ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মো ইউসুফ জামিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ক্যাম্পাসে চড়–ইভাতি

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ক্যাম্পাসে চড়–ইভাতি

ভাত রান্নার জন্য বালু, শাক রান্নার জন্যে ঘাস, ফুল, গাছের পাতা এবং গরুর মাংস রান্নার জন্যে পাথর; সব মাঠ বন ঘুরে কাঁঠাল পাতার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসলাম। আজ বড় বোনের হাতের রান্নায় ভুঁড়ি ভোজ হবে। বিশ টাকার হরেক রকমের ছোট ছোট পাতিলে মাটির চুলায় রান্না হচ্ছে। বাতাসে চুড়ুইভাতির রান্নার কাল্পনিক গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় খিদে দ্বিগুণ হয়ে গেল। দুই মিনিটের মধ্যে গাপুসগুপুস করে সব খেয়ে বৌছি, ফুল টুক্কা, কানামাছিসহ আরও বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠলাম। মনে পড়ছিল বড় বোনের সঙ্গে কাটানো ছোট্ট বেলার সেই দিনগুলোর কথা। শৈশবের সেই রোমাঞ্চকর স্মৃতি কথা মনে পড়ে গেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত বাস্তব চড়ুইভাতির মধ্যে দিয়ে। সকাল নয়টায় একে একে সবাই উপস্থিত হলাম শিক্ষক ক্লাবে। যার উত্তরে নজরকারা ফুলের বাগান, দক্ষিণে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, পূর্বে সুবিশাল খেলার মাঠ আর পশ্চিমে টেনিস মাঠ। লাল ইটের তৈরি ক্লাবের চারপাশ ঘিরে রয়েছে সবুজ বৃক্ষ। সকালের মিষ্টি রোদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বইছে দক্ষিণা হওয়া। জাকিয়া, শাহেদ, শিল্পা, টুকু, হুমায়ুন, তমা, সুবর্ণা, লুম্বিনীদের হই-হুল্লোড়ে সরগম হয়ে উঠল পুরো এলাকা। বিভাগীয় সভাপতি শফিক স্যার, কালাম স্যার, আদিল স্যার, হালিমা ম্যাম, সাবকাত ম্যাম, দিপা ম্যাম এবং হিমু ম্যামের উপস্থিতিতে আমাদের আনন্দের মাত্র দ্বিগুণ হয়ে গেল। সিলভিয়া, বিজয়া, নিধি, রুপা, রাপ্তিদের ছিল বাহারী সাজ-সজ্জা। জয়ন্ত, অর্ক, হানিফ, মুনতাছিরদের কল্যাণে সকালের নাস্তা সবার কাছে পৌঁছে গেল। এরপর মনি, তানভীরের ঘোষণার মধ্য দিয়ে একে একে শুরু হতে লাগল ছেলেদের সুঁই সুতা দৌড়, মোরগ লড়াই এবং মেয়েদের বি¯ু‹ট ও টমেটো দৌড় প্রতিযোগিতা। এদিকে প্রতিযোগিতা পরিচালনা, নিয়ম কানুন এবং বিজয়ী নির্বাচনের গুরু দায়িত্ব সুদক্ষ হাতে পালনে ব্যস্ত জ্যোতি, হামিম, তাওহীদরা। এরই মাঝে রাহাত ভাই, হ্রিদি আপু, স্বর্ণা আপু, নোমান ভাইরা সুন্দর মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী রাখতে ভুল করেনি। প্রতিযোগিতা শেষে নাঈমা, মোহনা বউ দ্বয়কে সঙ্গে নিয়ে তুমুল ‘বৌছি’ লড়াইয়ে নেমেছে রউফ, জয়, অনিক, সিয়ামরা। এদিকে ভুঁড়ি ভোজনে কোরমা, পোলাও, ফিন্নি, পানীয় আয়োজনে কিছুই যেন কমতি ছিল না। অর্নব, সানদের দিক নির্দেশনায় সবার কাছে খাবার পৌঁছে গেল। পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শাওনী, আঁখি, রবির অজানা প্রতিভা নতুন রূপে উন্মোচিত হলো। ব্যথিত কণ্ঠের গানে মিজান স্যারের মনের আকুতি শুনে অতি দ্রুত কবুলেরর বন্ধনে আবদ্ধ হবার উদার্ত আহবান জানায় বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থী। বিকেলে আবারও ম্যামদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেসে গিলেন মিজান স্যার। গুটি গুটি পায়ে শত চেষ্টা করেও ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ খেলায় নিজের শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। পরবর্তী আর্কষণ র‌্যাফেল ড্র এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ। দেখতে দেখতে শেষ বিকালের রোদ জানান দিচ্ছিল, এবার চড়ুইভাতির ইতি টানার পালা। উল্লাস আর উচ্ছ্বাসে ভরা দিন শেষে প্রাপ্তি আমৃত্যু স্মৃতি।
×