ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেনা অভিযান শেষ হওয়ার সুচির দাবি ভিত্তিহীন ॥ এ্যামনেস্টি

রোহিঙ্গা গ্রাম এখনও জ্বলছে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা গ্রাম এখনও জ্বলছে

মিয়ানমারের সংঘাতপীড়িত রাখাইন রাজ্যের নতুন উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ ও ভিডিওতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামগুলো থেকে এখনও ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে বলে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে। তবে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি দাবি করেছেন, রাখাইনে সামরিক অভিযান শেষ হয়েছে। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তাদের সূত্রগুলো রাখাইনে আগুন জ্বলার দাবি করে। সাম্প্রতিক ছবিগুলো শুক্রবার বিকেলে তোলা হয়েছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো গ্রামগুলোতে এ আগুন দিচ্ছে। এক হিসাবে মিয়ানমার সেনাদের সাম্প্রতিক অভিযানে এক মাসেরও কম সময়ে চার লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে এ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স পরিচালক তিরানা হাসান জানান, এসব প্রমাণ আউং সান সুচির বক্তব্যের অসারতা তুলে ধরেছে। তিন সপ্তাহ পরেও আমরা দেখছি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান হয়নি। তাদের বাড়িঘর, গ্রাম জ্বলছে। মনে হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার কোন উপায়ই রাখা হচ্ছে না। শুধুমাত্র জোর করে রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করেই কর্তৃপক্ষ ক্ষান্ত থাকছে না বরং কেউ যাতে নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো ঘর না পায় সেটিও নিশ্চিত করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মারফি জানান, রাখাইনে চলমান সঙ্কট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে মারফি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর মুসলমান রোহিঙ্গ জঙ্গীদের আগস্ট মাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলাও অসমর্থনযোগ্য। তিনি রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সেখানে সতর্কতা অবলম্বন করুন। বেসামরিক লোকদের রক্ষা করুন ও এলাকাটিতে মানবিক সহায়তা দিন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীকেও কাজ করার আহ্বান জানান মারফি। মারফি বলেন, উদ্ভূত সমস্যা সম্পর্কে আউং সান সুচির প্রকাশ্যে কথা বলার সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে যে মিয়ানমারের ত্রুটিপূর্ণ সংবিধানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সুচির নিয়ন্ত্রণ খুবই সীমিত। যেজন্য সামরিক বাহিনী ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত্র গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ওপর সেনাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এ মর্মে মিয়ানমারকে সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদি সঙ্কটের সমাধান না করে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া খুবই ভয়াবহ হবে। এর ফলে রাখাইনে অস্থিতিশীলতা, সীমান্তে উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের আকৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি এবং বিনিয়োগ বন্ধের ঝুঁকি এবং পরিণামে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। চিকিৎসা ত্রাণ সংস্থা মেডিসিনস সান ফ্রন্টিয়ার্সের জরুরী সমন্বয়কারী রবার্ট ওনাস বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বিশেষত আশ্রয়, খাদ্য ও পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা এতটাই ভঙ্গুর যে, একটি ছোট ঘটনাই হতে পারে বড় আকারের সঙ্কট, যার প্রাদুর্ভাবে যে কোন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এক বিবৃতিতে ওনাস ব্যাপকহারে মানবিক সাহায্যের পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, হাজার হাজার শরণার্থী চরম অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছেন। সেখানে জনস্বাস্থ্যের যে কোন বিপর্যয়ের জন্য সব ধরনের পূর্বশর্ত বর্তমান রয়েছে। ১৯৯৭ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের সহ-বিজয়ী ‘ইন্টান্যাশনাল ক্যাম্পেন টু ব্যান ল্যান্ডমাইন্স’ অপর একটি বিপদের কথা উল্লেখ করেছে। তারা দাবি করেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার মাইন ব্যবহার করছে। সংস্থাটি জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীদের হিসাব অনুযায়ী, ফটোগ্রাফিক প্রমাণ ও একাধিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার জন্য দুটি প্রধান সীমান্তপথের মধ্যে মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে। ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানরা হতাহতের শিকার হচ্ছেন। এতে আরও দাবি করা হয়, মিয়ানমারকে অবিলম্বে ১৯৯৭ সালের ‘মাইন ব্যান ট্রিটি’ অনুযায়ী এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গত কয়েক দশক ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তাদের নাগরিকত্বও অস্বীকার করা হয়েছে। যদিও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনেক পরিবার সেখানে বসবাস করছে।
×