ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিঘিœত হতে পারে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম

মংলা বন্দরে শ্রমিক বেতন বৈষম্য

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মংলা বন্দরে শ্রমিক বেতন বৈষম্য

আহসান হাবিব হাসান, মংলা ॥ মংলা বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে শ্রম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বন্দরে আগত বাণিজ্যিক জাহাজের বার্দিং (অবস্থান) নির্ধারণের কারণে বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরে আমদানি ও রফতানি কাজের প্রচলিত নীতিমালা লঙ্ঘন হওয়ায় সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষে বিঘিœত হতে পারে বন্দরের আমদানি-রফতানি কাজ। মংলা বন্দরে আগত সকল বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দর বিধি অনুযায়ী বন্দর জেটি, মুরিং বয়া, বেস ক্রিক, ও হারবাড়িয়ায় বার্দিং দেয়া হয়। এই সকল স্থানে মালামাল খালাসবোঝাই কাজে শ্রমিকদের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক শ্রম মজুরি ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা বন্দর হতে ৩৫ কিমি দূরে হারবাড়িয়ায় কাজ করে দিনের পালার ১২ ঘণ্টায় ওভারটাইমসহ মজুরি পায় ৪৭৬ টাকা ও রাতের পালায় ১২ ঘণ্টায় ওভারটাইমসহ মজুরি ৬৫৫ টাকা পায়। হারবাড়িয়া যেতে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ৩-৪ ঘণ্টা ব্যয় হয়, যার মজুরি মালিকরা দেয় না এবং নি¤œমানের কাঠের তৈরি ট্রলারযোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকদের গভীর সমুদ্রে পাঠানো হয়। বন্দর ব্যবস্থাপনা ও বন্দর ব্যবহারকারী মালিক পক্ষের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা অশুভ চক্র বন্দরের শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টি ও সরকারকে বিব্রত করার জন্য শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য তৈরি করেছে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে হারবাড়িয়া বার্দিংকে বেসক্রিক বার্দিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে শ্রমিকদের অনৈতিকভাবে বেসক্রিকের শ্রম মজুরি দেয়া হচ্ছে। জেটি ও মুরিং বয়ায় শ্রমিকদের এ শিফটে (সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা) ৮ ঘণ্টায় শ্রমিক মজুরি পায় ২৯২ টাকা, যা দেশের প্রচলিত শ্রম মজুরি বিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে মংলা বন্দরের প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা প্রয়াত শাহজাহান শিকারীর ছেলে ও জাতীয় শ্রমিক লীগ মংলা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব এ এইচ মিলন শিকারী বলেন, বর্তমানে মংলা বন্দরে শ্রমিক স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করবে এমন কোন সিবিএ সংগঠন নাই। ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্তির পর মংলা বন্দরে শ্রমিকদের যেনতেনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ১ জন দিনমজুর লোকালয়ে ৮ ঘণ্টা কাজ করে ৬০০ টাকা পায়। সেখানে বন্দরে কর্মরত ১ জন শ্রমিক ৮ কর্মঘণ্টায় পায় ২৯২ টাকা। কিন্তু ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্তির আগে প্রায় ১৬ বছর পূর্বে ১ জন শ্রমিক একই কর্মঘণ্টায় মজুরি পেতেন প্রায় ৪৭৭ টাকা ওভারটাইম ছাড়া। তিনি শ্রম মজুরি বৃদ্ধির জন্য বন্দর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারী মালিকপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মাংল বন্দর স্টিভিডরস এ্যাসোসিয়েশনের (একাংশ) সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, সৃষ্ট বেতন বৈষ্যম্যের জন্য হারবাড়িয়া ও বেসক্রিক পয়েন্ট নির্ধারণের জন্য তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন এবং খুব দ্রুত বার্দিং নির্ধারণ করতে তারা ব্যবস্থা নেবেন। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক ম্যানেজার মোস্তফা কামালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দরের হারবার বিভাগ বার্দিং নির্ধারণ করেন এবং সেই অনুযায়ী বর্তমানে শ্রম মজুরি দেয়া হচ্ছে। সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ের সমাধান হবে। এ ব্যাপারে স্টিভিডরসদের পুল নিয়ন্ত্রককারী ম্যানেজার এ এস আফতাব হোসেন বাচ্চু বলেন, বন্দরের ঘোষিত বার্দিং বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করেন। বার্দিং অনুযায়ী বর্তমানে মালিকপক্ষ শ্রম মজুরি প্রদান করছে। শ্রম মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ল্যান্ডিং চার্জ নেয়াসহ বর্তমানে আমদানি-রফতানি কাজের দর কম হওয়ায় শ্রম মজুরি বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না।
×