ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেরপুরে স্ত্রীর মর্যাদার দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীর ফের অনশন

প্রকাশিত: ০২:৪৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শেরপুরে স্ত্রীর মর্যাদার দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীর ফের অনশন

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরে স্ত্রীর মর্যাদার দাবি আদায়ে প্রেমিক পুলিশের এএসআই আরিফুজ্জামান সোহাগের বাড়িতে ফের অনশন শুরু করেছে শেরপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্স পড়–য়া সেই শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার মেরি (২২)। সে রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দফায় অনশন অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে এএসআই সোহাগের পরিবারের তরফ থেকে এবার সেই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে দেওয়া হয়েছে আত্মহত্যার হুমকির মামলা। সোমবার দুপুরে শেরপুরের সদর আমলী আদালতে এএসআই সোহাগের চাচা মিজানুর রহমান মঞ্জু বাদী হয়ে শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার মেরি, তার মা নাজমা বেগম (৫০) ও আত্মীয় মিলন মিয়ার (৩৫) বিরুদ্ধে ওই মামলাটি দায়ের করলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক আগামী ১৩ নভেম্বর মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার পূর্ব আলিনাপাড়া খালপাড় এলাকার মৃত আনিছুর রহমান দুলালের ছেলে ও পুলিশের এসবি শাখায় কর্মরত এএসআই মোঃ আরিফুজ্জামান সোহাগ (বিপি-৮৮০৭১২৮৭৪৭) ২০১৬ সালের দিকে পার্শ্ববর্তী আন্ধারিয়া নয়াপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম আক্তার মেরির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর ওই শিক্ষার্থীকে টাঙ্গাইলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে এএসআই সোহাগ গোপনে বিয়ে করে। এরপর থেকে গোপনেই চলে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন স্থান থেকে ওই শিক্ষার্থীর বিয়ের প্রস্তাব আসলে সে সোহাগকে তাদের বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করতে বললে এবং স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানালে সে মোবাইলে অস্বীকৃতি জানিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ এসএমএস পাঠায়। সেইসাথে অন্যত্র বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। ওই অবস্থায় ১৫ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষার্থী এএসআই সোহাগের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী’র মর্যাদার দাবি জানালে সোহাগ ও তার পরিবারের লোকজন তা অস্বীকার করে। এরপর থেকে সে ওই বাড়িতে আমরণ অনশন শুরু করে। পরদিন বিকেল পর্যন্ত ওই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সুষ্ঠু সুরাহা না হলেও সদর থানা পুলিশ এএসআই সোহাগের বাড়ি থেকে ওই কলেজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং এএসআই সোহাগের বিরুদ্ধে কোন মামলা না নিয়ে পরদিন তার মার জিম্মায় দিয়ে দেয়। অবশেষে বিয়ের বিশ্বাস জন্মিয়ে প্রতারণামূলকভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও সহায়তার অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী বাদী হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর দঃ বিঃ ৪৯৩/৪৯৬/১০৯/৩৪ ধারায় আদালতে এএসআই সোহাগসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করলে তাদেরকে ১৮ অক্টোবর স্ব-শরীরে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারির আদেশ হয়। এদিকে প্রথম দফায় গোপন বিয়ের কাবিননামা সংগ্রহ করতে না পারলেও এবার সেই কাবিননামা সংগ্রহ করে স্ত্রীর মর্যাদা আদায়ের দাবিতে রবিবার থেকে দু’দিন যাবত দ্বিতীয় দফায় এএসআই আরিফুজ্জামান সোহাগের গ্রামের বাড়িতে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে সেই শিক্ষার্থী। কিন্তু এরপরও সোহাগ বা তার পরিবারের লোকজনের কোন সাড়া না পাওয়ায় সে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। সোমবার বিকেলে সোহাগের বাড়ির বাহিরের বারান্দায় বোরখা পরিহিত বসাবস্থায় দেখা যায় প্রতারিত শিক্ষার্থীকে। ওইসময় তিনি বলেন, আমি রবিবার বিকেলে এ বাড়িতে এসেছি। কিন্তু বাড়ির লোকজন আমাকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। সারা রাত একজন মেয়ে হয়েও রাতের আঁধারে বাইরে বসে অনাহারী রাত কাটিয়েছি। এতেও কোন দুঃখ নেই, যদি সোহাগকে স্বামী হিসেবে পাই এবং তার কাছে স্ত্রীর মর্যাদা পাই। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলে, সোহাগ বিয়ের কাবিন করেই তার স্বর্বস্ব হরন করেছে। সোহাগ আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ নেই। তার সাফ কথা, বেচেঁ থাকলে সে সোহাগের স্ত্রী হিসেবেই থাকবে, নতুবা আত্মহত্যা করবে। তার দাবি আগেরবার কাবিননামা না থাকায় তাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন কাবিননামা সাথে নিয়ে এসেছি। এখন কেন আমাকে মেনে নেওয়া হচ্ছে না ? এ বিষয়ে সোহাগের মা, বোন ও চাচা মঞ্জু বলেন, বিষয়টি যেহেতু আদালতে পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেহেতু তা এখন আর স্থানীয়ভাবে কিছু করার নেই। আদালত যে রায় দেবে, তা মেনে নেবেন তারা। অন্যদিকে কলেজশিক্ষার্থীর সেই হুমকিকে পুজি করে সোমবার সোহাগের পরিবারের পক্ষে আপন চাচা মিজানুর রহমান মঞ্জু বাদী হয়ে সেই শিক্ষার্থী এবং তার মা ও এক আত্মীয়সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার হুমকি ও প্ররোচনার অভিযোগে দঃ বিঃ ৩০৯/১০৯ ধারায় পাল্টা মামলা জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
×