ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চালকের পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চালকের পুরস্কার

গাড়ি চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের সম্পর্ক তেমন একটা সুখকর হয় না। বিভিন্ন সময় অপ্রয়োজনীয় তর্কবিতর্ক থেকে অনাকাক্সিক্ষত মারামারিতেও ঘটনার জের গড়াতে থাকে। বিভিন্ন পরিবহনে চালক আর যাত্রীর এই বাকবিত-া স্বাভাবিক এবং দৈনন্দিন ঘটনার পর্যায়ে পড়ে। চালক-যাত্রীর এই সংঘাত কোন এক সময় আইনী বিধানেও মোকাবেলার প্রয়োজন পড়ে। গাড়ির বেপোরোয়া গতি, অনিয়ন্ত্রিত ভাড়া নিয়ে বচসা কিংবা যাত্রী ওঠা-নামার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম সব মিলিয়ে যাত্রীরা সব সময় ক্ষুব্ধ থাকে চালক আর তার সহযোগীর ওপর। এ ধরনের আচরণের একটি সহজ এবং স্বাভাবিক প্রতিকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর পুলিশ কর্তৃপক্ষ। ভদ্র এবং মার্জিত চালকদের চিহ্নিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটা একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। ইতোমধ্যে শহরটিতে চালক বাছাইয়ের এই নতুন কাজে সড়কে নেমেছে পুলিশ বাহিনী। সুস্থ এবং স্বাভাবিক ব্যবহারের মাত্রার ওপরই নির্ভর করবে চালকদের মান। গুণগতমানসম্পন্ন সুদক্ষ চালকদের ভদ্রতার জন্য পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছে কলম্বো পুলিশ। এ ব্যাপারে প্রচার অভিযানও শুরু করা হয়েছে। যেসব চালক যোগ্য বিবেচিত হবে তাদের গাড়িতে একটা করে স্টিকার লাগিয়ে দেয়ার কথাও প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটা হলো সাধারণ পুরস্কার। আসল পুরস্কার আরও আকর্ষণীয়। এসব সুদক্ষ গাড়ি চালকের মধ্যে যিনি সর্বোত্তম বিবেচিত হবেন তিনি পাবেন হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবার বিশেষ ভাউচার। কলম্বোর পুলিশ প্রধানের মতে চালকদের আইনশৃঙ্খলা এবং স্বাভাবিক নিয়মবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেই এমন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর বিপরীত ব্যবস্থাও বহাল রেখেছে কর্তৃপক্ষ। যেমন অকারণে, অপ্রয়োজনে আইনী বিধি ব্যবস্থাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করলে অবধারিত শাস্তিও জুটতে পারে চালকদের। একদিকে পুরস্কারের আকাক্সক্ষা, অন্যদিকে শাস্তির ভয় এই দুই টানাপোড়নে চালকদের প্রতিদিনের আচরণ ব্যবহার এবং গাড়ি চালনায় কোন ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ পরিবহন ব্যবস্থায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ সবার থাকে না। তাই গণপরিবহনে সাধারণ মানুষদের সড়ক-মহাসড়কে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হয়। আর সেভাবে হয়রানিরও শিকার হতে হয় অনেক যাত্রীকে। পর্যাপ্ত সিটের অভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা উপস্থিত সমস্যাকে মেনে নিতে না পেরে চালক কিংবা সহযোগীর সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। অনেক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চালক আর যাত্রীর সহজ এবং স্বাভাবিক অবস্থাকে যেভাবে জটিল আর অস্বাভাবিক করে তোলে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই অনুভব করতে পারে। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে এড়াতে শ্রীলঙ্কার পুলিশ বাহিনী যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এ ধরনের প্রশংসনীয় কর্মযোগ যদি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাহলে তার চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না। কলম্বোর পুলিশ বাহিনীর এই নয়া কর্মপ্রক্রিয়া যদি যথার্থ আর সফল হয় তাহলে অন্য দেশগুলো এ কার্যক্রম প্রয়োগ করে দেখতে পারে। নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে তার আশু সমাধানকল্পে নতুন যে কোন প্রক্রিয়া বিবেচনায় এনে তা প্রয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কলম্বো পুলিশের এই পদক্ষেপ কাক্সিক্ষত ফল বয়ে আনবে, যাত্রী আর চালকের মধ্যে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করবে, সর্বোপরি গণপরিবহনের মতো একটি বৃহৎ যোগাযোগ মাধ্যম সর্বসাধারণের যথার্থ সেবায় নিয়োজিত হবে এই প্রত্যাশা সবার।
×