ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফজলুল হক মাস্টার

খন্ডিত চিন্তা-চেতনাও উগ্রতাবাদ সৃষ্টি করতে পারে

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

খন্ডিত চিন্তা-চেতনাও উগ্রতাবাদ সৃষ্টি করতে পারে

আধিপত্যবাদ খন্ডিত চিন্তার প্রকাশ। কিন্তু এটা চলে আসছে যুগে যুগে। আইএস এখন মাফিয়ার ভূমিকায়। আদিকাল আর সমকাল উভয় সময়ই উগ্রবাদীদের তীব্রতা দৃশ্যমান যোগ্য। ইরাকে ছেষট্টি জন মানুষ হত্যার পর আমেরিকা দাবি করেছিল মানুষগুলো তাদের মিশাইলে নয় বরং জনতা হত্যা হয়েছে ইরাকের মিশাইলে। জঙ্গীপনার বর্বরতার বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আউং সান সুচি বলছেন, তার দেশে জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি। বলি, ক্ষণস্থায়ী রাষ্ট্রীয় প্রেম কখনও দীর্ঘ মেয়াদী হয় না এবং এটা রাষ্ট্রের জন্যে, জনগণের জন্যে কুফল বয়ে আনে। স্বপ্ন ঝুলিয়ে এবং জনগণের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চান তাদের পরিণতি কখনোই আলোকিত ইতিহাসের মুখ দেখে না। সংস্কারকে জীবন্তরূপ দিয়ে যারা জনগণের প্রয়োজনে রূপরেখা প্রণয়ন করেন তারাই নন্দিত হয়। বলা যায়, ডিজিটাল বাংলার রূপকল্প এঁকে শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রের কল্যাণে এক অনন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর সুফলটা এখন ঘরে ঘরে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের কানে কানে পৌঁছে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পারবে না। ওরা মিথ্যা আশ^াস দিচ্ছে। এখন বিএনপি-জামায়াতও ডিজিটালের সুবিধা ভোগ করছে। বিশ^ায়নের এ যুগে শ্রদ্ধার বিস্তৃত ক্ষেত্র রয়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে মুসলমানদের অত্যাচার-নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আবার তাদের অন্যেরা আশ্রয়ও দিচ্ছে। মানুষের পরিচয় তারা মানুষ। মানুষের যেখানে অবস্থান আছে সেখানেই মানুষ যাবে এবং শান্তি- স্বস্তি বোধ করবে। প্রকৃতির এই নিয়মের ওপর যারা আঘাত করে তারাই খ-িত চিন্তা লালন করে থাকে। রাষ্ট্র কারোর একার নয়। সরকার রাষ্ট্রের সকল শাখার, সকল ধর্ম পেশার, সকল শ্রেণী চরিত্রের লোকদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত আর সহনশীল আচরণ ব্যতিরেকে সকল মানুষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা সহজ হয় না। বৈষম্য, নির্যাতন, অসহযোগিতা কেউ মেনে নেয় না। মেনে নেয় না অনাচার। তাছাড়া স্বাধীনতা-উত্তর দেশে পঁচাত্তরের পর উগ্র সাম্প্রদায়িকদের টেনে আনা হয়েছে ক্ষমতা দখলের মোহে। বিশেষ করে কোন কোন কওমী মাদ্রাসায় এখনও সহনশীল রাষ্ট্র পরিচালনার পথে তীব্র কাঁটার মতো। কেননা এসব প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে গণতান্ত্রিকমনা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও মানসিকতা সৃষ্টি করা হয়। আবার জঙ্গীদের প্রশিক্ষণও চলে এসব কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানে। সাম্প্রদায়িক অপদেবতারা বসে নেই। দখলী মানসিককতায় রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে যেখানে তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকদের চলার পথকে সুগম করে দিয়ে তাদের মেধাকেই তাঁবেদার তুল্য রূপে গড়ে তুলেছে। আমরা দেখলাম সাঈদীর নিয়ন্ত্রণে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং নিজামীর স্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরকম লাখ লাখ কোচিং সেন্টার আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে জামায়াত রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে জায়গা করে নিয়েছে। যা রাষ্ট্রের জন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। উগ্রবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীলরা বিনে সুতায় মালা গাঁথা একঝাঁক রাষ্ট্র দখলী রাজনীতিবিদের খেলায় অনেক দূর তারা এগিয়ে আছে। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা ভোগ করছে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়েছে। এর মাঝে একজন গণতান্ত্রিকমনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এগিয়ে চলা অতটা কন্টকমুক্ত নয়। এখানে হেফাজতীদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে মদদ দেয়া হয় প্রকাশ্যে। এখানে নিকট অতীতে তালেবানী সেøাগান হয়েছে এবং আইএসের পোশাকে গুলশানের রেস্তরাঁয় মানুষ হত্যা করা হয়েছে। একের পর এক জঙ্গীরা আস্তানা গড়ে তুলছে। সাধারণ মানুষ যারা গণতন্ত্র চায়, যারা গণতন্ত্র প্রিয় এবং সুধী বুদ্ধিজীবী যারা গণতন্ত্র চায় তারা গুলশানের রেস্তরাঁয় ঘটে যাওয়া ঘৃণ্য ঘটনার বিষয়ে এক হয়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলেনি। শোলাকিয়ায় ঈদগাহ মাঠে জঙ্গীরা আক্রমণ করলেও সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা ধর্মপ্রাণ মানুষেরাও এক হয়ে কোন প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেনি। হাইকোর্ট চত্ব¡র থেকে থেমিসের মূর্তি সরানো হলো অনেকেই বলতে শুরু করল সরকার হেফাজতীদের তোয়াজ করছে। মুফতি হান্নানের ফাঁসিকে ঘিরে চট্টগ্রামসহ রাজধানীতে জঙ্গীরা আস্তানা গড়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করল। এরকম অপবাস্তবতার কারণ উপলব্ধি করেই সরকার হেফাজতী নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল, এটাকেও অনেকে মন্দার্থে প্রচার করেছে। কিন্তু কওমী মাদ্রাসায় জঙ্গীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, এলাকার সাধারণ এবং অসাধারণ ব্যক্তিবর্গ কখনোই বিষয়টি আমলে নেয় না। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির সময়গুলোতে জঙ্গীরা কোন না কোনভাবে মানুষ হত্যা করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হরতাল অবরোধের দিনগুলোতে প্রকাশ্যে মুখোশ পরে জামায়াত-শিবিররা আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছিল এবং একটা নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি করে মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় অকার্যকরের ফন্দি এঁটেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে মূলত সরকারের দৃঢ়তা এবং কৌশলী ভূমিকার জন্যে। রাষ্ট্রে কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা কম না। এসব রাষ্ট্রের অংশ। তাদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব না। আবার তারা বর্তমান অবস্থানে উগ্রতার যা সৃষ্টি করছে সেটার নিরসনও রাষ্ট্রকেই করতে হবে অর্থাৎ রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজটি সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই করতে হবে। সে জন্যে মাঝে মাঝে কৌশলী ভূমিকায় উগ্রবাদীদের সঙ্গেও বসতে হয়। ৫ মে হেফাজতীদের শাপলা চত্ব¡র থেকে সরাতে শুধু বন্দুক নয়, সেদিনও হেফাজতী নেতার সঙ্গে বসতে হয়েছিল সরকার প্রতিনিধিদের। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনকালে যখন আমরা একেবারেই সমৃদ্ধির শিখড়ে তখন অনেকের মুখে খই ফুটছে গণতন্ত্র গেল গেল বলে। আদতে স্বাধীনতা-উত্তর দেশে পঁচাত্তরের পর রাজনীতির ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ভোগের, তাই রাজনীতির স্রোতে মন্দ-ছন্দ লোকেরা ঢুকে পড়েছে যা কল্যাণময় রাষ্ট্রের পথে নির্ঘন্টক বাধার কারণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতা বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দূরে রেখেছিল কিন্তু বিএনপি জনমনের স্পন্দনকে মূল্যায়ন না করে দুর্নীতিবাজদের মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এসব আমরা ভুলে গেলে রাষ্ট্র আবারও গর্তে ঢুকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে আদিপত্যবাদ বিস্তারের মানসে জঙ্গীদের ব্যবহার করে খালেদা জিয়ার সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার যে হীন মানসিকতা প্রদর্শন করেছিল তা দৃশ্যমান হবার পরেও আমরা কেন বুঝতে পারছি না গণতন্ত্রের জন্যে প্রগতিবাদীদের শাসন খুবই জরুরী?
×