ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১১ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ

জঙ্গী অর্থায়নে স্পেন প্রবাসীর কানেকশন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জঙ্গী অর্থায়নে স্পেন প্রবাসীর কানেকশন

স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশে জঙ্গী অর্থায়নে পশ্চিমা দেশ স্পেন প্রবাসীর কানেকশন পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে ১১ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে দেশী সফটওয়্যার কোম্পানি ওয়াইমির মাধ্যমে জঙ্গী অর্থায়ন আসত। জঙ্গী অর্থায়নের ৪৭ শতাংশ কোম্পানির অবকাঠামো তৈরি, বেতন এবং বাকি ৫৩ শতাংশ অর্থ জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যয় হয়। র‌্যাব জানায়, কোম্পানিটির মালিকের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই আতাউল হক সবুজ স্পেনে বসে জঙ্গীদের অর্থায়ন করছে। এ অভিযোগে স্পেনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করেছে। আতাউল স্পেনের এক নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই গড়ে তুলেছে জঙ্গী অর্থায়নের বিশেষ নেটওয়ার্ক। সফটওয়ার বিজনেসের আড়ালে মূলত বাংলাদেশে জঙ্গী কর্মকা-ের মদদ দিচ্ছে। স্পেনের একাধিক পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে জঙ্গীবাদে অর্থায়নে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতারকৃতরা হলো আল মামুন (২০), আল-আমিন (২৩), ফয়সাল ওরফে তুহিন (৩৭), মঈন খান (৩৩), আমজাদ হোসেন (৩৪), মোঃ নাহিদ (৩০), মোঃ তাজুল ইসলাম ওরফে শাকিল (২৭), মোঃ জাহেদুল (২৯), আল আমিন (২৩), টনি নাথ (৪০) ও মোঃ হেলাল উদ্দিন (২৭)। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার কোম্পানি আইব্যাক। যার শাখা বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯টি দেশে খোলা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাইফুল হক শিপন সিরিয়ায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়। জঙ্গীবাদে অর্থায়নের অভিযোগে ২০১৫ সালের দিকে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির মালিক হয় আতাউল হক সবুজ। পরে নিরাপদ এলাকা হিসেবে স্পেনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। আতাউল হক সবুজ স্পেনে আইব্যাকের আদলে সিনটেল নামে একই প্রতিষ্ঠান চালু করে। এর আদলে বাংলাদেশে সফটওয়্যার কোম্পানি ওয়াইমি টেকনোলজি চালু করে। স্পেনের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান সিনটেল থেকে প্রেরিত অর্থের ৪৭ শতাংশ বাংলাদেশে অফিস অবকাঠামো তৈরি ও কর্মচারীদের বেতনের জন্য ব্যয় করা হয়। আর বাকি ৫৩ শতাংশ অর্থ জঙ্গী কার্যক্রমে ব্যয় করে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। এ ঘটনায় ২০১৫ সালে ৭ জনকে আসামি করে একটি মামলাও হয়েছিল। ওই মামলায় বর্তমানে চারজন আসামি জামিনে রয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন রাতের অভিযানে গ্রেফতার হন। আটককৃতদের মধ্যে ৭ জন দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানি ওয়াইমিতে কর্মরত ছিল। বাকি ৪ জন অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আইব্যাক নামের সফটওয়ার কোম্পানিটির বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর নয়টি দেশে ব্যবসা ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানটি জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের বাশারুজ্জামান চকলেটের মাধ্যমে তামিম চৌধুরীকে ৫০ হাজার ইউএস ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা দিতে চেয়েছিল। তখন বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জেনে ফেলে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে আইব্যাকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তবে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদে কি পরিমাণ অর্থ এসেছে তার সঠিক কোন হিসাব দিতে পারেননি এবং এর পেছনে কার যোগসাজশ আছে সে বিষয় কোন তথ্য দেয়নি র‌্যাব। এ প্রসঙ্গে কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এই অভিযানে অন্য একটি নতুন মাত্রা আছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যখন নিশ্চিত হই যে বাংলাদেশী এক নাগরিক স্পেন থেকে জঙ্গী কাজে জড়িত আছে। তারপর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে স্পেনের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং তাকে সেখানেই চিহ্নিত করা হয়। পরে আজ বাংলাদেশে যখন অভিযান হচ্ছিল, একই সময় স্পেনে সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আতাউল হক সবুজকে গ্রেফতার করেছে। সবুজের স্ত্রীও স্পেনে বসবাস করেন। তার বিরুদ্ধেও সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, কি প্রক্রিয়ায় জঙ্গী অর্থায়ন এসেছে, এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবাই এ বিষয়ে অবগত ছিল। আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত আরও জানা যাবে। আটক এই ১১ জন সরাসরি জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য রয়েছে জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়ে তারা জানত। জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়ে কিছু তথ্য জানা থাকলেই তাদের এ অভিযোগে বাংলাদেশের আইনে গ্রেফতার করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়ে র‌্যাব যা করছে অত্যন্ত কেয়ারফুলি করেছে।
×