ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট

প্রধানমন্ত্রীর সেফ জোন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল বিএনপি

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর সেফ জোন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ ইস্যুতে দেশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করেছে বিএনপি। এতে ১২ দেশের কূটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন। রবিবার বিকেলে গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘মিয়ানমারে গণহত্যা ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক হয়। বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে বহির্বিশ্বকে পাশে পেতে বাংলাদেশকে শক্তি দেখাতে হবে। আজকে বৈশ্বিক রাজনীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শত কান্নাকাটি করে কিছু হবে না, শক্তি দেখাতে হবে। এ জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধের দরকার নেই, তবে অবশ্যই নিজস্ব ক্ষমতার প্রদর্শন করতে হবে। বৈঠকে রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সেফ জোন’ প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। গোলটেবিল বৈঠকে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চোখ রেখে নিজস্ব শক্তি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে ঢাবি শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, সরকারকে বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুধাবন করে রাষ্ট্রের নিজস্ব শক্তি দেখাতে হবে। এ জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে তা নয়। তবে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বারবার আমার দেশের সীমারেখায় ঢুকে পড়বে আর কিছু বলব না, এটা হতে পারে না। হেলিকপ্টার ভূপাতিত না করলেও গুলি করতে হবে। বোঝাতে হবে আমাদের ক্ষমতা। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এগুলো হলোÑ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেফ জোন প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে দলের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ড. মোশাররফ। ড. মোশাররফ বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাখ্যান করা দুঃখজনক। এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের দরকার। বিএনপি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ। কারণ জিয়াউর রহমান (’৭৮ সালে) ও খালেদা জিয়ার সময়েও (২০০৫ সালে) রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তখন তাদের ফেরত পাঠিয়ে নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই দায়বদ্ধতা থেকে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে ক্ষমতাসীনরা দলীয় রাজনীতি করতে চাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকায় আন্তর্জাতিক মহলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি তারা এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে মানবিক বিপর্যয়ের সমাধান হয়। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে গণহত্যা চালাচ্ছে। গোটা বিশ্ব সোচ্চার হলেও বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে। দেশে ফিরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন খালেদা জিয়া ॥ দুদু স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শীঘ্রই দেশে ফিরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন বলে জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের দাবিতে গণসংস্কৃতি দল নামক একটি সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে দুদু বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হলে সবাইকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশে ফিরে কি নির্দেশনা দেন সে জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দুদু বলেন, দেশ একটি অপশাসনের মুখোমুখি। কোন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। শিশুরা যে খাবার খাবে, সেই খাবারও লুটপাট করছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট দেশের জন্য ভয়াবহ সমস্যা। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা অথবা সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হোক। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এস আল মামুনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহসম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া প্রমুখ।
×