ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমৃদ্ধির অংশীদার

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সমৃদ্ধির অংশীদার

দু’বছর আগে ঢাকায় ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০১৫’-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময় অত্যন্ত দরকারী কথা তিনি খোলাখুলি সহজ ভাষায় বলে দেন। তার ভাষ্য: ‘এসডিজি বাস্তবায়নে আরও সম্পদ চাই। এজন্য আরও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন।’ দেখা যাচ্ছে ওই বছরেই বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে বাংলাদেশ অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করে। আঙ্কটাডের ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৬’ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ২শ’ কোটি ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করেছে। এটা ঠিক যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুত ও পেট্রোলিয়াম, তৈরি পোশাক শিল্প এবং টেলিকমিউনিকেশন খাতে আগের তুলনায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। ফুড প্রোডাক্ট এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে কী উপায়ে আরও বিনিয়োগ আনা যায় এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এছাড়াও আরও কয়েকটি খাত শনাক্ত করে পরিকল্পিতভাবে সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেসব খাতেও বিনিয়োগ আনা সম্ভব। বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করছে। অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। বিনিয়োগের জন্যও যে এটি সুবর্ণ সময়, এই যুক্তিগুলো ছোট ও বড় সবস্তরের বিনিয়োগকারীর সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার বিকল্প নেই। বুধবার নিউইয়র্কে ‘বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ)’ আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশীদার হতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। তাঁর দল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে চলেছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত বছর ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ থেকেই দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কটি অনুধাবন করা যায়। বলাবাহুল্য, এই সম্পর্ক সম্প্রসারণের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু বাণিজ্যক্ষেত্রে নয়, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ অংশীদার। রূপকল্প-২০২১ মোতাবেক বাংলাদেশ এখন একটি শিল্পোন্নত, ডিজিটাল, মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়াসে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং সমৃদ্ধির অংশীদার হতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান তাই যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত। মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কাছে ইতিবাচক বার্তা হিসেবেই প্রতিভাত হবে বলে ধারণা করা যায়। আমরা আশা করব, শুধু মার্কিন ব্যবসায়ীরাই নয়, ইউরোপ-আমেরিকার ব্যবসায়ী মহল বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিশীল ধারা সম্বন্ধে অবগত হয়ে আগামীতে সমৃদ্ধির অংশীদার হতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করবে।
×