ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আব্দুল্লাহ এইচ এম আলমুতাইরি

৮৭তম সৌদি জাতীয় দিবস এবং প্রাসঙ্গিক কথা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৮৭তম সৌদি জাতীয় দিবস এবং প্রাসঙ্গিক কথা

আজ সৌদি আরবের জাতীয় দিবস। এই দিনে প্রথম ঐতিহাসিক দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যা প্রতিবছর ফিরে ফিরে আসে। যা প্রতিটি সৌদি নাগরিকদের মনে ও মননে স্থায়ী অবস্থায় রয়ে গেছে। এই ঐতিহাসিক দিনে এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান আল সাউদ (আল্লাহ তার কবরকে শান্তিময় করুন) বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডকে একত্রিত করেছেন এবং অনৈক্য থেকে ঐক্যের দিকে নিয়ে এসে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে রাষ্ট্রে বর্তমানে আমরা বসবাস করছি। আজ ৮৭তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে ওই মহান উপলক্ষগুলো স্মরণ করছি। এগুলো স্থায়ী ঘটনা ও বিশাল অবস্থান। যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণ করবে এবং স্মরণ করবে তাদের যাদের অক্লান্ত, অসীম, গভীর জ্ঞান ও উপলব্ধি এই মহান রাষ্ট্র বিনির্মাণে সহায়তা করেছে। আল্লাহর অশেষ করুণায় আমাদের দেশ প্রাচুর্য, স্থিতিশীলতা ও কল্যাণের মধ্যে বিরাজ করছে। সৌদি আরব অল্প কয়েক বছরের মধ্যে সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সভ্যতার উন্নয়ন ও সার্বিক উন্নতি করছে যার দৃষ্টান্ত বিরল। এ রাষ্ট্রটি নিরাপত্তা, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে উন্নতি বাস্তবায়ন করেছে যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রদান ও গণনা করা কঠিন। যা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সৌদি ভিশন ২০৩০ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ও জীবনের সব ক্ষেত্রকে শামিল করেছে। রাষ্ট্রের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার সবদিক এবং বিভাগে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে অনুপ্রবেশ করেছে। এ ভিশন জনগণের অংশগ্রহণ তাদের মেধা, প্রজ্ঞার মাধ্যমে হয়েছে। আর এ ভিশনের সঙ্গে এ দেশের জন্য তাদের কার্যকলাপ চলছে খাদিমুল হারামাইন ও যুবরাজের নেতৃত্বে। ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে অল্প কয়েক লাইনে বর্ণনা দেয়া আসলেই কঠিন। যেহেতু এই ভিশনের মাধ্যমেই ভবিষ্যতের বিশাল উন্নতি, উদ্যোগ ও প্রকল্পের চিন্তা সন্নিবেশিত হবে। এটা স্থায়ী ও সামগ্রিক উন্নতির বিরাট আশা। যেমনিভাবে খাদিমুল হারামাইন আশ শারীফাইন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সাউদ ও তার সঠিক পথে পরিচালিত সরকার পরিকল্পনা করেছেন। এ উপলক্ষে আজ ওই সমস্ত বিষয় উল্লেখ করতে হয় যে, সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের জন্য বিশাল খিদমত আঞ্জাম দিচ্ছে। যেহেতু ওটা অহীর অবতরণস্থল ও রিসালাতের সূচনাস্থল এবং মুসলমানদের কিবলা, তাই সে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইসলাম ও মুসলমানের সার্বিক ব্যাপারগুলো অগ্রাধিকার দেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে মসজিদ নির্মাণ করে চলছে। যার সূচনা হয়েছে মূলত সৌদি যুগের মসজিদুল হারামাইনের সম্প্রসারণের মাধ্যমে। আর এটা সব যুগের মধ্যে অন্যতম। ফলে হজ আদায় করা বেশ সহজসাধ্য হয়েছে, পূর্বে এটা ছিল খুব কষ্টসাধ্য। বর্তমানে হারামাইন শারীফাইন সব মুসলিমের গর্ব করার মতো বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই আল্লাহ্র ঘরের হাজীগণ ও মসজিদে নববীর জিয়ারতকারীগণ প্রশান্তির সঙ্গে যাবতীয় বিধানাবলী পালন করতে পারছেন। সৌদি আরব তাদের খিদমতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে যা কাছের ও দূরের সবাই অবলোকন করছে। পরে সে কুরআন ছাপানো ও বিতরণের দিকে মনোনিবেশ করছেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ভাষায় এটার লাখ লাখ কপি বিতরণ করা হচ্ছে, যাতে সবার হাতের নাগালে কুরআন পৌঁছে যায়। সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর যা ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ও মানবিক বন্ধনগুলোর দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সৌদি আরব সর্বদা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে, বিশেষ করে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণ সৌদি আরবকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং সৌদি আরবের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সার্বিক সহায়তা করে। অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক সৌদি আরবের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে যা তাদের জন্য পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ১০ মাস (জুলাই-এপ্রিল)-এর মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মোট বৈদেশিক রেমিটেন্স (১২.২৫) বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি এসেছে। বাংলাদেশের সব মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সৌদি আরবের বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার কিছু অঞ্চল সমুদ্র উপত্যকায় অবস্থিত। এই অঞ্চলগুলো প্রতিবছরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়। সৌদি আরব একটি অগ্রণী দেশ, বাংলাদেশ যখনই এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, তখনই তার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। সৌদি আরব ২০০৭ সালে ‘সিডর’-এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশীদের (১৫০) মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছে। তদ্রƒপ সৌদি আরব বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যেমন ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র, হাসপাতাল, সেতু, বিদ্যুত উৎপাদনকেন্দ্র তৈরি করতে সহায়তা করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৬ সালে সৌদি আরব সফর এবং সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। তদ্রƒপ বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের সৌদি আরব সফরের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। এক্ষেত্রে উপরের বর্ণিত চিরস্থায়ী ও স্মরণীয় বিষয়গুলো কেবল এই উজ্জ্বল ভূখণ্ডের অবদান থেকে কিছু আলোকছটা মাত্র। আমি এই শুভ মুহূর্তে আমাদের দেশ, সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদের ভাতৃপ্রতিম এই দেশকে নিরাপদ রাখেন এবং এ দেশের সুযোগ্য নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করেন। অস্তির আঞ্চলিক পরিবেশকে শান্ত ও নিরাপত্তা দান করেন। এই মহান দিবস উপলক্ষে আমি এবং আমার দূতাবাসের সব সদস্যের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি দুই পবিত্র মসজিদের খাদিম বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং তার বিশ্বস্ত যুবরাজ ও সম্মানিত রাজকীয় পরিবার ও সকল সৌদি নাগরিককে। আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতহু। লেখক : রাষ্ট্রদূত, সৌদি দূতাবাস ঢাকা, বাংলাদেশ
×