ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের  সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে যে কোন সময়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। আলোচনার টেবিলে বসতে মিয়ানমারের দেয়া প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে সরকার। তবে নিউইয়র্কে মিয়ানমারের এই প্রস্তাবের আগেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। মিয়ানমারের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ীই সমস্যা সমাধানে সামনে এগুতে চায় সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠকে মিয়ানমার এ প্রস্তাব দেয়। বৈঠকে মিয়ানমারের উপদেষ্টা বলেছেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বসতে চায়। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরই আলোচনায় বসার জন্য মিয়ানমারকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে উভয়পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উভয়পক্ষের আলোচনার মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। কেননা এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দুই লাখ ৩৬ হাজার শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার। এছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে কোন ধরনের সংঘাতেও যেতে চাইছে না বাংলাদেশ। এসব বিষয় মাথায় রেখে আলোচনার দিকেই আগ্রহী ঢাকা। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ীই আলোচনায় বসতে রাজি বাংলাদেশ। মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাখাইনে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন তার ওপর ভিত্তি করে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তাদের আজ সোমবার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। ঢাকায় ফিরে আসার পর মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। আগামী মাসের মধ্যেই বৈঠকে বসতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের ঢাকায় আসার জন্য আগেই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ও চলমান সেনা অভিযানের পর বারবার দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তা পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দেশটির সরকারকে সরাসরি জানান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ সুফিউর রহমান গত ১১ সেপ্টেম্বর দেশটির রাজধানী নেপিতোয় স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির কার্যালয়ে যান। দেশটির স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উ কিয়াও থিনের সঙ্গে সাক্ষাত করে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। তারপরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সে সময় তারা বাংলাদেশের প্রস্তাবে রাজিও হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিকভাবেও চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনের বিভিন্ন বৈঠকে অনেকেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে জোর দিয়েছেন। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) বলছে, সহিংসতার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। তবে বেসরকারী হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। এখনও প্রতিদিনই রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমার সীমান্তে হামলার পর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশ করেছেন। এর আগে গত বছর ৯ অক্টোবর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও নির্যাতনে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশ দীর্ঘ তিন দশক ধরে ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমেই এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। ‘মুখোশধারীরা হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে, জ্বালিয়ে দেয় সবকিছু’
×