ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কবিতা

অনিচ্ছুক গোলাপের বেদনা বাদল আশরাফ তোমার খোঁপায় গোঁজা অনিচ্ছুক গোলাপের বেদনায় কাঁদছে পৃথিবীর তাবৎ গোলাপ প্রকৃতি আকাশ-বাতাস, কাঁদছে বোধিবৃক্ষ বোধতাড়িত মানুষেরা- কেননা তোমার খোঁপায় গোঁজা অনিচ্ছুক গোলাপ লাল রক্তেরও অধিক প্রকট, অসহায় বুচিদং মংডু-চালিপাংসহ অগণিত জনপদে শত ইউসুফ -সালাম-সেলিম- তোফায়েলের রক্তে রঞ্জিত ! কাঁদে নাফ বঙ্গপোসাগর বড় উত্তাল আজ - বিমুগ্ধ গর্জনে যেখানে আবাহন ছিল প্রেম আর মানবিকতার সেখানে ডুবছে ডিঙা স্বজন-সম্পদ হারা বেদনায় হত রক্তাক্ত রোহিঙ্গার সন্ত্রস্ত নাও ...... ভাসছে শিশু নর-নারীদের লাশ অনিচ্ছুক শান্তিকামী তোমার বর্বরতার খেয়ালী চাষ ! পাহাড়ে জঙ্গলে অতি সম্ভ্রমে পথ করে দেয় বন্য পশুরা তোমার বর্বরতায় তাড়া খাওয়া অসহায় মানুষের অনিকের যাত্রায়, তবুও নিরুদ্বেগ তুমি ! স্বজন হারানো আমিও একজন বেদনার ঢেউয়ে প্রতিদিন ভাঙ্গে বুকের কাছাড় তবু সুখে ও দু:খে মিশে থাকি ষোল কোটি মানুষের সাথে - সেই আমি আজ দাঁড়িয়েছি বিপন্ন মানুষের পাশে যদিও আমার খোঁপায় গোঁজা হয়নি গোলাপ কোনদিন ....... ! **মানবতা, তুমি কী মিন্টু রায় নির্ঘুম রাত কাটানো রোহিঙ্গার চোখে জমে থাকা ঘুম থেকে- একটু ঘুম ধার নিয়ে, ঘুমাতে চেয়েছিলাম আমি! দু’চোখ বুঝতেই দেখি- আমি যেন কোনো নির্মম সীমার অন্ধকার পথের চরম উদ্বাস্তু। বসতভিটায় জ্বলছে যেন দাউ দাউ আগুন, আটকে পড়া পোষা প্রাণী, অবুঝ শিশুর শেষ আর্তনাদ - ধোঁয়ায় পাকানো কুন্ডলী হয়ে ছুটে যাচ্ছে উর্ধপানে। আমি যেন তখন কোনো অসহায় পিতা, চাপাতির আঘাতে ফালি হতে হতে শেষবারের চিৎকারেও বাবা...বাবা.. বলে - আমাকেই খুঁজেছিল আমার অবুঝ সন্তান। কপাল জুড়ে হঠাৎ আছড়ে পড়লো ঈষৎ গরম তরল, স্পর্শ করে দেখি, ফিনকি দিয়ে ছুটে আসা- সে যে আমার সন্তানেরই রক্ত! তাকিয়ে দেখি- কোমল আঙ্গুল তার তখনও যেন ক্ষণিক কাঁপুনিতে হাতটা বাড়িয়ে দিতে বলে চলেছে শেষ ইশারায়। দেখেছি আবার, আমি যেন কোন অসহায় স্বামী- সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর গর্ভ হতে সন্তানকে আমার; নরপিশাচ সৈনিকের বুটের আঘাতে ছিটকে বেড়াতে দেখেছি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। দেখেছি, বুনো শাসকের লাথিতে লাথিতে বৃদ্ধ পিতার পাঁজরটা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে, দেখেছি মাতা ও বৃদ্ধ পিতামহের ধূসর চোখের করুণ আর্তি; বুলেটে ঝাঁঝরা হওয়া তাদের নিথর শরীর। যেন আমি- হাতে পায়ে শিকল পরানো কোন অসহায় প্রেমিক - প্রেয়সীর হৃদয়টাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে মাতাল শুয়োর, তখনও ছিল একদৃষ্টে চেয়ে থাকা অসহায় তার চোখ, মরণ বিষের শেষ ঝাঁকিতে তখনও নড়তে ছিল নাকের নোলক। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম- আদরের বোনের করুণ আর্তনাদ, কামান্ধ উল্লাসে গোগ্রাসে খাবলে খাচ্ছে ওর শরীর, ওর স্বপ্ন, সাধ, শুনতে পাচ্ছিলাম ওর কণ্ঠনালী কাটার সময়ের গোঁ গোঁ শব্দ। হ্যাঁ, স্পষ্টই শুনতে পেয়েছিলাম, তল্লাটে তল্লাটে গিয়ে যমদূতের প্রতি যমরাজার কর্কশ কণ্ঠের ভয়ঙ্কর নির্দেশনামা পাঠ। বার বার আঁতকে উঠেছি- যেন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম স্বার্থপর! কেননা, নিজেকে বাঁচাতে আমি দুর্গম অন্ধকার ছেড়ে- আরো..., আরো বেশি অন্ধকারে লুকাতে চেয়েছি। নাফ নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে চেয়ে দেখেছি- বেনামী মানুষকে লাশ বানিয়ে ওই নদী কিভাবে জড়িয়ে দেয় ঢেউরের কাফন!! সত্যি বলছি, আমি ঘুমাতে পারিনি! আমি ঘুমাতে পারি না! আমি ঘুমাতে আর চাইও না!!! দূর থেকে দেখি ধোঁয়ার কুণ্ডলী আজও উর্ধপানেই ছোটে- শুনেছিলাম..., ওই ওপরে নাকি - কোন ঈশ্বর-ফিশ্বর কে না কি থাকেন, জানি না, ওই ধোয়ায় তার চোখে জ্বালা ধরেছে কিনা? কিংবা, সে চিরতরেই অন্ধ হয়েছে কিনা, কে জানে!!! আজ শুধু তীব্র চিৎকার করে জেনে নিতে চাই- মানবতা, তুমি কী তবে আগুন পিয়াসী? তাহলে আমি ‘আগুন’ হবো। তুমি ধারালো অস্ত্র হলে, আমি ওই অস্ত্রের ‘ধার’ হবো। তুমি যদি শান্তির পায়রা হও, তবে আমি তার ‘ডানা’ হবো। হ্যাঁ, স্পষ্ট করেই জেনে নিতে চাই- ‘মানবতা’ আসলে তুমি কী? **রোহিঙ্গা ২০১৭ সৌম্য সালেক আমাকে হত্যা করে ছুড়ে ফেলা হয়েছে নাফ নদীতে অতিক্রান্ত রক্ত¯্রােতে ভেসে যাচ্ছে আমার স্বজন আমাকে খুন করে নিক্ষেপ করা হয়েছে বধ্যভূমিতে! ব্যাপ্ত চরাচরব্যাপী তুমি যে রোদনের স্বরে স্তব্ধ হয়ে গেছ; দস্যুপালের বধযজ্ঞে সেটা ছিল আমাদের সম্মিলিত আর্তনাদ! ওরা বলতে চায় এখানে আমাদের ভূমি নেই, আমরা আগন্তুক এবং অন্যায্যভাবে বসতি গড়েছি তাই উৎখাত ও গণহত্যা ছাড়া কিছুই প্রাপ্য নেই! ওরা কি ভুলে গেছে: রোসাঙ্গ রাজসভায় আমাদের সভাসদ ছিল এবং এই অদ্রি-অঞ্চল ভালবেসে পুরুষানুক্রমে আমরাও রক্ত দিয়েছি, সয়ে গেছি শত শত অপঘাতÑ আর কতকাল চেপে যাবে সে ইতিহাস! ওদের বলে দাও: যদি একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে ওরা প্রতিজ্ঞ হয় তবে যেন আগাম রক্তবর্ষণের শঙ্কায় নিজদের ভীত রাখে এবং কোনও হত্যাকা-ই খুনের ধারাবাহিকতাকে ব্যাহত করতে পারে না! বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের অনেকেই মরে যাচ্ছে কিন্তু আমরা সবাই একদিন ঠিকই বেঁচে উঠবো এবং সেদিন ওরা আত্মরক্ষায় সক্ষম হবে না! আমাকে হত্যা করে ছুড়ে ফেলা হয়েছে নাফ নদীতে অতিক্রান্ত রক্ত ¯স্রতে ভেসে যাচ্ছে আমার স্বজন! ওরা আমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় অথচ আমি বার বার ভেসে উঠি এবং নিজের অক্ষয় অস্তিত্বকে জাগিয়ে রাখতে চাই!
×