ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাই কার্যকর উপায় ॥ জরিপের ফল

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নয়

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নয়

যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আগ বাড়িয়ে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহাণের বিরোধিতা করেন। পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচীর মোকাবেলায় সামরিক বাহিনীর ওপর আস্থা রয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ মর্কিনীর। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর তার দেশের জনগণের আস্থা তুলনামূলকভাবে কম। ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি নিউজের করা সর্বশেষ এক জনমত জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইট। উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচী থেকে বিরত রাখতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকেই কার্যকর উপায় মনে করেন তিন-চতুর্থাংশ মার্কিনী। কেবল এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দেশটিকে আরও বেশি বৈদেশিক সাহায্য ও প্রণোদনামূলক সহায়তা প্রদান করা। ৩৭ শতাংশ মার্কিনী মনে করেন উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ট্রাম্প সঠিক নীতি অনুসরণ করছেন। অন্যদিকে ৪২ শতাংশ মনে করেন তাদের কমান্ডার ইন চীফ (প্রেসিডেন্ট) সঠিক নীতি অনুসরণ করছেন না। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ওপর আস্থা রাখেন আমেরিকার ৭২ শতাংশ জনগণ। কিম জং উন দায়িত্বশীলের মতো আচরণ করতে পারেন, এ প্রত্যাশা মাত্র ৮ শতাংশ মার্কিনীর। ৮৯ শতাংশই ঠিক এর উল্টোটা মনে করেন। এ জরিপে ট্রাম্পের সামগ্রিক যে ভাবমূর্তিটি উঠে এসেছে তা মূলত নেতিবাচক। তার নেতৃত্বকে সমর্থন করেন ৩৯ শতাংশ মার্কিনী, সমর্থন করেন না ৫৭ শতাংশ মার্কিনী। তবে দুটো হারিকেনের আঘাত তার প্রশাসন যেভাবে সামলেছে উভয় জরিপে সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিনী তাকে ইতিবাচক অভিহিত করেছেন। তবে তার উত্তর কোরিয়া নীতি নিয়ে তার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না জনগণ। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্প যেভাবে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়েছেন অনেকেই তাকে ভালোভাবে নেয়নি। কিম জং উনের নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়া অস্ত্র কর্মসূচীতে যথেষ্ট এগিয়ে গেছে। উন ব্যক্তিগতভাবে এ কর্মসূচী দেখাশোনা করছেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখানো হয় তিনি এসব কর্মসূচী পরিদর্শন করছেন অথবা পরীক্ষার বিষয়ে তদারকি করছেন। দুই সপ্তাহ আগে উত্তর কোরিয়া জাপানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। ওই পরীক্ষার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবেকে ফোনে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পিয়ংইয়ং এর আগে ছয় দফা পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে। সর্বশেষ পরীক্ষাটি করেছে চলতি মাসের ৩ তরিখ। এটি সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্র ছিল। পিয়ংইয়ং একে হাউড্রোজেন বোমার পরীক্ষা বলে দাবি করেছে। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুমকি ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প পিয়ংইয়ংয়ের নেতাকে রকেট মানব বলার পর অনিবার্যভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড তাদের রকেটের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হবে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে একথা বলেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো। এতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী নিয়ে পক্ষ দুটির মধ্যে চলমান উত্তপ্ত বাদানুবাদ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণ পরিষদে রি-র ভাষণের কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর বি-১বি ল্যান্সার বোমার বিমান ও যুদ্ধবিমান উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের আন্তর্জাতিক আকাশসীমা দিয়ে উড়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রা¤েপর হাতে যে অনেক সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে, তা দেখানোর জন্যই এই শক্তি প্রদর্শন বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। এক সপ্তাহ ধরে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনাকে কেন্দ্র করেই রি তার বক্তব্য পেশ করেন। ওই সপ্তাহজুড়ে ট্রা¤প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন পর¯পরকে অপমান করে কথাবার্তা বলেন। শুক্রবার ট্রা¤প কিমকে পাগল বলেন, পরদিন শনিবার কিম ট্রা¤পকে যুক্তরাষ্ট্রের বিকারগ্রস্ত বৃদ্ধ বলে অভিহিত করেন। রিয়ের ভাষণেও এই কাঁদা ছোড়াছুড়ি অব্যাহত থাকে। ভাষণে রি ট্রা¤পকে ক্ষমতাগর্বের আত্মপ্রাসাদে ভোগা বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি যিনি জাতিসংঘকেও অপরাধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে চাচ্ছেন বলে অভিযুক্ত করেন। রি বলেন, ট্রা¤প নিজেই আত্মঘাতী মিশনে আছেন। এর আগে কিম আত্মঘাতী মিশনে আছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রা¤প। আরও বলেন, ‘ প্রেসিডেন্ট অমঙ্গল যুক্তরাষ্ট্রের আসনে বসে আছেন।’ বিশ্ব নেতাদের বার্ষিক ওই অধিবেশেনে রি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সদরদফতর বা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কোন ধরনের সামরিক হামলার ইঙ্গিত প্রদর্শন করলে পিয়ংইয়ং নিজেকে রক্ষার জন্য প্রস্তুত আছে।‘চূড়ান্তভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়া থেকে আমরা এখন মাত্র কয়েক পদক্ষেপ দূরে আছি।’ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের পথে নিষেধাজ্ঞা কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে দাবি করেন তিনি। উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তির ভারসাম্যের লক্ষ্যে পৌঁছাবেই বলে প্রত্যয় জানান রি।
×