ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের প্রধান উপকরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের প্রধান উপকরণ

শুধু অর্থনীতি বলে কিছু নেই। এ্যাডাম স্মিথের আমল থেকেই ইকোনমিকস হয়ে পড়ে পলিটিক্যাল ইকোনমিকস। শুধুমাত্র অর্থনীতি, যার মধ্যে কোন রাজনীতি নেই, তা আসলে কোন বিষয় নয়। কাজেই রাজনীতি এবং অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে আমাদের অর্থনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক সূচকগুলো ইতিবাচক এবং প্রায় সবগুলো বিনিয়োগবান্ধব। এই ইতিবাচক সূচকগুলো সুষ্ঠু এবং সুন্দর রাজনীতির ফলাফল। একজন রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিভাবে উজ্জ¦ল করতে পারে তার শুধুমাত্র একটি উদাহরণ পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ^ব্যাংক যখন সরে গেল তখন জাইকাসহ আরও সহযোগী প্রতিষ্ঠানও পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবেন তখন দেখা গেল জাইকা আমাদের তিনটি সেতু যথা শীতলক্ষ্যা, মেঘনা এবং গোমতী সেতুতে অর্থায়ন করবে। ইতোমধ্যে জাইকা কাজ শুরু করেছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা যাদের উন্নয়ন সহযোগী ভাবি, যারা আমাদের উন্নয়নের পার্টনার এবং বিনিয়োগকারী, তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থা ফিরে এসেছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ একটি ব্র্যান্ডের নাম হয়েছে। তবে আমরা যখনই ব্র্যান্ডিংয়ের কথা বলি তখন এর সঙ্গে কোন না কোন ব্যক্তির ভাবমূর্তি যুক্ত থাকে। যেমন- স্কয়ার, প্রাণসহ অন্যান্য ব্র্যান্ড আমাদের দেশ-বিদেশের ভাল ব্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসব ব্র্যান্ডের নেপথ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত মর্যাদা। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা প্রকৃতপক্ষেই ভাল মনোভাব নিয়ে ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন, মানুষ তা বিশ^াস করত। ফলে তাদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ব্যবসার পণ্যের ওপর পড়েছে। স্কয়ারের পণ্য কেনার সময় ক্রেতা ভাবেন অন্তত স্যামসন সাহেব আমাকে ঠকাবেন না। ফলে ব্যক্তি ভাবমূর্তি ব্র্যান্ডিংয়ের অন্যতম অংশ। অনেক সময় ব্র্যান্ডগুলো সেলিব্রেটিদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের দেশের জন্যও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের নেতৃত্বে কে আছেন তাঁর বিচক্ষণতার ক্ষমতা, জীবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ নানা গুণ বিবেচনা করা হয়। আমাদের দেশে এ কথা প্রায়ই বলা হতো, বিনিয়োগকারীরা দেশে আসলে দিনের পর দিন ঘুরতেন, কোন স্পষ্ট সিদ্ধান্ত পেতেন না। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমস্যার কথা বলতে পারেন। সেইসঙ্গে তারা সমাধানও পাচ্ছেন। এক সময় আমাদের দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ মনে করত বিদেশীরা। আমাদের সক্ষমতা এবং ক্রয় ক্ষমতা যথেষ্ট ছিল না। ১৯৭১ থেকে ২০০৮-০৯ সাল অর্থাৎ ৩৫ বছর লেগেছে আমাদের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলারে উন্নীত হতে। ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে আমাদের বর্তমান মাথাপিছু আয় ১৪০০ মার্কিন ডলার। এর জন্য আমাদের ১০ বছরেরও কম সময় লেগেছে। এই কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ার জন্য একজন ব্যক্তি দরকার ছিল। যে ব্যক্তিকে বিদেশীরা বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ তিন কোটি ৮৫ লাখ মেট্রিক টন, যা গত ১০ বছরের মধ্যে তিনগুণ। আমাদের দেশে খাদ্য ঘাটতি এবং অর্থনৈতিকভাবে রিজার্ভ কম ছিল। বিদেশীরা যখন এক্সপোর্ট করতেন তখন যন্ত্রপাতিসহ যথেষ্ট সরঞ্জাম নিয়ে আশঙ্কায় থাকতেন যে, টাকা উঠবে কিনা। কারণ এই সক্ষমতা আমাদের আছে কিনা তা ভেবে বিদেশীরা সন্দিহান থাকতেন। মানুষ দেখত বাংলাদেশ ব্যাংকে আমাদের দেয়ার মতো কত টাকা আছে। সেদিনও বাংলাদেশ ব্যাংকে আমাদের রিজার্ভ ছিল ৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে এর পরিমাণ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। এসব সূচক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিদেশীদের আশ^স্ত করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এবার বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে দেখা গেল অন্যান্য দেশের তুলনায় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসছেন। তবে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে। প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক কর্মকা- বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে আমাদের পণ্যের মান, নানা বাধাবিপত্তি দূর করতে হবে। যখন রানা প্লাজা ধস ঘটে। তখন আমরা ব্যাপক চাপে পড়ি। আমাদের গার্মেন্টস ক্ষেত্রে এখন যারা উদ্যোক্তা রয়েছেন তারা নিজ প্রচেষ্টায় উন্নতমানের ভবন, কর্মপরিবেশ, ডে কেয়ার সিস্টেম, নারীদের বিনোদন, টিফিন ব্যবস্থা, মজুরি এবং শ্রমিকদের নানা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। এগুলো হলো পণ্যের গুণাগুণ এবং পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার গুণাগুণ। অর্থাৎ সার্বিক গুণাগুণ নির্ধারণ। কেবল খাবার খেতে ভাল লাগল, তা যথেষ্ট নয়, বরং খাবারটি কিভাবে তৈরি হলো তার গুণাগুণও নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ১০০টি দেশে আমাদের ওষুধ রফতানি হচ্ছে। কয়েকমাস আগে আমেরিকায় আমাদের ওষুধ রফতানি শুরু হয়েছে। কাজেই ইতিবাচক সূচকের সঙ্গে পণ্যের মানোন্নয়ন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াগত গুণাগুণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আরও আকৃষ্ট করতে হবে। কেবল গার্মেন্টস নিয়ে ভাবলে হবে না। কারণ গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে আমাদের একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। এখন আমরা দ্বিতীয়, এক সময় আমরা প্রথম হব। কেবল গার্মেন্টসের ওপর নির্ভর করে আমাদের অর্থনীতি টেকসই হবে না। ওষুধ এবং জাহাজ শিল্প নিয়ে ভাবতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে পুকুর, নদীনালা, খালবিল ভরাট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আমরা মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ স্থান দখল করেছি। আলু উৎপাদনে পৃথিবীর ১০টি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। শাকসবজি উৎপাদনে পৃথিবীর ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের শাকসবজি সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। বর্তমানে দেশের ভিতরেই আমাদের একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। এদিক থেকে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ শিল্পের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এক সময় আমরা বলতাম, কেবল ইপিজেড এলাকায় আমরা বেশি নজর দেব। কারণ বিনিয়োগকারীরা এখানে আসবেন, উৎপাদন করবেন এবং পণ্য রফতানি করবেন। এখন বিদেশীরা দেখছেন বিদেশে রফতানি করার দরকার নেই। কারণ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৫ কোটির মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়েছে। ৫ কোটির মতো মধ্যবিত্ত লোক এখন অনেক দেশে নেই। অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা ২ কোটি। ইউরোপের অর্ধেক দেশের লোকসংখ্যা যোগ করলে আমাদের দেশের ৫ কোটির মতো মধ্যবিত্তের সংখ্যা হয় না। কাজেই আমাদের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন জাতির জীবনে একবারই এ সময় আসে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হচ্ছে কোন দেশের জনসংখ্যার বেশি সংখ্যক কর্মক্ষম। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কোরিয়া, জাপানসহ প্রত্যেক দেশে এসেছিল। এখন আমাদের দেশে এসেছে। এ সুবিধা আমরা অনেক দিন পর্যন্ত ভোগ করব। অর্থনীতিবিদ বলছেন, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে। তবে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা যদি জনসংখ্যাকে কর্মক্ষম জনসংখ্যায় রূপান্তর করতে পারি তাহলে দেশের উন্নয়নের গতি বাড়বে। বর্তমানে দেশের ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ লোক বিদেশে কাজ করে। এর বাইরেও আরও অনেকে রয়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমায় এক লাখ লোক। আর ২০০৮ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৮ লাখে। বর্তমানে প্রবাসীদের রেমিটেন্সও কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স আরও ১০ থেকে ২০ গুণ বাড়ানো যেত, যদি আমরা তাদের কাজে দক্ষ করে বিদেশে পাঠাতে পারতাম। বিদেশে নানা কাজে নিয়োজিত আমাদের বেশিরভাগ জনশক্তি অদক্ষ। তাদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণগত জ্ঞান নেই বললেই চলে। আমার দেখা, অস্ট্রেলিয়ায় রাজমিস্ত্রির যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, আমাদের বাংলাদেশে যত দক্ষ রাজমিস্ত্রি রয়েছেন তাদের সবাইকে সেখানে পাঠালেও চাহিদা মিটবে না। তাদের আরও লাগবে। আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা কোর্স চালু হয়। কিন্তু রাজমিস্ত্রিদের জন্য শিক্ষার সেরকম কোন ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে রাজমিস্ত্রির জন্য টেকনিক্যাল শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ির কাজের জন্য লোক পাঠানো হচ্ছে। তবে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনা, হয়রানি ভোগ করতে হয়। বিশেষ করে নারীরা মধ্যপ্রাচ্যে নিপীড়নের শিকার হয়। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে এমন কমই দেখা যায়। এক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। যেমন- মাদ্রাসা থেকে পাস করার পর শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। যেহেতু মাদ্রাসায় আরবী ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়, এর সঙ্গে যদি ফ্রিজ, টিভি, টেলিভিশন মেরামত করার শিক্ষা দিয়ে একটি সনদপত্র দেয়া যেত তাহলে ভাল সুফল পাওয়া যেত। কেবল কামিল, ফাজিল, দাখিলের সনদপত্র না দিয়ে টেকনিক্যাল শিক্ষা দিলে তারা আর বেকার থাকবে না। কর্ম না পেলে তারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। জঙ্গীবাদেও লিপ্ত হওয়ার সঙ্গে বেকারত্বের সম্পর্ক রয়েছে। এরা আবার বঞ্চনার শিকার। অনেকে আছে এতিম। এতিম হলেই আমরা তাকে এতিমখানায় পাঠাই। আর ৯০ ভাগ এতিমখানা কওমিদের দখলেই আছে। কওমিরা তাকে কী শিক্ষা দিচ্ছে? তাকে কর্মক্ষম করার কোন শিক্ষা সেখানে নেই। কাজেই মাদ্রাসা এতিমখানায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। মাদ্রাসা থেকে যারা পাস করছে তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক। ভাষার সঙ্গে আসবাবপত্র মেরামতের শিক্ষা যদি তাদের দেয়া হয় তা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এভাবে দেখতে হবে অর্থনীতিকে টেকসই করতে কোন্ কোন্ সেক্টরে আমাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কেবল বিশ^বিদ্যালয় থেকে এমএ, এমএসএস পাস করে সীমিত সরকারী চাকরির জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে চলবে না। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়লেও কাজকে কাজ হিসেবে নিতে হবে। সেজন্য কারিগরি শিক্ষার দিকে জোর দিতে হবে। তাহলেই হবে সত্যিকারের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। অন্যথায় এটি হবে ডেমোগ্রাফিক লাইয়াবিলিটি। শিক্ষিতরা কাজে যুক্ত না হলে অপকর্মে লিপ্ত হবে। কর্মহীন থাকার ফলে অনেকে হতাশায় ভোগে। হতাশা থেকে মাদকাসক্তি, মাদকাসক্তি থেকে জঙ্গীবাদ। ফলে নানা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রেও নানা বিষয় চিন্তা করতে হবে। জ¦ালানি তেলসহ আমরা কিন্তু ভোজ্যতেলও আমদানি করি। খাদ্য এবং সবজিতে আমরা উদ্বৃত্ত। জ¦ালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বিশ^ব্যাপী কমছে। এর ফলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে জ¦ালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। কারণ আমরা যে দামে কিনি তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করি। বর্তমানে আমাদের বেশির ভাগ জ¦ালানি ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুত উৎপাদনে। তেলের দাম কমালে জনগণ সরাসরি সুবিধা ভোগ করতে পারে না। এতে মধ্যস্বত্বভোগী সুবিধা লুটবে। তবে তেলের দাম না কমিয়ে বিদ্যুতের দাম কমানো দরকার। কারণ তাতে জনগণ লাভবান হবে এবং সহজে কার্যকর হবে। সবাই সুবিধা ভোগ করবে। ব্যাংকিং অব্যবস্থাপনার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। আমাদের নতুন অনেক ব্যাংক হওয়ায় অনেকে মনে করছিলেন এত ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কিনা? কিন্তু ব্যাংকগুলো এখন আমানত সংগ্রহ করছে, উপরের দিকে যাচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি আরও ঘরোয়াভাবে হওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশন যে পদক্ষেপ নেয় তা অনেক বিলম্বে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সব পক্ষ। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা অনেক কার্যকর। কোন আপত্তিজনক লেনদেন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা দ্রুত ধরে ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অগোচরে কোন ঘটনা ঘটানোর সুযোগ নেই। যে কোন ব্যাংকের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংককেই নিতে হবে। টাকা রাখলাম আর ব্যাংক উঠে গেল- এটা নয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করলেই বাজারে ভাল প্রভাব পড়ে না। কাজেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেগুলেটরি ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু হলমার্কের বিষয়ে আমরা দেখলাম কয়েক বছর ধরে তারা টাকা নিচ্ছে; কিন্তু হঠাৎ করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে পড়ল। এরকম হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ তদারকি কার্যক্রম জোরদার হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে এটা যেন এমনও না হয়, যা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে। লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়
×