সামনে অবশ্য খুব বেশি রাজনৈতিক দল নেই। ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) এক্ষেত্রে তার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র। তবে সিএসইউর নেতা হোর্স্ট সিহোফার মেরকেলের শরণার্থী নীতির তীব্র বিরোধী। এরপর রয়েছে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি) নামে মধ্য বামপন্থী একটি দল। তবে দলটি কোয়ালিশনে না গিয়ে বিরোধী দলে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রবিবার দলীয় কার্যালয়ে নির্বাচনপরবর্তী ভাষণে মেরকেল বলেন, ‘সিডিইউ আরও ভাল ফলের আশা করেছিল। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, আমরা গত কয়েক বছরে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। ফলে কৌশলগত লক্ষ্যগুলোও অর্জন করতে পারিনি আমরা। তারপরও জার্মানিতে আমরাই সবচেয়ে শক্তিশালী দল। নতুন সরকার গঠনের ম্যান্ডেট আমরা জনগণের কাছ থেকে পেয়েছি এবং আমরাই নতুন সরকার গঠন করব।’ তিনি বলেন, একটি ন্যায্য ও মুক্ত দেশের জন্য আমাদের এখন কাজ করে যেতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে, ইইউভুক্ত সব দেশকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের অভিবাসনের কারণ ও অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এবারের নির্বাচনকে মেরকেলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছিল। অভিবাসীদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দেয়ার পর এটিই ছিল প্রথম জাতীয় নির্বাচন। অভিবাসন ইস্যু ঘিরে অভিবাসন ও ইসলামবিরোধী রাজনৈতিক দল এএফডি ব্যাপক প্রচার চালায়। অনেকে এ নির্বাচনকে অভিবাসী ইস্যুতে মেরকেলের জন্য গণভোট বলেও মন্তব্য করেছেন।
×