ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষজ্ঞদের ধারণা

কাতার থেকে ॥ সরতে পারে মার্কিন ঘাঁটি

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কাতার থেকে ॥ সরতে পারে মার্কিন ঘাঁটি

দোহা যদি তার বর্তমান অবস্থান না পরিবর্তন করে তবে যুক্তরাষ্ট্র কাতারের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটি থেকে মার্কিন বাহিনীকে সরিয়ে নেবে বলে লন্ডন সম্মেলনে আমেরিকান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বিমান ঘাঁটিটিতে দশ হাজারেরও বেশি মার্কিন বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। আরব নিউজ ও ওয়েবসাইট। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থনের অভিযোগে কাতারের সঙ্গে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। ইউএস ইউরোপীয়ান কমান্ড বাহিনীর সাবেক ডেপুটি কমান্ডার জেনারেল চাক ওয়াল্ড বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগের অর্থ হলো বড় ধরনের ঝড়ের পূর্বাভাস। বর্তমানে কাতার যে পথে হাঁটছে সেটি পরিবর্তন না করে অব্যাহত রাখলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে পারে ও কাতারকে বলতে পারে আমরা চলে যাচ্ছি। জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ডোভ জাকিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র খুব সহজেই মার্কিন বাহিনীকে আল উদাইদ বিমান ঘাঁটি থেকে সৌদি আরব, আরব আমিরাত বা জর্দানে সরিয়ে নিতে পারে। সামরিক বাহিনী তা করতে সক্ষম আল উদাইদ ঘাঁটি থেকে বাহিনী সরাতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। বর্তমানে কাতার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উভয় সঙ্কটে পড়েছে। কাতার বিভিন্ন সময়ে তার আচরণ দিয়ে এই সঙ্কটটি তৈরি করেছে। তাদের ধারণা তারা সবার সঙ্গে ও যে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যাতে আপনি ইরানকে সঙ্গে নিয়ে করতে চাচ্ছেন। যা আত্মহত্যার শামিল। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে ইরান। এমন অভিযোগ রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। এজন্যই যুক্তরাষ্ট্র বিমান ঘাঁটি ছেড়ে যাবে। বিমান ঘাঁটিটি সম্পর্কে এমন কোন স্থায়ী নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি যে সেখানে মার্কিন বাহিনী স্থায়ীভাবে থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ মার্কিন বিমান ঘাঁটি আল উদাইদ’য় ২০১৫ সালে ১০ হাজার মার্কিন সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। মার্কিন-কাতার সামরিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাতার মার্কিন সৈন্যদের দেশটির প্রধান দুটি সেনা ঘাঁটি- আল উদাইদ বিমান ঘাঁটি ও সম্ভবত ইরাকের বাইরে সেন্টকমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত ক্যাম্প আস-সালিয়ায় প্রবেশের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছে। কাতার এজন্য কোন ভাড়া নেয় না। কাতারে আল উদাইদ বিমান ঘাঁটি কাতারি বিমান বাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২০১০ সালের দিকে যখন সম্ভবত ১০০ জন কাতারির বিমান ঘাঁটিটি ব্যবহার করত, তখন ১০ হাজার মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘাঁটিটি ব্যবহার করতে দেয় হলেও বিমান ঘাঁটিটি কিন্তু মার্কিন বিমান ঘাঁটি নয়। আফগানিস্তানে ২০০১’র যুদ্ধের সময় চার হাজার সৈন্য আনা হলেও ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে দুই হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করে। আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিটি কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল। এর রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১৫ হাজার মাইল, যেটি গলফের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে। ১৯৯৯ সালে কাতারের আমির শেখ হামাদ মার্কিন কর্মকর্তাদের জানান, তিনি আল উদাইদ’য় স্থায়ীভাবে ১০ হাজার মার্কিন সৈন্য দেখতে চান। ২০০০ সালের এপ্রিলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম এস. কোহেন আল উদাইদকে ভবিষ্যতে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেন। এরপর কাতার ও পেন্টাগন বিমান ঘাঁটিটিতে মার্কিন বিমান প্রবেশ করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনায় পৌঁছায়। ২০০২ সালের মার্চে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেনি দোহার উপকণ্ঠে মরুভূমিতে মার্কিন বিমান অধ্যুষিত ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেন এবং বিমানের জন্য দীর্ঘ রানওয়ে গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন। ২০০২ সালের শুরুতে ঘাঁটিটিতে মার্কিন যুদ্ধ বিমান ও কর্মকর্তাদের সংখ্যা জোরালোভাবে বৃদ্ধি করা হয়।
×