ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল লেখক ও সাংবাদিক হওয়ার

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল লেখক ও সাংবাদিক হওয়ার

কিভাবে শুরু করলেন? ছোট বেলা থেকেই লেখালেখির হাত ছিল আমার। আমাদের বাসায় অনেক বই ছিল। বই পড়ার চর্চা ছিল। আমার মনে হয়েছিল, সমাজের জন্য কিছু করতে হলে সাংবাদিকতা একটা ভাল পেশা। তখন থেকেই আমার একটা প্রবল ইচ্ছা ছিল, সাংবাদিক হওয়ার। পাশাপাশি ছোটদের জন্য গল্প কবিতা লিখতাম তাই লেখক হবো এমন একটা প্রত্যয়ও ছিল আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আমার বাবার সম্মতি না থাকায় সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করি। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও আমি লেখালেখি ছাড়িনি। কবিতা ও গল্প লিখতাম। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলাম তখন নাইমুল ইসলাম খান ‘খবরের কাগজ’ নামে একটি পত্রিকা বের করার জন্য একটা বিজ্ঞাপন দিলেন যে, তরুণ প্রজন্মের যাদের লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় আগ্রহ আছে তারা যোগাযোগ করুন। আমি সেখানে গেলাম। সম্পাদক আমাকে কিছু কাজ দিলেন। আমি তিন/চারটা প্রতিবেদন জমা দেই এবং সেগুলো ছাপাও হয়। ‘প্রিয়জন’ নামে একটা সাপ্তাহিক বের হতো তখনকার সময়। সে পত্রিকায়’ও কিছুদিন কাজ করি। ‘অনন্যা’তেও কাজ করেছি। বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর কয়েকটি এনজিওতে এবং বাংলা একাডেমি ও নজরুল ইনস্টিটিউটে কাজ করেছিলাম কিছুদিন পরে দৈনিক মানব জমিনে চাকরি নিলাম। প্রফেশান ও দাম্পত্য নামে দুটা পাতার বিভাগীয় সম্পাদক ছিলাম। মানব জমিনে ছয় মাস কাজ করার পর চাকরি নিলাম একুশে টেলিভিশনে। তার পর ১২ বছর কাজ করি এটিএন বাংলায় এখন কাজ করছি নিউজ২৪ এ। লেখালেখির সঙ্গে সাংবাদিকতা কিভাবে তৈরি হলো আসলে লেখালেখি করেছি আমার নিজের ইচ্ছায় ও আগ্রহে। আমার লেখা যখন ছাপা হতো আমার বাবা খুব খুশি হতেন। তিনি অন্যদের দেখাতেন আমার মেয়ের লেখা ছাপা হয়েছে বলে। পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করাটা আমার বাবা ভালভাবেই নিতেন এবং আমাকে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু তিনি কখনও ভাবতেন না যে আমি কোন পত্রিকা অফিসে কাজ করব। কারণ তখন সাংবাদিকতায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম। পরে অবশ্য যখন আমি সাংবাদিকতা করেছি, তখন তিনি বাধা দেননি বরং উৎসাহ দিয়েছেন। আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে যে, কাজের ক্ষেত্রে আমি পারিবারিক সহযোগিতা’ও পেয়েছি, যেটি হয়তো অনেক মেয়েই পান না। আজ থেকে ১৮ বছর আগে একুশে টেলিভিশন শুরুর সময়, সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো তবুও আমার স্বামী বা পরিবার আমাকে নিরুৎসাহিত করেনি বরং উৎসাহ ও সাহস দিয়েছেন। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থার কথা বলুন? সামগ্রিক অবস্থাটা ভাল। গণমাধ্যমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুব জনপ্রিয়। মুহূর্তেই এখন সব খবর পাওয়া যায়। সে অর্থে আমি বলব তথ্য প্রবাহ আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। কিছু সমস্যাও আছে। টেলিভিশনের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সে হারে মানসম্মত অনুষ্ঠান হয়তো হচ্ছে না। দর্শক যে রকম বিনোদন চায়, সে রকম অনুষ্ঠান আমরা করতে পারছি কি-না তা নিয়ে ভাবতে হবে। তবে সকলেই চেষ্টা করছে ভাল আকর্ষণীয় কিছু করার। এমন স্মৃতি যা মনে পড়লে ভাল লাগে দেখো সাংবাদিকতা সারাক্ষণই রোমাঞ্চিত করার মতো পেশা। প্রতিদিন কত রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে, কত কিছু জানতে পারি, দেখতে পাই। আলাদা করে তাই কোন স্মৃতি মনে করা কঠিন। তবে খবর সংগ্রহের প্রয়োজনে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় গেছি, অনেক মহান মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, সেগুলো ভাবতে ভাল লাগে। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে আপনি ইউনিসেফের শিশু অধিকার কবিতা উৎসবে আপনার অবদান এ বিষয়ে কিছু বলুন আমাদের সমাজে শিশুদের তেমন করে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। শিশুদের সব সময় আমরা শাসনের ওপর রাখি। নিষেধাজ্ঞা দেই, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। ইউনিসেফে যখন শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করে তখন তাদের স্লোগান ছিল, শিশুর জন্য হ্যাঁ বলুন, সব শিশুদের হ্যাঁ বলুন। আমাদের কয়েকজন কবিকে তখন ইউনিসেফে ডাকা হলো যেন শিশুদের নিয়ে কিছু কবিতা লিখি। আমি সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আসলে শিশুদের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে যা আমরা পালন করছি না। শিশুদের ওপর সংবাদ উপস্থাপন করায় মীনা মিডিয়া এওয়ার্ডস অর্জন... হ্যাঁ, সেটা ছিল পথ শিশুদের নেশাগ্রস্ত হওয়া নিয়ে একটি রিপোর্ট। তবে, তখন অতটা জানতাম না, এখন জানি শিশুদের নিয়ে সংবাদ করার ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা আছে। আমরা যখন সংবাদ তৈরি করি তখন আমরা অনেকেই শিশুদের সংবেদনশীল ভাবে দেখি না। তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীলতার বিষয়গুলো বিবেচনা করি না। একটি শিশু, তারও যে গোপনীয়তা আছে, তারও যে ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে সেটা আমরা ভাবি না। সে জন্য আমি আমার সাংবাদিক ভাই বোনদের প্রায়ই বলি, আপনি যে শিশুকে নিয়ে সংবাদ করছেন, সে আপনার সন্তান হতে পারত আপনার ভাই বা বোন হতে পারত। তখন আপনি কিভাবে সংবাদ লিখতেন? সেটি ভেবে সংবাদটি তৈরি করুন। যেমন, একটি শিশু ধর্ষণের শিকার হলো তখন শিশুটির পরিচয় গোপন রাখা এবং তার চেহারা প্রকাশ না করা। একটি শিশুর বাবা মা খুন হলো তখন শিশুটির সাক্ষাতকার না নেওয়া তার বীভৎস অতীত মনে না করিয়ে দেওয়া এবং যতটা সম্ভব তাকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ‘রুদ্ধশ্বাস বৈঠকের পর’ আপনার প্রথম কবিতার বই এই বইটি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়। আমি তো তখন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রী, নতুন লেখক। নতুন লেখকদের বই প্রকাশকরা সহজে প্রকাশ করতে চান না। আমার বেলায়ও তেমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি ও সরকার আমিন যৌথভাবে নিজেদের টাকায় প্রথম এই বইটা প্রকাশ করি। বইয়ের সংখ্যাও ছিল কম। বইমেলায় নিজেদের বই নিজেরাই বিক্রি করেছি। কর্মসংস্থানে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে কিভাবে দেখছেন? নারীদের বিভিন্ন সেক্টরে এখন কাজ করার সুযোগ বেড়েছে। মেয়েরা নিজেরা যেমন, তেমনি তাদের পরিবারের মানুষজনও এখন উৎসাহ দিচ্ছেন মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে। আত্মনির্ভরশীল হতে। আমি নারীদের এই অগ্রযাত্রাকে স্বাগত জানাই। গণমাধ্যমে মাত্র ৬ শতাংশ নারী কাজ এ নিয়ে কি ভাবছেন প্রথম কথা হচ্ছে, আমাদের সমাজ তো এখনও পুরোপুরি বদলে যায়নি। এটা স্বীকার করতেই হবে, অনেক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বাধা রয়ে গেছে। একটি মেয়ে রাতে একা নিরাপদে বাসায় ফিরবে এর নিশ্চয়তা আমাদের সমাজ দিতে পারছে না। একটা মেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রিপোর্টিং করতে যাবে, সে সেখানে নিরাপদে থাকবে এ নিশ্চয়তা রাষ্ট্র কি দিতে পারছে? আর সাংবাদিকতা পেশা অন্য আট দশটা পেশার মতো না। এখানে বাধা ধরা কোন নিয়ম নেই কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। তারপর অনেক রকম জায়গা আছে যেখানে কেউ যেতে চায় না। দুর্ঘটনা হোক দুর্যোগ হোক, সেখানে সবার আগে সাংবাদিকরাই ছুটে যায়। ঝুঁকি নেয়। এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়ত অনেকে রাজি থাকেন না। আমি যদি অন্য জায়গায় নিরাপদ চাকরি করতে পারি তবে ঝুঁকি নিয়ে কেনই বা সাংবাদিকতা করব এই চিন্তাও অনেক মেয়েরা করেন। কতখানি পেয়েছেন কি পাইনি তার হিসাব মেলাতে মন মোর নহে রাজি। বরং যা পেয়েছি সেইটুকুতেই খুশি আমার মন।
×