ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে চরের মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে চরের মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ লৌহজংয়ের চরাঞ্চলবাসী বন্যার ধকল কাটিয়ে পুনরায় চাঙ্গা হচ্ছে। এবারের বন্যায় লৌহজং উপজেলার চরাঞ্চলের ২৫টি গ্রাম কবলিত হয়। আর এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্যার শিকার হয়। ২০ দিন স্থায়ী এ বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় বন্যার্তরা কষ্টে দিন কাটাতে শুরু করে। তবে বন্যা শুরুর সাত দিনের মাথায়ই ত্রাণসহ সেখানে ডিসি ও এসপিকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন স্থানীয় সংসদ সদস্য। পরে একের পর এক সরকারী-বেসরকারী ত্রান নিয়ে হাজির হয় অনেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠান। বাড়িঘরে পানি ঢুকলেও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি কাউকে। তবে গবাদিপশু নিয়ে মানুষজনকে পড়তে হয় বিপাকে। আশ্রয়কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও সিংহভাগ বন্যার্ত সেখানে যায়নি বাড়িঘর লুট হওয়ার ভয়ে ও আশ্রয়কেন্দ্রে গতবার ডাকাতি হওয়ায়। চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রধান পেশা হলো কৃষি ও পশুপালন। গত কয়েক বছর ধরে জেলার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশিরভাগ সবজির চাহিদা মিটিয়ে থাকে এ চরাঞ্চলবাসী। এবারের বন্যায় সবজির বীজতলা তলিয়ে গেছে প্রায় শতভাগ। বন্যা চলে যাওয়ার পর কৃষক পুনরায় সবজি বীজ লাগালেও গত সপ্তাহের টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পাইকারা গ্রামের কৃষক শাজাহান জানান, তিনি তৃতীয়বারের মতো সবজির বীজ রোপণ করেছেন। একই কথা জানালেন ঝাউটিয়া গ্রামের নারী কৃষক শহিদা, সামর্থ্যবান বিবি। শহিদা বলেন, আমরা চরের মানুষ সহজে হারি না, হারব না। মন্দ আবহাওয়ার সঙ্গে ফাইট করেই আমাদের টিকে থাকতে হয়। বন্যার পর গরুর খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে গরুর দুধের পরিমাণ গেছে কমে। তাই গরুকে সচরাচর খাবার না দিয়ে কৃষকরা পদ্মার শাখা নদী থেকে কাশবন অর্থাৎ স্থানীয় ভাষায় কাইশ্যা বা লডা এনে খাওয়াচ্ছে। চরের কোরহাটি, তেউটিয়া, ঝাউটিয়া, পাইকারা, সাইনহাটি, ব্রাহ্মনগাঁও, রাউতগাঁও ও ভোজগাঁও গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে কৃষকের সংগ্রামী প্রচেষ্টা। বন্যা সব ভাসিয়ে নেয়ার পরও আবার নিজেদের সংসার গুছিয়ে নিতে কাজ করছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, বন্যায় লৌহজং চরের ২৫ হেক্টর জমির আমনের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বনাভাসি মানুষের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষক ঝাঁপিয়ে পড়েছে মাঠে। কৃষি বিভাগ সাধ্যানুযায়ী পাশে রয়েছে। জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের বাসিন্দারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারীভাবে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনেও সরকার সহায়ক কর্মসূচী নিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, বন্যায় ক্ষতবিক্ষত চরের জনপথ সুরক্ষায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে কথা হয়েছে। বিভিন্ন এনজিওকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বর্তমান সরকার অনগ্রসর মানুষসহ সবার ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে। আর তাই লৌহজংয়ে চরের মানুষেরও ভাগ্যবদলে কাজ করে যাচ্ছি।
×