ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট টাইগাররা, তামিম-সৌম্যকে নিয়ে স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট টাইগাররা, তামিম-সৌম্যকে নিয়ে স্বস্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার দীর্ঘ ৯ বছর পর আবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর এই সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। ৩ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে হয়েছে মিশ্র অভিজ্ঞতা। দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া, উইকেট পরিস্থিতি বোঝার জন্য বেশ কার্যকর ছিল এই প্রস্তুতি ম্যাচ। তবে প্রথমদিনেই বাঁ পায়ের মাংসপেশিতে টান লেগে ওপেনার তামিম ইকবালের ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া এবং দ্বিতীয়দিন ফিল্ডিংয়ের সময় আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারের কাঁধে আঘাত পাওয়া নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল মুশফিকুর রহীমরা। সেটা কাটিয়ে এখন স্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ দল। কারণ জাতীয় দলের ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহন দাবি করেছেন দুই ওপেনারকে নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। আর প্রস্তুতি ম্যাচের উভয় ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকানো সাব্বির রহমান দাবি করেছেন প্রস্তুতি যেমন হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট দল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ২ টি২০ ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। পুরো সিরিজ শুরুর আগে একটাই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে সফরকারীরা। তিনদিনের সেই ম্যাচ হয়েছে ড্র। প্রথম ইনিংসে ভাল ব্যাটিং করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংটা তেমন সুবিধার হয়নি। কারণ নিয়মিত দুই ওপেনার তামিম-সৌম্য খেলতে পারেননি দ্বিতীয় ইনিংসে। ইনিংস উদ্বোধন করতে হয়েছে ব্যাকআপ ওপেনার ইমরুল কায়েস ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ওপেনিং করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লিটন কুমার দাসকে দিয়ে। সেই ধাক্কাতেই দ্বিতীয় ইনিংসটা সুখকর হয়নি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সাব্বিরের টানা দ্বিতীয় অর্ধশতকে সম্মানজনক একটি স্কোর পায় বাংলাদেশ। এরচেয়ে বড় কথা দীর্ঘদিনের রানখরা কাটিয়ে ইমরুলও অর্ধশতক হাঁকিয়ে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ সবই ইতিবাচক ঘটনা বাংলাদেশ দলের জন্য। তবে ম্যাচের প্রথমদিনেই সবচেয়ে বড় আঘাতটা ছিল তামিমের মাত্র ৫ রান করেই মাঠ ছাড়া। বাঁ পায়ের মাংসপেশিতে টানা লাগায় আর ম্যাচে দেখা যায়নি তাকে। স্ক্যান রিপোর্টেও টিয়ার ধরা পড়ে এবং গ্রেড ওয়ানের এই ইনজুরি সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের বিশ্রামে সারে। তাই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল তামিমের প্রথম টেস্ট খেলা নিয়ে। অন্যতম এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানকে অবশ্য খেলানোর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বাংলাদেশ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টের আগেই তামিমের সুস্থ হওয়া নিয়ে আশাবাদী ফিজিও চন্দ্রমোহন। স্ক্যান রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘তামিমের মাংশপেশিতে সামান্য টান লেগেছিল। তিনি এখন ভাল আছেন। আশাকরি প্রথম টেস্টে খেলতে পারবেন।’ তামিমকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কাটে শনিবার। একই সময়ে সৌম্যের রিপোর্টও দেখেন চন্দ্রমোহন। সৌম্য শুক্রবার ম্যাচের দ্বিতীয়দিনে চোট পেয়েছিলেন কাঁধে। তার এই আঘাত আরও সাধারণ মানের। কিন্তু ঝুঁকি না নিয়ে বরং তাকে বিশ্রামেই রাখে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। সৌম্যের বিষয়ে চন্দ্রমোহন বলেন, ‘ফিল্ডিং করার সময় কাঁধে ব্যথা পেয়েছিল সৌম্য, তবে তার চোট গুরুতর নয়। প্রথম টেস্টের আগেই ঠিক হয়ে যাবে।’ চন্দ্রমোহনের বক্তব্যে স্বস্তি নেমে এসেছে বাংলাদেশ শিবিরে। এখন প্রথম টেস্টে নামার জন্য বাকি দিনগুলোয় অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া। প্রস্তুতি ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে নিজেদের গুছিয়ে নেয়া ভালভাবে। প্রস্তুতি ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য বিপাকে পড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৯ উইকেটে ২৩৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণার পর ২২৮ রানের ভাল একটা ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল। উভয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা ভাল প্রস্তুতি সেরেছেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে এসেছে ৫ হাফ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে দুই ইনিংসেই ব্যাক টু ব্যাক হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সাব্বির। এছাড়া দীর্ঘদিন উপেক্ষিত মুমিনুল হক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ফিরে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও তিনি এবার অর্ধশতক পেয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভাল ব্যাটিং করেছেন। অধিনায়ক মুশফিক ও ইমরুল পেয়েছেন অর্ধশতক। সবমিলিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে দলের এবং নিজের প্রস্তুতিতে খুশি সাব্বির রহমান। শনিবার প্রস্ততি ম্যাচ শেষে সাব্বির বলেন, ‘তিনদিন আমরা অনুশীলন করেছি। আমার মনে হয় আমরা যথেষ্ট অনুশীলন করেছি। আমাদের প্রস্তুতিও খুব ভাল হয়েছে। ইনশাআল্লাহ প্রথম টেস্টে আমরা ভাল খেলব।’ দল ভাল রান পেলেও কয়েকজন ব্যাটসম্যানের উইকেট বিলিয়ে দেয়া দেখে হয়তো দুশ্চিতা বাড়ছে বাংলাদেশী সমর্থকদের। কারণ দলে ফেরা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তেমন সুবিধা রতে পারেননি উভয় ইনিংসে। এছাড়া লিটন রান পাননি। অবশ্য প্রস্তুতি ম্যাচের ভুলগুলো প্রথম টেস্টে পুনরাবৃত্তি না করার কথাই জানালেন ২৫ বছর বয়সী মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান সাব্বির, ‘উইকেট সম্পর্কে যেমন ধারণা নিয়ে এসেছিলাম তারচেয়ে ভাল উইকেট ছিল। কয়েকজন ব্যাটসম্যান খুব ভাল খেলেছে, কয়েকজন হয়তো তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেছে। আশা করছি প্রথম টেস্টে এই ভুলগুলো হবে না।’ আবহাওয়াটাও বেশ স্বস্তিদায়কই মনে হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে। সাব্বির জানিয়েছেন প্রায় বাংলাদেশের মতোই তাপমাত্রা, কিছুটা কম। তবে বাংলাদেশের বোলারদের বড় রকমের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসবান্ধব দ্রুতগতির উইকেটে অবশ্য দলের পেসারদের নিয়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। কারণ দারুণ মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন অন্যতম নির্ভরতা মুস্তাফিজুর রহমান। ভাল বোলিং করে দুই উইকেট শিকার করেছেন অভিজ্ঞ শফিউল ইসলাম। এখন মূল লড়াইয়ে নামার আগে মাঝের তিনটাদিন আরও ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ ক্রিকেটারদের।
×