ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে গৃহবধু হত্যা মামলা নেয়নি পুলিশ

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নাটোরে গৃহবধু হত্যা মামলা নেয়নি পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরে আয়সা নামে এক গৃহবধুকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচারনা চালানোর অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধুর স্বজনরা । তারা অভিযোগ করেছেন, এ ঘটনায় নাটোর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে নাটোর থানার ওসি তাদের সাথে দুর্ব্যাবহার করে থানা থেকে বের করে দেন। পরে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানোর পরে সার্কেল এসএসপি ডেকে নিয়ে অভিযোগপত্র জমা নেন। শুক্রবার রাতে নাটোর সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন, মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ লাশের গলায় ফাঁস দিয়ে হাটু মোড়া অবস্থায় তীরের সংগে ঝুলানো ছিল। ফলে আমাদের বদ্ধমুল ধারণা এটা হত্যা ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা। কিন্তু অভিযুক্তদের প্রভাবের কারণে পুলিশ হত্যা মামলা নেয়নি। তবে, নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান থানা থেকে ভুক্তভোগীদের বের করে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। থানায় দাখিলকৃত অভিযোগ সুত্রে জানা যায় , প্রায় সাত বছর পুর্বে নাটোর সদর উপজেলার অর্জনপুর গ্রামের স্কুল দপ্তরী আক্তার হোসেনের মেয়ে আয়সা আক্তার হিরার সাথে একই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমানের সাথে বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে তাদের ৫ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় আক্তার হোসেন দুই লাখ টাকা যৌতুক প্রদান করে। কিন্তু আরো এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় হাফিজুর তার স্ত্রী আয়সাকে ধরে মারপিট করতো। গত শুক্রবার যৌতুকের জন্য হাফিজুর পুরনরায় আয়সাকে মারিপট করা অবস্থায় আয়সার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বাড়ির লোকজনের সহায়তায় গোয়াল ঘরে আয়সার গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। লোকমুখে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা দেখতে পাই আয়সার পা মাটিতে হাটু মোড়া অবস্থায় ঝুলে আছে। মৃত আয়সার মামা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, আমাদের বাড়ির মেয়েরা নিহত আয়সার পিঠে হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখলে গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আয়সার স্বামী হাফিজুর রহমানসহ ৪জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা দায়ের করতে থানায় যান। কিন্তু নাটোর থানার ওসি মশিউর রহমান আমাদের কোন কথা না শুনে থানা থেকে বের করে দেন। বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানালে নাটোর সদর সার্কেলের এ্সপি আমাদের ডেকে অভিযোগ দিতে বলে এবং লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য নাটোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে । গোলাম মোস্তফা বলেন, একটি পালসার মোটরসাইকেল কেনার জন্য বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলতো। কিন্তু আয়সার বাবা একজন গরীব মানুষ। তিনি এত টাকা পাবেন কোথায়। তিনি অভিযোগ করেন, ইতপুর্বে হাফিজ একটি বিয়ে করেছিল। সে স্ত্রীকেও মেরে ফেলে আত্মহত্যা বলে পার পেয়ে গেছেন। গোলাম মোসবতফা অভিযোগ করেন, হাফিজুর একজন নেশাখোর ব্যক্তি। নেশা করে যখন তখন সে আয়সাকে মারধর করতো। তিনি এঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করেন। আয়সার ভাতিজা আব্বাস আলী বলেন, হাফিজুর এবং তারপরিবারের লোকজন ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। এমনকি শনিবার লাশ দাফনের পুর্বে আয়সার ৫ বছরের ছেলে নয়নের মুখটা পর্যন্ত আমাদের দেখতে দেয়নি। নয়ন সত্যিটা বলে দিবে বলে তাকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, হাফিজুরদের অনেক টাকা। হাফিজুররের চাচা চ্যালেঞ্জ করেছেন আমাদের ছেলে (হাফিজুর) যদি মেরেও ফেলে তোমরা কি করবে। যা পার কর। আমরাও দেখে নিব। তিনি বলেন, লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট যাতে অভিযুক্তের পক্ষে যায় সে বিষয়ে একটি মহলের তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এজন্য আমরা আশংকা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাবনা। কান্না রত আক্তার হোসেন বলেন, আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। কেন আমার মেয়েটাকে মরতে হলো। আমি গরিব এটাই কি আমার অপরাধ। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আকবর হোসেন বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় কোনরুপ মন্তব্য করা ঠিক হবেনা। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তী কার্য়ক্রম গ্রহণ করা হবে। অপরদিকে অভিযুক্ত পলাতক হাফিজুরের মোবাইল নং (০১৭২২- ৮১৫৪১৪) নম্বরে কল করলে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওসি মশিউর রহমান বলেন, বের করে দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউডি মামলা দায়ের করেছি যাতে আসামীদের গ্রেপ্তার করা সহজ হয়।
×