ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক সেবার পরিসর

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আর্থিক সেবার পরিসর

সুদৃঢ় আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য আর্থিক সেবাবঞ্চিত জনসাধারণকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রসর হলেও এখনও দেশের অধিকাংশ মানুষই ব্যাংকিং ও বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবার বাইরে রয়ে গেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রান্তিক কৃষক, বর্গাচাষী, ক্ষুদে ও নারী উদ্যোক্তারা যারা এতদিন ব্যাংকঋণ পেত না, তারা এখন ব্যাংকঋণ পাচ্ছে। গরিব কৃষক ও হতদরিদ্র মানুষ ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে সরকার প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করছে। এসব হিসাব সচল রাখা এবং তাদের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকা-কে অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০০ কোটি টাকার একটি আবর্তনশীল তহবিলও গঠন করেছে সরকার। ক্ষুদে ও নারী উদ্যোক্তারা এসএমই ঋণ পাচ্ছে। কর্মজীবী পথশিশু ও গার্মেন্টকর্মীরা ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ পেয়েছে। তারপরও আর্থিক সেবার পরিসর কাক্সিক্ষত সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। বুধবার এক জাতীয় সম্মেলনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএম) প্রদত্ত তথ্য বাস্তব পরিস্থিতিই তুলে ধরেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৫ শতাংশ এখনও ব্যাংকিং ও বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবার বাইরে রয়েছে। এদের মধ্যে দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দা ও শিশু শ্রমিকও রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে চাইলে এসব জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনার কোন বিকল্প নেই। সেজন্য সুবিবেচনাপ্রসূত নীতি নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। আইএনএম-এর সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলার একটা উপায় হিসেবে গ্রামীণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. মসিউর রহমান। আমরা মনে করি, এই পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে দেশে গ্রামীণ বীমা খাত শক্তিশালী করা হলে আর্থিক নিরাপত্তার পরিসর আরও বিস্তৃতি লাভ করবে। তাছাড়া আগামীতে দেশের গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্তকরণে সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণই সমীচীন। স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু উপায়ে মূলধারার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আর্থিক সেবাবঞ্চিত সাধারণ মানুষের কাছে সাধ্যের মধ্যে সঠিক আর্থিক সেবা পৌঁছানোর কৌশলগত প্রক্রিয়ার নামই ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তকরণ’ বা ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জাতীয় লক্ষ্যার্জনে দেশের আর্থিক খাতের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সমাজের কৃষক, বর্গাচাষী, ক্ষুদে ও নারী উদ্যোক্তা, পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের মতো উৎপাদনশীল খাতগুলোয় অর্থায়ন বাড়ানোসহ আর্থিক সেবার বাইরে থাকা জনসাধারণকে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তকরণ কর্মসূচী গ্রহণ করে। এই কাজে গতি আনা আবশ্যক। আইএনএম-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহ ঋণ ও সঞ্চয়ের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখনও দেশের অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি। তাদের অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকার সাধারণ মানুষ। তাই গ্রামীণ জনপদের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে ব্যাংকগুলোর অন্তত অর্ধেক শাখা পল্লী অঞ্চল বা গ্রামে খোলার পদক্ষেপ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত। এতে আর্থিক সেবার পরিধি যে আরও বাড়বে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×