ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেরেসা মের প্রস্তাব

চলতি শর্তে দু’বছর ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাই

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চলতি শর্তে দু’বছর ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাই

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন, ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিদ্যমান শর্ত অনুযায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার লক্ষ্যে প্রায় দুই বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার বিধান রাখা যেতে পারে। খবর বিবিসি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় অভিবাসীরা ব্রিটেনে বসবাস করাসহ অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন কাজকর্মে নিয়োজিত হতে পারবেÑ তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, শর্তানুযায়ী ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে প্রতিবছর নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ জমা দেবে। টেরেসা মে ইতালি সফরকালে তার এক বক্তৃতায় এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই সঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, তার এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ব্রেক্সিট আলোচনার অচলাবস্থা কেটে যাবে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রেক্সিট বিষয়ক প্রধান মধ্যস্থতাকারী মাইকেল বার্ণিয়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতাকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক বলে বর্ণনা করেন। টেরেসা মে তার প্রস্তাবে ইইউ জোটের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি সম্পাদনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার ও বন্ধুতে পরিণত হবে। বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে টেরেসা বলেন, বর্তমান কাঠামোর বাইরে গিয়ে উভয়পক্ষ এ খাতে আরও সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন ঘটাতে পারবে। তবে বর্তমানে যে সব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়নিÑ ব্রেক্সিটের পরও সেসব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রয়োজন হবে না। উল্লেখ্য, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। এর পরও দু’বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের নানা ধরনের সংযোগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় থাকবে। এই দু’বছরে ব্রিটেন ইইউ জোটকে কী পরিমাণ অর্থ দেবে টেরেসা তার কথায় এটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না করলেও অনুমান করা যায় যে, এর পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলারের কম হবে না। টেরেসা মের দেয়া এসব প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী গাই ভারহকস্ট্যাড বলেন, যুক্তরাজ্যের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক বাস্তবধর্মী হয়েছে, তবে যুক্তরাজ্যে গমনকারী অভিবাসীদের জন্য নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করার প্রশ্নই উঠে না। এদিকে, ব্রিটেনে বিরোধী লেবার পার্টির দল নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, এই বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে যেসব প্রস্তাব করেছেন তা আমরা আগে থেকেই বলে আসছি। বাস্তবের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে এখানের শ্রম বাজার ও ব্যবসা বাণিজ্যের স্থিতিশীলতার জন্য গ্রহণযোগ্য মৌলিক শর্তের ওপর ভিত্তি করে ব্রিটেনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা মেনে নিতে হবে। জেরেমি করবিন আরও বলেন, আমাদের দেশে ব্রেক্সিট কর্মসংস্থান ও কর্ম ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষ ও প্রক্রিয়াকে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে টেরেসার বক্তৃতা ও প্রস্তাবকে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থী রক্ষণশীল দলীয় এমপি ক্যান ক্লার্ক ও এ্যানাসোবরি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে, ব্রেক্সিটপন্থী সাবেক মন্ত্রিসভার সদস্য ওয়েন প্যাটাসন এই মর্মে তার উৎকণ্ঠার কথা জানান যে, আরও দুই বছর আমাদেরকে ইউরোপীয় নিয়ম কানুন ও বিধিনিষেধের আওতায় বাধা পড়ে থাকতে হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন টেরেসার বক্তৃতাকে ইতিবাচক, আশাব্যঞ্জক ও গতিশীল বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন একটি সময় পেতে যাচ্ছি। এর পর আমরা অবশ্যই আমাদের সীমান্ত, আইনকানুন ও আমাদের ভবিষ্যত গন্তব্যের নিয়ন্ত্রণ হাতে ফিরে পাব। অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড টেরেসা মের বক্তৃতাকে একটি চমৎকার ভাষণ’ বলে অভিহিত করে বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের ইইউ অংশীদারদের আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরা হলো। একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় উভয় পক্ষের ব্যবসা-বাণিজ্য, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ও পারস্পরিক চাহিদা ও পরিকল্পনার কথা এই বক্তৃতায় সুন্দর ও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
×