ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্যামল রায়

তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্কট মোচন জরুরী

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্কট মোচন জরুরী

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় তথা রফতানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাক শিল্পের ওভেন পণ্যে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পুরো রফতানি চিত্রে। এর কারণ হিসেবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দুই ধরনের প্রভাবেই পোশাকসহ সার্বিক রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো বড় বাজারগুলোর চাহিদার ঘাটতি যেমন এর কারণ, তেমনি ইইউ এর বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়াও এর জন্য দায়ী। ‘এ কথা সত্য, দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছে। নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম চলছে এ খাত ঘিরে, কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তাল মেলাতে না পেরে। রফতানি আয়ে এর প্রভাব পড়ে থাকতে পারে। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া এবং পণ্য আমদানিকারক দেশগুলোর দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থাও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে এ খাতে রফতানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধির হিসাবে যা মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে এর আগে মাত্র একবারই ২০০১-২০০২ অর্থবছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তৈরি পোশাক খাতের রেকর্ড নিম্ন প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে পণ্যের গড় মূল্য হ্রাস, পোশাক কারখানাগুলোয় চলমান অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম, অর্থনৈতিক মন্দাভাব, আমদানিকারক দেশগুলোয় চাহিদার কমতি, ইউরোর অবমূল্যায়ন ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিকে হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। রফতানি আয়ের সঙ্গে দেশের অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ধারাবাহিকভাবে রফতানি আয় কমে এলে নতুন সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এমনিতেই আশানুরূপ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে না সরকার, কমছে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধিও। এমন অবস্থায় একমাত্র আশাজাগানিয়া ক্ষেত্র ছিল রফতানি, সেখানেও ছন্দপতন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বেসরকারী খাতের সঙ্গে আলোচনায় বসা প্রয়োজন সরকারের। গত কয়েক বছর ধরে বিজিএমইএ নেতারা মনে করছেন- ২০২১ সালের মধ্যে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করবে বাংলাদেশ। সেখানে এখন বিজিএমইএ নেতারা হতাশায় ভুগছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম আট মাসে তৈরি পোশাক খাত রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে সেখানে পোশাক খাতে রফতানির প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ধরা হয়। কেবল ফেব্রুয়ারিতেই ৬ শতাংশ কমে গেছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিজেএমইএ সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেছেন, এই পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া ও প্রত্যাশা অনুযায়ী চীনের সাবেক ক্রেতাদের দেশে আনতে না পারা। ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান, ডলারের বিপরীতে ইউরোর দুর্বল হওয়া এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যর্থ হয়ে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়া দায়ী। বিদ্যমান পরিস্থিতি এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে আসার বাণী শোনাতে পারে না গবেষকরাও। এদিকে চলতি অর্থ বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের মনে যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল তা কিছুটা দূরীভূত হয়েছে। কারণ স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, উৎসে কর শিথিল করা ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ভর্তুকি প্রদান তবে চট্টগ্রাম বন্দরের দুর্নীতিবাজ আমলাদের গাফিলতির কারণে সঠিক সময়ে পণ্য রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, গত সাড়ে তিন দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত চারটি বড় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে। দুর্যোগ আর ঝুঁকির মধ্য দিয়েই খাতটি সমৃদ্ধি লাভ করেছে। তিনি মনে করেন, ঝুঁকির মধ্যে তৈরি পোশাক খাত আরও বাড়বে। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া শিল্প ব্যবসার বিকাশের সুযোগ খুব কম। জাতীয় সমৃদ্ধির বিবেচনা থেকেই সরকার নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও তার কোন ব্যতিক্রম হওয়ার নয়। অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাত রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
×