ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ উনিশের দ্রোহে যৌবনের গান

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ উনিশের দ্রোহে যৌবনের গান

অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বীর বাঙালী। রাইফেলের ডগায় বুক ঠেকিয়ে পাকিস্তানী শোষণ আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তুলতে পিছপা হয়নি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। নয় মাসের দীর্ঘ জীবনযুদ্ধের পর ছিনিয়ে এনেছিল তারা বাঙালীর স্বাধীনতা। রক্তের স্রোত ধারায় ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, অস্ত্রের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়ে চালিত বাঙালীর এই জীবনযুদ্ধে সুযোগ সন্ধানী হয়ে উঠেছিল কিছু রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী। তাদের ছত্রছায়ায় পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী লেলিয়ে পড়ে মুক্তিকামী বাঙালীদের ওপর। নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে তারা পরবর্তীতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও হত্যা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এদেশে বেড়ে ওঠা রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের নৃশংসতা ও ভয়াবহতা তুলে ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠন ‘দিক থিয়েটার’ মঞ্চস্থ করেছে প্রখ্যাত নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুনের রচিত নাটক ‘বিবিসাব’। নাটকের মূল চরিত্র হচ্ছে রাজাকারদের সংগঠন‘ শান্তি কমিটি’র প্রধান বশির মোল্লা কর্তৃক অত্যাচারিত পুরান ঢাকার এক প্রতিবাদী নারী ‘মইরাম বিবি’। যে যুদ্ধে হারিয়েছে তার দুই যুবক ছেলে আলা ও বোলাকে। সন্তানদের মুক্তি বাহিনীতে পাঠানোর অপরাধে তার স্বামী জমিরকেও নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার বশির মোল্লা। দিক থিয়েটারের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে দুই দিনব্যাপী আয়োজন হাতে নিয়েছিল সংগঠনটি। ১৭ আগস্ট ছিল দিক থিয়েটারের ‘বিবিসাব’ নাটকের ৭ম প্রযোজনা ও ষষ্ঠ প্রদর্শনী। নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন মোতাহের হোসেন সোহেল এবং পুনঃনির্দেশনায় ছিলেন জয়ন্ত জয়। দিক থিয়েটারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত জয় বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ভাগ করি ’৭১-এর আগের ও পরের দুই হিসেবে, কিন্তু আরও একটা হিসাব বাকি থেকে যায়। সেটা ’৭৫-এ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের হিসেব। আমরা সবাই শুধু মুখেই বলি আগস্ট শোকের মাস, কিন্তু সেই নৃশংসতার গভীরতা ও প্রভাব ঠিক কতটুকু ছিল, তারই একটি চিত্র দেখতে পাওয়া যাবে ‘বিবিসাব’ নাটকে। পুরান ঢাকার এক সাধারণ মহিলার মুক্তিযুদ্ধে মহান আত্মত্যাগ ও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম নাটকটির মূল উপজীব্য। দুই দিনব্যাপী আয়োজনের দ্বিতীয় দিন ১৮ আগস্ট দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল উন্মুক্ত চিত্র প্রদর্শনী, যেখানে সংগঠনের বিভিন্ন প্রদর্শিত নাটকের স্থিরচিত্রের উপস্থাপন করা হয়। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়বোধে উপস্থাপিত স্থিরচিত্রের সঙ্গে একটি বিশেষ অংশ জুড়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এছাড়া কারাগারে বসে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা আত্মজীবনীর মুদ্রিত রূপ ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের আলোকে ‘কারাগারের রোজনামচা : পাঠ ও পাঠানুভূতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সংগঠনের নিজস্ব পরিবেশনা ছাড়াও ক্যাম্পাসের আবৃত্তি বিষয়ক সংগঠন ‘মাভৈ: আবৃত্তি সংসদ’, গানের দল’ ‘বাংলা ৭০, সিলেটের নাট্য সংগঠন ‘নগরনাট’ নিজেরদের পরিবেশনা নিয়ে অংশগ্রহণ করে। সংগঠনের সাবেক সভাপতি তনু দীপ বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৮ই আগস্ট যাত্রা শুরু করেছিল দিক নাট্য সংঘ। সাম্যের গান গেয়ে চলা দিক পা রেখেছে উনিশ বছরে। ১৮ বছরেই নাকি পূর্ণতা আসে যৌবনের। তাই এই উনিশে দিক এসেছে দ্রোহের মন্ত্রকে সামনে নিয়ে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সবসময়েই থাকে সুযোগের অপেক্ষায়, শোককে শক্তিতে পরিণত করতে ১৯ যৌবনা দিক তাই সাম্যের আর দ্রোহের সংলাপ নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বলেন, তনু দীপ।
×