ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ

দর্শক প্রিয়তায় অপূর্ব-মেহজাবিন

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দর্শক প্রিয়তায় অপূর্ব-মেহজাবিন

গেল ঈদ-উল-ফিতর থেকেই ফের জমজমাট হয়ে উঠেছে ছোট পর্দার আয়োজন। বড়পর্দার চেয়ে ঈদের সময়টায় এখন মানুষ বেশি ঝুঁকছে ছোটপর্দার দিকে। ভাল গল্প, নির্মাণ দিয়ে মোটামুটি তুষ্ট করার মতো বেশ কিছু নাটক, টেলিছবি ঈদকে উপলক্ষ করে তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই প্রচার পেয়েছে নাটক-টেলিছবি। কিন্তু এর মধ্যে গুটিকয়েক থাকে আলোচনায়, প্রশংসার জোয়ারে ভাসে একটি বা দুটি। এবার ঈদে প্রশংসিত কাজ কোনটি সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রশংসা বাণীতে ভাসছে ‘বড় ছেলে’ নামের টেলিছবিটি। টেলিছবিটি প্রচার হওয়ার পর দর্শকদের অনুরোধে বিরতিহীনভাবে চ্যানেল নাকটটি নাইন আরও তিন দিন প্রচার করে। বড় ছেলে টেলিছবিটি এখন আলোচনার শীর্ষে। মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প নিয়ে সাজানো এই গল্পের প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অপূর্ব ও মেহজাবিন চৌধুরী। এতে মধ্যবিত্ত অপূর্ব ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে মেহজাবিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দর্শকরা। পুরো সোশ্যাল মিডিয়া ও দর্শকমহলে টেলিছবিটির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এখন সবারই জানা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ‘বড় ছেলে’ যে অসামান্য অর্জন করে নিয়েছেন তা হলো অন্তর্জ্বাল তথা ইউটিউবে এর দুর্দান্ত সাফল্য। সিডি চয়েসের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশ করা এই টেলিছবিটি রিপোর্ট লেখা পযন্ত দেখেছেন অর্ধকোটিরও বেশি দর্শক। শুধু তাই নয়, টেলিফিল্মটির মন্তব্যের ঘরে জমা পড়েছে প্রায় ৩১ হাজারেরও বেশি ইতিবাচক মন্তব্য এমনকি সর্বাধিক দেড় লাখেরও বেশি লাইক নিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়েছে ‘বড় ছেলে’। নাটকটি ইউটিউবে দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। আর ইউটিউবে গত দশ দিনে নাটকটি করে ফেলেছে কিছু বিস্ময়াভূত কীর্তি। শুধু বাংলা নাটক নয়, এর আগে বাংলাদেশের কোন ধরনের ভিডিওই এত অল্প সময়ে অর্ধকোটি দর্শক অর্জন করতে পারেনি। ফলে এটি বাংলাদেশের ইউটিউবের ইতিহাসে বিরল রেকর্ডও বটে। যা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। শোবিজ দুনিয়ার তারকারাও প্রশংসা করছেন বড় ছেলে টেলিছবিটি নিয়ে। ফেসবুকে শেয়ার করছেন তাদের অনুভূতি। মিজানুর রহমান আরিয়ান। দীর্ঘদিন ধরেই নাটক বানান। টেলিফিল্ম বানান। মূলত রোমান্টিক পরিচালক হিসেবেই চেনে সবাই। সেই আরিয়ান একটা টেলিফিল্ম বানালেন। ঈদের চার দিন পর প্রচার হলো। প্রচার হতেই চারদিকে সুনামের সুনামি। ফেসবুক, ইউটিউব, অফিস, বন্ধুদের আড্ডা, চায়ের দোকান সব জায়গায় দখল করে নিল ‘বড় ছেলে’। রীতিমতো ঝড় শুরু করে দিল বড় ছেলে। তাই টেলিছবির নায়িকা মেহজাবিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলো সবাইকে কাঁদিয়ে কেমন আছেন? তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাল আছি। বড় ছেলে নিয়ে যে এত আলোচনা হবে ভাবতে পারিনি। বড় ছেলের বউ হতে না পেরে আফসোস হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আনন্দ কণ্ঠকে মেহজাবিন বলেন, না সত্যি কথা বলতে বড় ছেলের বউ হতে চাইলে যেটা চেয়েছিলাম সেটা হতো না। তাহলে এত দর্শক সাড়া পেতাম না। কাজের সময় কি বুঝতে পেরেছিলেন যে ‘বড় ছেলে’ নিয়ে এত আলোচনা হবে? না। কাজের সময় মনে হয়েছে, কিছু একটা হবে। কিন্তু এত আলোচনা হবে, সেটা বুঝিনি। পরিচিতদের অনেকেই ফোনে ও ইনবক্সে বলেছেন, টেলিছবিটি দেখে তাঁরা কেঁদেছেন। শূটিংয়ে আমি নিজেই কেঁদেছিলাম। ভীষণ সাড়া পাচ্ছি। টেলিছবিতে মেহজাবিনের কান্নার দৃশ্যগুলো দর্শককে আন্দোলিত করেছে। তাই মেহজাবিনের কাছে আনন্দকণ্ঠের প্রশ্ন রাখা হলো এ টেলিছবিটি করতে গিয়ে নাকি আপনি আর অপূর্ব সত্যি সত্যি কেঁদেছিলেন? জি! শেষ দৃশ্যটি এত আবেগঘন ছিল ‘গল্পের সঙ্গে এতটাই সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলাম যে, সংলাপ বলতে বলতে গ্লিসারিন ছাড়া সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেলেছিলাম। গ্লিসারিন ছাড়াই কান্নার অভিনয় করেছিলাম।’ বড় ছেলের মতো রেসপন্স আগে কখানও পেয়েছেন? না এত বেশি রেসপন্স আগে কখনও পাইনি। অনন্য নাটকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? হ্যাঁ ভাল সাড়া পাচ্ছি সবাই দেখছে। তবে অন্যগুলোর চেয়ে বড় ছেলের রেসপন্স অনেক বেশি। ঈদের পরের শূটিং শুরু হয়েছে? হ্যাঁ গত শনিবার লাক্সের বিজ্ঞাপনের শূটিং দিয়ে কাজ শুরু করছি। প্রথমবারের মতো একই বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে তিন লাক্স তারকা জাকিয়া বারী মম, বিদ্যা সিনহা মিম ও মেহজাবিন চৌধুরীকে। লাক্সের বিজ্ঞাপনে আলাদা আলাদাভাবে কাজ করলেও একসঙ্গে কোন বিজ্ঞাপনে দেখা যায়নি তাদের। নতুন বিজ্ঞাপনটি পরিচালনা করছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। নতুন এই বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে মেহজাবিন আনন্দ কণ্ঠকে বলেন, ‘লাক্সের বিজ্ঞাপনে আগে কাজ করলেও এবারই প্রথম আমরা তিনজন একসঙ্গে কাজ করছি। অমিতাভ রেজা একজন গুণী নির্মাতা। আশা করছি বিজ্ঞাপনটি সবার ভাল লাগবে।’ তেজগাঁওয়ের কোক স্টুডিওতে বিজ্ঞাপনটির শূটিং হয়েছে। হাতে নতুন কি কাজ আছে? উত্তরে মেহজাবিন জানান, হাতে এখন অনেক চিত্রনাট্য। একটা একটা করে পড়তেছি। তারপর সিদ্ধান্ত নেব কোনটি করব। অনেকদিন ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা শুনছি। কোন অগ্রগতি আছে? চলচ্চিত্রের ব্যাপারে এখনও কিছু জানি না। চলচ্চিত্রে অভিনয় করব কিনা তাও জানি না। বড় ছেলে নাটক প্রসঙ্গে অপূর্ব তার ফেসবুক ওয়ালে উল্লেখ্য করেন বলেন, আমি কি বলব? আমি নিজেই অসম্ভব আবেগ আপ্লুত আপনাদের সবার এত এত সাড়া পেয়ে। আপনারা নাটক দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি আর আমার চোখে পানি চলে এসেছে আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত ম্যাসেজগুলো পড়ে। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই ‘বড় ছেলে’র টিমের সবাইকে। বিশেষ করে আরিয়ানকে। আরিয়ানের রুচিবোধ, লেখা আর সুন্দর কল্পনাশক্তি আমাকে মুগ্ধ করে সবসময়ই। মেহেজাবিনের চমৎকার অভিনয়ের সাক্ষীতো আপনারা সবাই। কথা আছে, ‘ধপঃরহম রং ৎবধপঃরহম.’ ওর প্রাণবন্ত অভিনয়ের কারণেই কাজটি ভাল হয়েছে। মিফতা জামানকে অনেক ভালবাসা ‘তাই তোমার খেয়াল’ গানটির জন্য। ‘বড় ছেলে’র বাবা, মা, ভাই, বোন, ছোট্ট জেসি আর ক্যামেরার পেছনের পুরো পরিবারটা ছাড়া নাটকটি এত সুন্দর হতো না। আমি চেষ্টা করব আরও ভাল কাজ উপহার দেয়ার। যাদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারিনি, আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। যারা ‘বড় ছেলে’ দেখে উৎসাহিত হয়েছেন তাদের দেখে আমি সবচেয়ে বেশি অভিভূত। প্রতিটি মধ্যবিত্ত সন্তানের জন্য বড় সত্য, বড় বাস্তব এই শব্দগুলো- ‘রাশেদরা চোখের পানি মুছে ফেলে। তারা জানে ঘরের বড় ছেলেকে এভাবে কাঁদতে হয় না, কাঁদতে হয় লুকিয়ে আড়ালে যেন কেউ না দেখে। চোখের পানি মুছে তাদের ঘরে ফিরতে হয় কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, তাদের শক্তি হওয়ার জন্য।’ রাশেদরা ভাল থাকুক যে রাশেদরা পরিবারের বাবা-মা-ভাই-বোনের নির্ভরতা আর ভরসা হয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছে চুপচাপ নিজেকে বিসর্জন দিয়ে, প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত!
×