ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ।। আরও একটি উৎসবের হাতছানি। ঈদের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চোখে মুখে সে কী আনন্দ! দেখে বোঝা যায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। অন্য ধর্ম কর্ম করেন যারা তারা কি বসে আছেন? নির্বিকার খুব? মোটেই না। প্রস্তুতি নিচ্ছেন উৎসবের। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এই তো হয় আসলে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। জোরেশোরেই চলছে প্রস্তুতি। মঙ্গলবার ছিল মহালয়া। এদিন ভোরে মন্দিরে মন্দিরে চ-ীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী। এদিন থেকে ঢাক বাজবে। সুর তুলবে শঙ্খ। উৎসবমুখর হয়ে উঠবে রাজধানী। সারাদেশের মতো ঢাকায়ও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব সামনে রেখে সাজছে পূজা ম-পগুলো। এবারও বেড়েছে ম-পের সংখ্যা। গত বছর ২২৬ ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবার সংখ্যাটি বেড়ে হচ্ছে ২৩১। ফলে আনন্দটা আরও ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন ম-পে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে দেখার সুযোগ নেই। বিভিন্ন গলির মোড়ে নির্মিত তোরণ উৎসবের আগমনী ঘোষণা করছে। বৃহস্পতিবার বিজয় সরণি হয়ে ফার্মগেট আসার সময় দেখা গেল, মণিপুরী পাড়ার ৫ নম্বর গেটে একটি তোরণ। সদ্য মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সাজসজ্জার কাজ এখনও শুরু হয়নি। পাশেই খামারবাড়ি। এখানে দৃশ্যমান তোরণটি আরও বড়। সুদৃশ্য করার কাজ চলছিল। তোরণের নিচ দিয়ে এগিয়ে গেলে অস্থায়ী ম-প। সেখানে পূজা কমিটির তেমন কাউকে পাওয়া গেল না। তবে কাজ চলছিল পুরোদমে। কর্মীদের একজন বললেন, এখানে বহুকাল ধরেই পূজার আয়োজন হচ্ছে। ফার্মগেট মোহাম্মদপুর মণিপুরীপাড়া ও আশপাশের এলাকার পূজার্থীরা আয়োজনটিকে নিজেদের বলেই মনে করেন। আর দুই এক দিনের মধ্যেই ম-প নির্মাণের সব কাজ শেষ হবে। শুরু হবে আলোক সজ্জার কাজ। এর পর প্রতিমা উঠানো হবে। শাঁখারীবাজারে প্রবেশের পথে বিশালকার তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ভেতরে বাশের কাঠামো। বাহিরটা রঙিন কাপড়ে মোড়ানো। আশপাশের এলাকায় আরও কয়েকটি তোরণ খুঁজে পাওয়া গেল। এভাবে একটু একটু করে প্রকাশিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এবার একটি প্রদর্শনীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যাক। বনসাই প্রদর্শনী। জীবন্ত শিল্পকর্ম গড়তে বিশেষ প্রেম ও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। এখন অনেকেই চর্চাটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বনসাই গড়ছেন। বেশ কয়েকটি সংগঠনও আছে তাদের। এসব সংগঠনের ব্যানারে নিয়মিতই আয়োজন করা হচ্ছে প্রদর্শনীর। ঠিক এই মুহূর্তে ধানম-ি ২৭ নম্বর সড়কে চলছে একটি। সিমা ব্লোজম স্টোরে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে রেডিয়েন্ট বসনাই সোসাইটি। চার দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করা হয় বুধবার। এর পর থেকে চলছে। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত হতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরা। কৌতূহল নিয়ে দেখছেন। এখানে প্রায় চার শ’র মতো গাছ। সব কাজ ভাল হয়েছে বলা যাবে না। তবে কিছু কাজ বার বার দেখার মতো। খোলা আকাশের নিচে স্বাধীনভাবে বেড় উঠা গাছের গঠন আকৃতি অনুসরণ করে বনসাই গড়া হয়েছে। বেশ লাগে দেখতে। দীর্ঘকাল ধরে লালন করা বনসাই বিক্রি করা শিল্পীর জন্য বেদনার হলেও, ক্রেতারা খুশি। কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। দাম শুরু ১০০০ টাকা থেকে। আছে ৩ লাখ টাকার বনসাইও। প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে আগ্রহীরা ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। গাছের কাছে যাওয়ার, সবুজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার অন্যরকম অনুভূতি। উপেক্ষা করা একদম ঠিক হবে না।
×