ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপার ১০৮ সরকারী খাল বেদখল

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গলাচিপার ১০৮ সরকারী খাল বেদখল

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ গলাচিপায় একের পর এক সরকারী খাল বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ১০৮ সরকারী খাল বেদখলের তালিকায় উঠেছে। বেদখল খালের মাঝে অন্তত ২৯টি খাল একশ্রেণীর প্রভাবশালী কাগজপত্রে খাস কৃষিজমি দেখিয়ে ভূমি দফতর থেকে বন্দোবস্ত নিয়েছে। বন্দোবস্ত নেয়া সরকারী খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আরেকশ্রেণীর প্রভাবশালী অপর সরকারী খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে পুকুর-ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করছে। কেউ কেউ আবার কয়েকটি খালে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে আটকিয়ে মাছ চাষ করছে। একের পর এক সরকারী খাল বেদখল হয়ে পড়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষাবাদ। খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় প্রতিবছর অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। আবার কৃষকের যখন পানির প্রয়োজন পড়ছে তখন কৃষক পাচ্ছে না পানি। প্রভাবশালীরা পানি আটকে রাখছে। গলাচিপা ভূমি অফিস ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার মোট ১০৮ সরকারী খাল বেদখল হয়ে গেছে। এতে উপজেলার ১১৪ বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বেদখল খালের অধিকাংশ ২০০৮ সাল পর্যন্ত মাছ চাষের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালের পর থেকে খালগুলো ইজারা দেয়া হয়নি । ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইজারা বন্ধ করার পর থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা নানা কৌশলে খাল নিজেদের দখলে নিয়ে কেউ ভরাট করছে। আবার অনেকে বাঁধ দিয়ে পুকুর ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করছে। সরেজমিনে কয়েকটি খাল ঘুরে কৃষকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। আমখোলা ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া খাল বন্দোবস্ত নিয়ে ভরাট করে চলছে ধানচাষ। চিকনিকান্দী ইউনিয়নের বাসাবাড়িয়া পুলের খাল প্রভাবশালীরা রেকর্ডীয় জমি দাবি করে ভরাট করে নিয়েছে। পানখালী খালের ওপর বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ। সুতাবাড়িয়া খালেও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ চলছে। বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া খালেও একই কায়দায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। একই ইউনিয়নের চরগুয়াবাড়িয়া ও রনুয়ার খালে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানানো হয়েছে। কলাগাছিয়া ইউনিয়নের আমির মুন্সির বাড়ি সংলগ্ন খালে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, গোলখালী ইউনিয়নের ডাংরীর খাল কৃষি খাসজমি দেখিয়ে জামাল চৌকিদার নামে এক ব্যক্তি বন্দোবস্ত নিয়ে ভরাট করছেন। তবে জামাল চৌকিদার দাবি করেন, তিনি খাল নয়, কৃষিজমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, খালটি ভরাট করার ফলে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে আমন চাষ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। সরেজমিনে আরও অনেকগুলো সরকারী খাল এভাবে বেদখল হয়ে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। সরকারী খাল বেদখলের বিষয়ে স্থানীয় এমপি আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন জানান, খালগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের দুর্ভোগ চরম আকার নিয়েছে। স্থানীয় ভূমি দফতরের দুর্নীতিবাজরা বিভিন্ন সময় অত্যন্ত গোপনে খাল খাস জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়ায় এখন আইনগত নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বেদখল খালগুলো উদ্ধারের জন্য উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির বেশ কয়েকটি সভায় এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তায় খালগুলো উদ্ধারের জন্য কৃষি বিভাগকে বলা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, উপজেলায় ১০৮ টি সরকারী খাল বেদখল হয়ে পড়েছে। এতে ১১৪টি বিলের ১০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বেদখল খালগুলো উদ্ধার করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে খুব দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
×