ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের উন্নয়নে...

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রেলের উন্নয়নে...

রেললাইন বয়ে যায় সমান্তরাল। তার ওপর দিয়ে কু-ঝিক-ঝিক হুইসেল বাজিয়ে ছুটে চলে রেল গাড়ি। সেই রেললাইন ও রেল গাড়ি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুগোপযোগী হয়েছে। স্টিম ইঞ্জিনে পরিচালিত রেল আছে জাদুঘরে। এখন ইলেক্ট্রিক ট্রেন, বুলেট ট্রেনের যুগ চলছে। অগ্রগতির বাহনই হচ্ছে রেল। আধুনিক দেশ ও সমাজ রেলবিহীন ভাবাই যায় না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা বিশাল ভারতবর্ষে যোগসূত্র বন্ধনের অন্যতম জাতীয় পরিবহন ব্যবস্থা হলো রেল। জাপানসহ উন্নত দেশে রেলযাত্রীর সংখ্যাই সর্বাধিক। কিন্তু বাংলাদেশে রেল যেন এর বিপরীত অবস্থানে। অথচ জনবহুল এই দেশে গণপরিবহনের সবচেয়ে সুবিধাজনক ও কার্যকর মাধ্যম হতে পারে রেল। কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি তা নিয়ে যত কথাই বলা হোক আদতে রেল ব্যবস্থার প্রতি দরদ ও দায়িত্বশীলতার অভাব ছিল স্পষ্ট। তদুপরি সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেয়ারও লক্ষণ দেখা যায়নি। যা কিছু করা হয় তাও হয় না ফলপ্রসূ। জনগণের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখনও রেল প্রধান পরিবহনে পরিণত হতে পারছে না। দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা গেলেও সমাধানের ক্ষেত্র কেন যেন ক্রমশ সঙ্কুচিত প্রায়। বিশ্বের সব দেশে রেল অত্যন্ত লাভজনক সংস্থা। ভাড়াও তুলনামূলক কম। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। এখনও সংস্থাটি লোকসানের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারেনি। ফি বছর লোকসান বাড়ছেই। গত সাত বছরে রেল খাতের উন্নয়নসহ মোট ব্যয় হয়েছে উনত্রিশ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে আয় হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার তিন শ’ একাত্তর কোটি টাকা। প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। ঠেকানোর কোন পথ ও পন্থা জানা নেই সম্ভবত কর্তৃপক্ষের। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নেপথ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে এবং তা বিদেশী ঋণে প্রাপ্ত অর্থ। সুদে-আসলে এই ঋণ শোধ করতে করতে হয়ত দেখা যাবে রেলের আয়ের চেয়ে ঋণের কিস্তির পরিমাণ বেশি। এমন একটি প্রাচীন সংস্থার করুণ দশায় পতিত হোক তা কারও কাম্য হতে পারে না। দক্ষ, যোগ্য, কর্মনিষ্ঠ, কৌশলী জনবলের অভাব এবং সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে ঔদাসীন্য উত্তরণের পথকে সামনে আনে না। আর আট বছর পর ২০২৫ সালে রেল চালুর দ্বিশতবর্ষ পালন হবে বিশ্বজুড়ে। ভারতবর্ষে রেল ব্যবস্থা চালু করেছিলেন লর্ড ডালহৌসি। বুঝেছিলেন তিনি ভারতবর্ষ শাসন করতে গেলে শুধু পালকি আর ঘোড়ার গাড়ির ওপর নির্ভর করে চালানো যাবে না। তাই লন্ডনে পত্র পাঠিয়েছিলেন অবিলম্বে রেল ব্যবস্থা পত্তনের কথা জানিয়ে। তিন বছরের মাথায় ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল ভারতবর্ষে চালু হয় প্রথম রেল। বাংলা, অসমজুড়েও রেললাইন বিস্তৃত হয়। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা দূর নিয়ে আসে কাছে। ইংরেজ শাসন পাকাপোক্ত করতে রেল রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ব্রিটিশ বা ইংরেজরা রাজত্ব বহাল ও শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য একদা যে রেল ব্যবস্থা চালু করেছিল সেই তারাই আজ বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাকে প্রাগ্রসর করার কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বলা যায়। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত বাঙালী বংশোদ্ভূত রোশনারা আলী ঢাকায় সফরকালে বাংলাদেশের রেলওয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের রেলওয়ে কোম্পানিগুলো যে সহযোগিতা করতে আগ্রহী তা জানিয়ে বলেছেন, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে রেল খাতে ব্রিটেনের কাজের ক্ষেত্র যাচাই করছেন তিনি। লর্ড ডালহৌসী থেকে রোশনারা আলী পর্যন্ত সময়কালে বাংলায় রেল অগ্রগতির সোপানে সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিবেশী দেশের মতো। পশ্চাৎপদ এই রেল খাতকে টেনে-হিঁচড়ে ট্রাফে আনার জন্য ব্রিটেনের সহযোগিতা নিশ্চয় বিবেচিত হবে। আর তাতে রেল হয়ে উঠুক জনমানুষের প্রধান বাহন। যোগাযোগ ব্যবস্থা যত ভাল হবে উন্নয়নের গতি হবে ততই ত্বরান্বিত।
×